আলীকদমে রোহিঙ্গা ভোটার জালিয়াতি: নেপথ্যে জনপ্রতিনিধিরা


বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার ১নং সদর ইউনিয়নে রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার চাঞ্চল্যকর অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে স্থানীয় প্রশাসনের তদন্ত কমিটি।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের যোগসাজশে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় অভিযুক্ত জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে শীঘ্রই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আলীকদম সদর ইউনিয়ন পরিষদের কয়েকজন নির্বাচিত প্রতিনিধি রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে ভুয়া নাগরিক সনদ ও ‘রোহিঙ্গা নয়’ মর্মে প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন।
অভিযোগের তীর সদর ইউপি চেয়ারম্যান নাছির উদ্দিন, ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সন্তোষ কান্তি দাশ, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ জাকের হোসেন এবং ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল মতিনের দিকে।
অনুসন্ধানে রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার অভিনব কৌশলও সামনে এসেছে। ভোটার হওয়ার আবেদনকারী মো. ইব্রাহিম পিতার নামের জায়গায় শ্বশুরের নাম ব্যবহার করেছেন। আরেক আবেদনকারী জান্নাতুল মুন্নীর জাতীয় পরিচয়পত্রে মৃত পিতার নাম উল্লেখ থাকলেও অনুসন্ধানে তার বাবা জীবিত বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এই গুরুতর অভিযোগের বিষয়ে আলীকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মুমিন কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তিনি জানান, ইতোমধ্যে চিহ্নিত হওয়া রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে এবং এই প্রক্রিয়া চলমান। এই ঘটনায় সদর ইউপি চেয়ারম্যান ও একজন ইউপি সদস্যকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেওয়া হয়েছে।
তদন্তে সত্যতা, শাস্তির অপেক্ষা:
পত্রিকায় এই বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশের পরই স্থানীয় প্রশাসন দ্রুত তদন্তে নামে। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পেয়েছে। অভিযুক্ত জনপ্রতিনিধিরা রোহিঙ্গাদের ভোটার করার বিনিময়ে অর্থ নিয়েছেন বলেও প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এই জালিয়াতির সত্যতা নিশ্চিত হওয়ায় অভিযুক্ত জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন। প্রশাসনের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, খুব শীঘ্রই অভিযুক্ত চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা সাময়িক বরখাস্ত হতে পারেন। এই ঘটনা আলীকদমের স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।