parbattanews

আসমানীর মতো ভাঙ্গা ঘরেই বাস করে পানছড়ির সালেমা

নিজস্ব প্রতিনিধি,পানছড়ি:

পানছড়ি উপজেলার ৫নং উল্টাছড়ি ইউপির মধ্যম মোল্লাপাড়া গ্রামে বাস করে সালেমা খাতুন (৪৫)। নিজে একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। স্বামী ওমর আলীও শারীরিক ভাবে পুরো সুস্থ নয়। জঙ্গল থেকে কচু শাক, লাকড়ি ইত্যাদি সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করলেই তাদের চুলো জ্বলে।

এদিকে ঘরের বেহাল দশার চিত্রটাও পুরো আসামানীর মতো। ১২ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১০ ফুট প্রস্থের একটি ভাঙ্গা ছনের ছাউনির ঘর কোন রকম মাটিতে দাঁড়িয়ে আছে। একটু জোরে বাতাস বইলে আর রক্ষা নেই। ঘরে চারিদিকে পুরনো কাপড়ের টুকরো দিয়ে ফুটো বন্ধ করা শীত নিবারণের বৃথা চেষ্টা। পানছড়ি উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম মোমিনের মাধ্যমে খবর পেয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় এসব বেহাল ও করুণ দশার চিত্র।

সালেমার সাথে কথা বলে জানা যায়, ১৬/১৭ বছর ধরে জরাজীর্ণ এই ছনের ঘরে তারা বাস করছে। ছেলে ওমর ফারুক (১০) আনন্দ স্কুলে পড়ে আর মেয়ে খাদিজার বয়স ৪ বছর। ছোট্ট কক্ষটিতেই চুলো এবং থাকা খাওয়ার জায়গা তাদের। একখানা রেশন কার্ড থাকলেও দীর্ঘ বছর ধরে বন্ধক রয়েছে। পরিবারের চার সদস্যর শীত নিবারণের জন্য রয়েছে একটি জোড়াতালির কাঁথা।

গত পাঁচ বছর আগে সুব্রত চেয়ারম্যানের আমলে একখানা কম্বল পেয়েছিল এরপর আর কোন বিত্তবান, প্রতিষ্ঠান বা বে-সরকারি সংস্থা এগিয়ে আসেনি তাদের শীত নিবারণে। প্রতিবন্ধী হয়েও পাচ্ছেনা কোন প্রতিবন্ধী ভাতা।

সালেমা জানায়, ছেলে ওমর ফারুকের উপবৃত্তির টাকা দিয়ে আজ বাজার থেকে একটি মাছ এনেছে তাই আজ তাদের ঘরে ঈদানন্দ। কোরবানীর পর থেকে মাংস তো দুরের কথা এই মাছই তাদের ঘরে আজ বইয়ে দিচ্ছে মাংসের স্বাদ।

প্রতিবেশী আমেনা (৭০) ও রহিমা খাতুন (৬৫) জানায়, সালেমা মানবেতর দিন যাপন করলেও ভিক্ষার পথে যায়নি। কারো কাছে হাত পাতার অভ্যাসও নেই। কোন কোন সময় ঘরে চুলোও জ্বলেনা। মাঝে মাঝে এক বেলার খাবার দিয়ে তিন বেলাও পার করে।

আনন্দ স্কুল শিক্ষক মঞ্জুরুল ইসলাম জানায়, এই রকম মানবেতর দিন যাপন আমার আর চোখে পড়ে নাই। আমি নিজেও মাঝে মধ্যে হালকা সহযোগিতার হাত বাড়াই। বিত্তবানরা এদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসা দরকার। প্রতিবন্ধী কল্যাণ সংঘের সভাপতি মো. হাসানুজ্জামান এই পরিবারটিকে সব ধরণের সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দিয়ে বলেন, আজ-কালের মধ্যে শীত বস্ত্র প্রদান করা হবে।

৫নং উল্টাছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান বিজয় চাকমা জানান, আসলে আমি এই পরিবারটির ব্যাপারে জানতাম না। এই প্রতিবেদকের মাধ্যমেই জানতে পেরেছি। খুব সহসাই শীত বস্ত্র পৌঁছে দেব আর আমার সহযোগিতার হাত সব সময় এই পরিবারের জন্য খোলা থাকবে।

Exit mobile version