parbattanews

আলীকদমে আর্থিক লোভ দেখিয়ে বৌদ্ধ থেকে ৩৩ জনকে খৃস্টান বানানোর অভিযোগে সেভেন্থ ডে এ্যাডভেন্টিস্ট মিশনারীর ৫ জন আটক

Ak khristan news pc 13-03-2015

মমতাজ উদ্দিন আহমদ, আলীকদম (বান্দরবান):

বান্দরবানের আলীকদমে সেভেন্থ ডে এ্যাডভেন্টিস্ট নামের একটি খৃস্টান মিশনারী কর্তৃক প্রলুব্ধ করে স্থানীয় মুরুং উপজাতিদের ধর্মান্তরের অভিযোগে শুক্রবার সকালে পুলিশ মিশনারিটির ৫ কর্মীকে উপজেলার চিওনী মুরুং পাড়া থেকে আটক করে। একইসাথে খৃস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত পাড়া কার্বারীসহ ৫ জনকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়। দীর্ঘ প্রায় সাড়ে এগার বছর পর এ মিশানারীটির বিরুদ্ধে আবারো আলীকদমে প্রকাশ্যে ধর্মান্তর প্রক্রিয়া শুরু করার অভিযোগ উঠেছে।

 

উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রামকে একটি স্বাধীন খৃস্টান রাষ্ট্র বানানোর লক্ষে দীর্ঘদিন ধরে বেশ কয়েকটি মিশনারী কাজ করে যাচ্ছে।

স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ‘সেভেন্থ ডে এ্যাডভেন্টিষ্ট’ নামে একটি খৃস্টান মিশনারী অনেকটা গোপনেই স্থানীয় মুরুংদের টার্গেট করে ধর্মান্তর করে যাচ্ছে। ১৩ মার্চ ভোরে পূর্বপরিকল্পনা মতে, সেভেন্থ ডে এ্যাডভেন্টিষ্ট, চট্টগ্রাম অঞ্চলের সেক্রেটারী ডেনিশটি দাস ও প্রজেক্ট ডাইরেক্টর ডিটি রায় অন্যান্যদের নিয়ে চিওনী মুরুং পাড়ায় ৩৩ জন মুরুং নারী-পুরুষ ও শিশুকে খৃস্টান ধর্মে দীক্ষিত করান। কিন্তু গোপন খবরের প্রেক্ষিতে স্থানীয় বৌদ্ধ ধর্মালম্বী লোকজনসহ গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা চিওনী পাড়ায় উপস্থিত হওয়ার আগেই সটকে পড়েন ডেনিশটি দাশ ও প্রজেক্ট ডাইরেক্টর ডিটি রায়। এ সময় চিওনী পাড়ার কার্বারী সাকনাই মুরুং এর বাসায় সংস্থাটির ৩ নারী কর্মীসহ ৫ জনকে পাওয়া যায়।

সাংবাদিক ও গোয়েন্দা সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদে সেভেন্থ ডে এ্যাডভেন্টিস্ট কর্মী ট্যাটম্যান ত্রিপুরা ও তার স্ত্রী হাঁসচি ত্রিপুরা স্বীকার করেন, মিশনারিটির চট্টগ্রাম অঞ্চলের সেক্রেটারী ডেনিশটি দাসের নির্দেশে তারা মুরুংদের ধর্মান্তর করার কাজে চিওনী পাড়ায় আসেন। ট্যাটম্যান আরো বলেন, আমি মিশনারিটির লামা গজালিয়া ইউনিয়নের গতিরাম পাড়ায় পরিচালিত মিশনারি স্কুলের একজন শিক্ষক। এ মিশনারীটির একাধিক স্কুল লামা ও আলীকদমের পাহাড়ি পল্লীতে রয়েছে।

‘কেন বৌদ্ধ ধর্ম থেকে খৃস্টান ধর্মে দীক্ষিত হলেন’- এ প্রশ্নের জবাবে চিওনী মুরুং পাড়ার কার্বারী চাকনাই মুরুং ও সাকডিং মুরুং জানান, আমরা বঞ্চিত জাতি। উপজেলা সদরের দুই কিলোমিটারের মধ্যে বসবাস করার পরও প্রশাসনের লোকজন কিংবা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা আমাদের খোঁজ-খবর নেয় না। আমরা খাবার পানি ও স্যানিটেশন সমস্যায় আছি। সরকারের লোকেরা এসব দেখে না। খৃস্টান ধর্মে গেলে আমাদের অভাব তারা পূরণ করবে বলে আশ্বাস দিয়েছে। তাই আমরা কিছু পাওয়ার আশায় আজ (শুক্রবার) সকালে খৃস্টান হয়েছি। আমরা এখন নতুন ধর্ম পেয়েছি! এখানে এক মণ মুরগী জবাই করে পাড়ার লোকজনকে খাওয়ানো হয়েছে’- যোগ করেন কার্বারী।

সাকাইন মুরুং কার্বারী আরো জানান, তার পরিবারের ৫ জনসহ পাড়ার মেন্নাম মুরুং, চাকদিন মুরুং, ফারিং মুরুং, বথুই মুরুং, মেনপং মুরুং, ইয়ংওয়াই মুরুং, লাইরুং মুরুং, ফন্নাং মুরুং, তংহ্লা মুরুংসহ তাদের পরিবারের ৩৩ জন বৌদ্ধ ধর্ম ত্যাগ করে খৃস্টান হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০০৩ সালের ২৩ ও ২৪ সেপ্টেম্বর সেভেন্থ ডে এ্যাডভেন্টিস্ট নামের এই মিশনারী কর্তৃক উপজেলার তালুক চন্দ্র পাড়ায় ১১০ জন তঞ্চঙ্গ্যা ও চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের শিশু পাড়ার ৪৩ জন মার্মাকে খৃস্টান ধর্মে দীক্ষিত করান। এরা সকলের বৌদ্ধ ধর্মালম্বী ছিলেন। এ খবরে স্থানীয় বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের মাঝে প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এ নিয়ে সাংবাদিকরা লেখালেখি করলে মিশনারীটি আলীকদম থেকে কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়। প্রশাসনের নীরবতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দীর্ঘদিন পর আবারো মিশনারীটি ধর্মান্তর প্রক্রিয়া শুরু করেছে বরে অভিযোগ উঠেছে।

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে সেভেন্থ ডে এ্যাডভেন্টিষ্ট এর চট্টগ্রাম অঞ্চলের সেক্রেটারী ডেনিশটি দাশ শুক্রবার বিকেলে মুঠোফোনে বলেন, আমরা সমাজসেবার কাজ করে থাকি। জোর করে কাউকে ধর্মান্তর করি না। তবে চিওনী মুরুং পাড়ায় শুক্রবার সকালে তারা উপস্থিত হয়েছিলেন স্বীকার করে বলেন, কাউকে লোভ দেখিয়ে খৃস্টান বানানো হয়নি। স্বেচ্ছায় মুরুংরা খৃস্টান ধর্মে দীক্ষিত হয়েছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আলীকদম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আসলাম হোসেন বলেন, যারা খৃস্টান হয়েছেন এবং যারা করিয়েছেন উভয়পক্ষকেই থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ধর্মান্তর হওয়ার বিষয়টি সত্য হলেও জোর করে ধর্মান্তরের অভিযোগ মিলেনি। মিশনারীটির লোকজন থেকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, এই অঞ্চলের চাক সম্প্রদায় লোভ দেখিয়ে খৃস্টান বানানোর অভিযোগে বিভিন্ন মিশনারীর বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিও দিয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে মিশনারীদের ধর্মান্তর সংক্রান্ত আরো সংবাদ পড়ুন নিচের লিংক থেকে

♦  পার্বত্যাঞ্চলে বিদেশী এনজিওগুলোর ধর্মান্তরিত করার কার্যক্রম থেমে নেই

♦  পার্বত্য চট্টগ্রাম, খ্রিস্টান মিশনারি ও বৌদ্ধধর্মের ভবিষ্যৎ-৩

♦  পার্বত্য চট্টগ্রাম, খ্রিস্টান মিশনারি ও বৌদ্ধধর্মের ভবিষ্যৎ-২

♦  পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনা-বাঙ্গালী প্রত্যাহার ও খ্রিস্টান অঞ্চল প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন

♦  খাগড়াছড়িতে পর্যটকের ছদ্মাবরণে চলছে ধর্মান্তরকরণ মিশন

♦  ধর্মান্তরকরণের অভিযোগে বান্দরবানে এনজিও কমপেশন-এর কার্যক্রম বন্ধ

♦  এবার মিশনারীদের বিরুদ্ধে ধর্মান্তরকরণের অভিযোগ আনলেন বান্দরবানের চাক সম্প্রদায়ের বৌদ্ধরা

♦  পার্বত্য চট্টগ্রামে অপ্রতিরুদ্ধ খ্রিস্টান মিশনারিরা

♦  উপজাতীয় নওমুসলিমদের ওপর খ্রিস্টান মিশনারীদের দৌরাত্ম

♦  ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মুসলিম সম্প্রদায় নির্মম নির্যাতনের শিকার

♦  দারিদ্রতার সুযোগ নিয়ে ধর্মান্তরকরণ একটি অন্যায় কাজ— নিখিল কুমার চাকমা

♦  নতুন রাষ্ট্র সৃষ্টির ষড়যন্ত্র চলছে খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান এবং কক্সবাজার নিয়ে

♦  পার্বত্য চট্টগ্রামে ইউএনডিপি’র ভয়াবহ গোপন মিশন ‘ভিশন-২০৩০’

♦  আলীকদমে আর্থিক লোভ দেখিয়ে বৌদ্ধ থেকে ৩৩ জনকে খৃস্টান বানানোর অভিযোগে সেভেন্থ ডে এ্যাডভেন্টিস্ট মিশনারীর ৫ জন আটক

♦  পার্বত্য চট্টগ্রামে বিশেষ গোষ্ঠির অতিআগ্রহ বন্ধ করতে হবে

♦   বান্দরবানে বহুল বিতর্কিত এনজিও ওয়ার্ল্ড ভিশনের কার্যক্রম গুটিয়ে ফেলার নির্দেশ

♦  পার্বত্য চট্টগ্রামে ওয়ার্ল্ডভিশনের দরজা বন্ধ হচ্ছে ১ অক্টোবর

 

Exit mobile version