parbattanews

আসছে নতুন প্রজাতির পরিবেশবান্ধব দুই বাঁশ

আসছে নতুন প্রজাতির দুই বাঁশ। দীর্ঘ গবেষণায় প্রথমবারের মতো দুটি বাঁশের জাত উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)। নতুন উদ্ভাবিত বাঁশ টেকসই, দীর্ঘ জীবনকাল, অধিক ফলন, লাভজনক, পাহাড়ধস, ভূমিক্ষয় ও নদীভাঙন রোধে কাজ করবে। বাঁশের কান্ড সবজি হিসেবেও খাওয়া যাবে। বাঁশ জলবায়ু সহিষ্ণু পরিবেশের বন্ধু হিসেবে পরিচিত।

বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) গবেষণায় দেখা গেছে, বাঁশ চাষ অনেক লাভজনক। জন্ম থেকে মৃতু্য পর্যন্ত কাজে লাগে বাঁশ। বাঁশের তৈরি ফার্নিচার, নিত্যব্যবহার্য বিভিন্ন হস্তশিল্প বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। ইপিজেডে তৈরি হচ্ছে বাঁশের কফিন, যা রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপে। বাঁশের বাঁশি দেশের গন্ডি ছাড়িয়েছে অনেক আগেই। কাগজ তৈরি হচ্ছে বাঁশ দিয়ে। বাঁশের তৈরি পণ্য পরিবেশবান্ধব হিসেবে বিশ্বজুড়ে স্বীকৃতি পেয়েছে।

ইতিমধ্যে বাঁশ দুটির বৈজ্ঞানিক নামকরণ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- ম্যাসু বাঁশ। টিসু্য কালচার পদ্ধতিতে নতুন দুটি বাঁশের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। শিগগিরই নতুন উদ্ভাবিত বাঁশের জাত অবমুক্ত করা হবে। বাঁশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে নিয়মিত গবেষণা করছে বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)। প্রতিষ্ঠানটি ৩৫ জাতের বাঁশ সংরক্ষণ করে আসছে চট্টগ্রামের ষোলশহরে বাঁশ উদ্যানে। পাঁচ একরের এ গবেষণা কেন্দ্রে সরেজমিন দেখা গেছে, বড় বড় বাঁশ আর বাঁশ। একটিকে ছাড়িয়ে আরেকটি আকাশ ছুঁতে যাচ্ছে। বাগানের সবচেয়ে বড় বাঁশটির উচ্চতা প্রায় ১৩০ ফুট বলে জানা যায়। নাম ভুদুম বাঁশ। বাঁশটির ব্যাস প্রায় দুই ফুট। বাঁশ বাগানে আছে- কলসির মতো বিপন্ন ঘটি বাঁশ, বরাক, কাঁটা, বিষকাঁটা, মিরতিঙ্গা, বেথুয়া, কনক কাইচ, তেঁতুয়া, চৈই, মাকলা, ফারুয়া ও করজবা।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) গ্লোবাল ব্যাম্বু রিসোর্সেস প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রজাতিবৈচিত্র্য ও উৎপাদনগত দিক বিবেচনায় ৩৫ প্রজাতির বাঁশ নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে অষ্টম স্থানে। ৫০৪ প্রজাতির বাঁশ নিয়ে বিশ্বে প্রথম চীন। ব্রাজিল ২৩২ প্রজাতি নিয়ে দ্বিতীয়। তালিকায় ১৩৯ প্রজাতি নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে জাপান। বাঁশের কচি মন্ড থেকে তুলা ও সুতা তৈরি হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের ভেষজ ওষুধ হচ্ছে। বেদে সম্প্রদায়ের ব্যাম্বু ম্যাসেজ একটি অতি পরিচিত থেরাপি। বিশ্বের অনেক পর্যটন শহরে প্রাকৃতিক উপায়ে চিকিৎসা দিতে গড়ে উঠেছে ব্যাম্বু থেরাপি সেন্টার।

গ্রামাঞ্চলে বাঁশের গুরুত্ব অপরিসীম। স্কুল ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকার স্ট্যান্ড বানানো হয় বাঁশ দিয়ে। গৃহনির্মাণ থেকে হস্তশিল্পসহ নিত্যদিনের ব্যবহার্য বিবিধ জিনিসপত্র তৈরির কাজে বাঁশ ব্যবহার হয়। ঘর, ক্ষেতের বেড়া ও খুঁটি, সবজির মাচায় বাঁশ লাগে। গ্রামের ছোট নালা বা খাল পেরুতে লাগে বাঁশের সাঁকো। তোরণ ও প্যান্ডেল তৈরি, শহরের ভবন নির্মাণেও কাজে লাগে বাঁশ। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে করপোরেট অফিস- সবখানেই নানাভাবে ব্যবহার হয় বাঁশ।

বারডেমের পুষ্টি বিশেষজ্ঞ ডা. রেকেকা ইয়াসমীন বলেন, ‘বাঁশ পুষ্টিও জোগায়। কচি বাঁশের নরম কান্ডে খাদ্যগুণ ও স্বাদের কারণে চীন, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারে বাঁশ ভেজিটেবল হিসেবে বেশ সমাদৃত। কচি বাঁশের ডগা বা বাঁশ কড়াল মুখরোচক সবজি হিসেবে খাওয়ার উপযোগী। পাহাড়ি জনগোষ্ঠী বর্ষা মৌসুমে বাঁশের কান্ড খেয়ে থাকেন। বাঁশের শাখা ও পাতা উত্তম পশুখাদ্য। বিরল প্রজাতির পান্ডা কচি বাঁশ ও পাতা খেয়েই বেঁচে থাকে। হাতির কাছেও বাঁশ পাতা একটি প্রিয় খাবার।’

বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) পরিচালক ড. মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ‘দ্রুত বর্ধনশীল উদ্ভিদের অন্যতম হচ্ছে বাঁশ। কার্বন-ডাই অক্সাইড শোষণ করে বাঁশ। জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্যোগ মোকাবিলা ও ভূমিক্ষয় রোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বাঁশ। চীন বিশ্বে বাঁশ ও বাঁশজাত পণ্য রপ্তানি করে বিপুল অর্থ আয় করছে। বাঁশের ফার্নিচার ও আসবাবপত্র পরিবেশবান্ধব। জাপানে নদীভাঙন রোধ ও বাঁধ রক্ষায় বাঁশ ব্যবহার বাধ্যতামূলক। হারিয়ে যাওয়া অনেক বাঁশের বীজের একটি সংরক্ষণাগার তৈরি করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বাঁশ গবেষণায় আমাদের লোকবল অত্যন্ত সীমিত। ১০৪ জন জনবলের জায়গায় আছে মাত্র ৬৮ জন। বাঁশের নতুন জাত উদ্ভাবনে গবেষণা অব্যাহত আছে।’

সূত্র: যায়যায়দিন

Exit mobile version