আলীকদমে জমি সংকটে মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ আটকে আছে

fec-image

বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় মডেল মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণে দেড় বছরেও জমি সংকট নিরসন হয়নি। এতে প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করা সম্ভব নয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। পর্যাপ্ত জমি অধিগ্রহণ ছাড়াই তড়িঘড়ি করে আলীকদমে মডেল মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণে দরপত্র আহ্বান করে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন অধিদপ্তর গণপূর্ত। ঠিকাদারও নিয়োগ করা হয় মডেল মসজিদ নির্মাণে । কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আক্ষেপ উপজেলা প্রশাসন এখন পর্যন্ত মসজিদ নির্মাণে জমি বুঝিয়ে দিতে পারেননি তাদের।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দরপত্র আহ্বান ও ঠিকাদার নিয়োগে ২০১৯ সালের আগস্টে টেন্ডার আহ্বান ও ঠিকাদার নিয়োগ করে জমি সংকটে বেকায়দায় পড়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন গণপূর্ত অধিদপ্তরে এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এখন নির্মাণ কাজ নিয়ে শুরু হয়েছে নানান তাল-বাহানা। ফলে হতাশ হয়ে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারও। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মতে জমি নির্ধারণের আগেই গণপূর্ত অধিদপ্তর তড়িঘড়ি করে কাজের দরপত্র আহ্বান করায় এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। অপরদিকে, জমি বুঝিয়ে দিতেও সময়ক্ষেপন করছেন উপজেলা প্রশাসন।

আলীকদমে মডেল মসিজদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের কাজ পান ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এনএসজেবি। নির্মাণ কাজ শুরু করার জন্য সে সময় তাদেরকে কার্যাদেশও দেয়া হয়। কার্যাদেশ মতে ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু একবছর পেরিয়ে গেছে জমি সংকটে নির্মাণ কাজই শুরু হয়নি।

গত ২৭ আগস্ট তারিখ ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন (১ম সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্পের কাজের অগ্রগতির একটি প্রতিবেদনেও দেখা যায়, শুধু আলীকদম উপজেলায় নয় মডেল মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতি কেন্দ্র স্থাপনে আরও ৭৯টি এলাকায় জমি মেলেনি। অনেক এলাকায় জমি মিললেও জমি হস্তান্তরে বিভিন্ন জটিলতা রয়েছে। মসজিদ নির্মাণে জমি ক্রয়ের অর্থ পরিশোধ করলেও মামলার কারণে নির্মাণ কাজ আটকে আছে।

জানা গেছে, দেশে তিন ক্যাটাগরিতে মসজিদ নির্মাণ হচ্ছে। এরমধ্যে আলীকদম উপজেলায় ‘সি’ ক্যাটাগরি মসজিদের আয়তন ৬১ হাজার ২৫ বর্গমিটার। কিন্তু বর্তমান উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদ যেখানে রয়েছে সেখানে এ পরিমাণ জমি নেই। পাশের পুকুর থেকে ৩০ ফুট ভরাট করলে জায়গা হবে। কিন্তু সেখানেও রয়েছে নানান জটিলতা।
অনুসন্ধানে জানা যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকারভিত্তিক ‘প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন (১ম সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্পে’ ৮ হাজার ৭২২ কেটি টাকা ব্যয়ে ২০১৭ সালের এপ্রিল হতে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদে বাস্তবায়নে অনুমোদিত করা হয়। প্রতিটি মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতি কেন্দ্র ৪০ শতাংশ জমি নির্ধারণ করা হয়েছে। চার তলার জন্য কমবেশি ১৫ কোটি টাকা এবং তিন তলার জন্য কমবেশি ১৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।

গণপূর্তের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পের জন্য জায়গা নির্ধারণের দায়িত্ব মূলত সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের। জমি নির্ধারণের পরেই নিয়ম অনুযায়ী দরপত্র আহ্বান ও সর্বনিম্ন দরদাতা কার্যাদেশ পাবেন। কিন্তু গণপূর্তের কিছু অসাধু কর্মকর্তা জমি নির্ধারণের আগেই তড়িঘড়ি করে দরপত্র আহ্বান করেন। এই কারণে নির্মাণ কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

৫৬০ মডেল মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম সংবাদিকদের বলেন, মসজিদ নির্মাণে গণপূর্ত অধিদপ্তর দরপত্র আহ্বান করেছে। এখানে ইসলামি ফাউন্ডেশনের সম্পৃক্ততা নেই। ভবন নির্মাণে জমি পাওয়া গিয়েছিল, সয়েল টেস্ট (মাটি পরীক্ষা) হয়েছে কিন্তু জমি দখল পাচ্ছি না।

জমি অধিগ্রহণ ছাড়াই মডেল মসজিদ এবং ইসলামি সাংস্কৃতি কেন্দ্র নির্মাণের দরপত্র আহ্বানের বিষয়ে গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলমের মুখপাত্র তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী গণপূর্ত প্রজেক্ট সার্কেল-২ এর মোহাম্মদ পারভেজ খাদেম সাংবাদিকদের জানান, মডেল মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের জমি ধর্ম মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা করবে। আর গণপূর্ত অধিদপ্তর অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করবে। তবে নির্মাণের কাজ চলমান রাখতেই জমি অধিগ্রহণের আগেই দরপত্র আহ্বান করেছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। জমি সংক্রান্ত সমস্যা সমাধান নিয়েও আলোচনা চলছে।

আলীকদমে মডেল মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণে নিয়োজিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে এনএসজেবি। এ প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর বলেন, ২০১৯ সালের আগস্টে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। আমাদের প্রতিষ্ঠান গণপূর্ত অধিদপ্তর থেকে কাজ পান। কার্যাদেশ মতে, ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি আলীকদম উপজেলা প্রশাসন থেকে আমাদেরকে জমি বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। আমরা যথারীতি কাজ শুরু করার জন্য গেলে উপজেলা প্রশাসন আমাদেরকে জমি বুঝিয়ে দিতে পারেননি!

জানতে চাইলে শুক্রবার সকালে বান্দরবান ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক মীর মোহাম্মদ নিয়ামত উল্লাহ বলেন, আলীকদম উপজেলা পরিষদ জামে মসিদের স্থানে মডেল মসজিদ নির্মাণে প্রয়োজনীয় জায়গা নেই। সামনের পুকুরের জায়গা ৩০ ফুট ভরাট করলে মডেল মসজিদের জায়গা সংকুলান হয়। কিন্তু পুকুর ভরাট করে মসজিদ নির্মাণেও রয়েছে জটিলতা। পাশাপাশি ওই পুকুরের জমি নিয়ে থানা ও উপজেলা প্রশাসনের মাঝেও রয়েছে মালিকানা বিরোধ।

অপরদিকে, যে জায়গায় মডেল মসজিদ স্থাপনে জায়গা নেওয়া হয়েছিল তার পাশে একটি ঝিরি রয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে সমস্যা। উপ-পরিচালক আরও বলেন, গতমাসে জেলা প্রশাসক ও ইউএনও’র সাথে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। প্রয়োজনের জমি অধিগ্রহণ করে হলেও শীঘ্রই এ বিষয়ে একটি সুরাহা হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

জানতে চাইলে শুক্রবার সকালে আলীকদম উপজেলার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার (এসিল্যান্ড) মো. মাহজারুল ইসলাম চৌধুরী জানান, ‘জমি সংকটের কারণে এতদিন মডেল মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু করা যায়নি। জমি সংকট নিরসন করে অচিরেই আলীকদমে উপজেলায় মডেল মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেবে প্রশাসন।’

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আলীকদমে, মসজিদ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন