parbattanews

আলীকদমের কুরুকপাতার মাটিতে সোনা ফলে!

আলীকদম প্রতিনিধি, কুরুকপাতা থেকে ফিরে

পাহাড়ি জেলা বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার নবগঠিত কুরুকপাতা ইউনিয়নে কৃষিক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। মাতামুহুরী নদীর দুইতীরে ক্ষতিকর তামাকের পরিবর্তে রবিশস্য এবং পাহাড়ের ঢালুতে কাঁচামরিচ, আদা, হলুদ, তুলা, কচু, শিম, ঢেঁড়শ, বেগুন, ভুট্টা ও কুমড়ার চাষ হচ্ছে। সেখানে বছরে বিক্রি হয় প্রায় ২ কোটি টাকার কৃষিপণ্য। এ উপজেলার বাবুপাড়া পয়েন্ট থেকে মাতামুহুরী নদীর দুই তীরজুড়েই মূলত রিজার্ভ ফরেস্ট। তাই এলাকাটি প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্যে ভরা।

অন্তর্বিহীন মৌননিস্তব্ধ সৌন্দর্যের আধার পুরো এলাকাটি। আলীকদম উপজেলা সদর থেকে মাতামুহুরী নদীপথে উজানে গেলেই দেখা যায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এ নদীর দু’তীরে বর্তমানে শত শত একর রিজার্ভ ফরেস্টের জমিতে রবিশস্যের চাষ হচ্ছে। বিশেষ করে চলতি মৌসুমে নদীর দুই তীরজুড়ে বাদাম চাষের আধিক্য দেখা গেছে।

মাতামুহুরী নদীর পানি শীতল। দুইতীরেই পাহাড়ের সুউচ্চ সারি। পাহাড়জুড়ে ক্রেকবেত ও নলিবাঁশের সারি। দেখা মেলে কিছুটা নানাপ্রজাতির গাছেরও। এ বনের ভেতরে রয়েছে মুরুং, ত্রিপুরা, মার্মা, তঞ্চঙ্গ্যাসহ বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীর বসবাস।

উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে মাতামুহুরী নদীর তীরে অবস্থিত নবগঠিত কুরুকপাতা ইউনিয়ন সদর। একসময় হস্তচালিত নৌকায় সারাদিন এবং যন্ত্রচালিত নৌকায় ৩ ঘণ্টা লাগত সেখানে যেতে। সম্প্রতি আলীকদম-কুরুকপাতা-পোয়ামুহুরী সড়ক নির্মাণে একনেকে ৩৭৬ কোটি টাকার বরাদ্দ অনুমোদন দেয়। এরপর সেনাবাহিনীর ১৬ ইসিবি জোরেশরেই চালাচ্ছে নির্মাণ কাজ।

সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, ৫/৬ বছর আগেও বৃহত্তর মাতামুহুরী রিজার্ভের প্রায় ৫শ’ একর নদীর তীরবর্তী ঢালু জমিতে তামাক চাষ হতো। বন বিভাগের বাধায় সেখানে তামাক চাষ বন্ধ হয়। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নদীর ধারে শত শত একর জমিতে বাদাম, মরিচ, বেগুন, কপিসহ রবিশস্যের চাষ হচ্ছে।

কুরুকপাতা ইউপি চেয়ারম্যান ক্রাতপুং ম্রো জানান, কেবল কুরুকপাতা বাজারেই বছরে বিক্রি হয় প্রায় ৫০০ মণ কাঁচামরিচ, ১৫ হাজার মণ আদা ও হলুদ। ব্যবসায়ীরা প্রতিদিনই পাইকারি দামে কিনে নিচ্ছেন মরিচ ও আদা-হলুদ। তবে অগ্রীম টাকা দিতে হয় চাষীদের কাছে। এখন পাহাড়ি-বাঙ্গালী সমানে তামাকের পরিবর্তে অর্থকরী ফসল চাষে ঝুঁকেছেন।

কুরুকপাতা এলাকার কৃষক কাইনপ্রে মুরুং, মেনদং মুরুং এবং বাঙ্গালী কৃষক দুদু মিয়া জানান, তাদের পাহাড়ি জমিতে উৎপাদিত হয় ধান, কাঁচামরিচ, আদা, হলুদ, তুলা, কচু, শিম, ঢেঁড়শ, বেগুন, ভুট্টা ও কুমড়া ইত্যাদি । নদী বিধৌত চরাঞ্চলের মাটির উর্বরতা শক্তি ভালো। তাই তেমন সার প্রয়োগ করতে হয়না।

কৃষকরা বলেন, তারা কৃষিপণ্য উৎপাদন করে পাইকারি ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে থাকেন মৌসুমভিত্তিক। পাইকারি ব্যবসায়ী আলী আহমদ, নজরুল ইসলাম, ও মোহাম্মদ শফি জানান, প্রতিমৌসুমে তাদের মত অনেকেই প্রায় ৫০০ মণ মরিচ ক্রয় করেন কুরুকপাতা ইউনিয়ন এলাকা থেকে। প্রতিমণ ৩ হাজার টাকায় কাঁচামরিচ ক্রয় করা হয়। আদা প্রতিমণ ১২শ’ এবং হলুদ ২ হাজার টাকা হারে পাইকারি ক্রয় করা হয়। প্রতিমৌসুমে আদা-হলুদ বিক্রি হয় প্রায় ১৫ হাজার মণ। এসব কৃষিপণ্য আলীকদম সদর হয়ে চকরিয়া, কক্সবাজার, চট্টগ্রামসহ সারাদেশেই সরবরাহ করা হয়।

কৃষিপণ্য ছাড়াও বিশাল-বিস্তৃত বনে প্রাকৃতিকভাবে সৃজিত ক্রেকবেত ও নলি বাঁশ বিক্রি করেন স্থানীয়রা। এসব পণ্য থেকে বন বিভাগ বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করেন।

শনিবার (২৫ নভেম্বর) পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর (উশৈসিং) এমপি কুরুকপাতা ইউনিয়নবাসীর এক নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, বান্দরবান জেলার মধ্যে উন্নয়নের ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে অগ্রাধিকার পাবে নবগঠিত কুরুকপাতা ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের উন্নয়নে ইতোমধ্যে ৩৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে রাস্তা নির্মাণ চলছে। এ সড়ক নির্মাণের ফলে এলাকাবাসী তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাতসহ নানাসুবিধা ভোগ করবেন। সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ হলে কুরুকপাতা ইউনিয়ন হবে একটি কৃষিবান্ধব ইউনিয়ন।

Exit mobile version