আসামে কংগ্রেস সভায় ‘আমার সোনার বাংলা’ গাওয়া নিয়ে বিতর্ক

fec-image

ভারতের আসামের করিমগঞ্জ জেলায় কংগ্রেসের এক বৈঠকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা’ গাওয়া নিয়ে তুমুল বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী, সিনিয়র কংগ্রেস নেতা বিধু ভূষণ দাস সোমবার শ্রীভূমি শহরে কংগ্রেস সেবা দলের এক বৈঠকে গানটি গেয়েছিলেন।

অনুষ্ঠানের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর বিষয়টি নিয়ে বিতর্কের ঝড় ওঠে। আসামের ক্ষমতাসীন বিজেপি অভিযোগ করেছে, কংগ্রেস ‘বৃহত্তর বাংলাদেশ’–ভিত্তিক ভোটব্যাংক রাজনীতির এজেন্ডা তৈরির চেষ্টা করছে।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আসামের বিভিন্ন জায়গায়, বিশেষ করে বরাক উপত্যকায়, রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। অনলাইনেও কংগ্রেসের সমালোচনা শুরু হয়েছে।

ঘটনার পর রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী অশোক সিংহল এক্স–এ ভিডিওটি শেয়ার করে কংগ্রেসকে তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি লিখেছেন, ‘তারা এমন একটি দেশের জাতীয় সঙ্গীত গেয়েছে, যে দেশ ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়’।

তিনি আরও দাবি করেন, ‘এখন স্পষ্ট হয়েছে কেন কংগ্রেস বহু দশক ধরে আসামে অনুপ্রবেশকে অনুমোদন ও উৎসাহ দিয়েছে। ভোটব্যাংক রাজনীতির স্বার্থে রাজ্যের জনসংখ্যার গঠন পরিবর্তন করে ‘বৃহত্তর বাংলাদেশ’ তৈরির উদ্দেশ্যেই তারা এটি করেছে’।

বিধু ভূষণ দাস শ্রীভূমি জেলার ভাঙ্গার বাসিন্দা এবং সেবা দলের জেলা ইউনিটের সাবেক সভাপতি। তিনি করিমগঞ্জ (শ্রীভূমি) জেলা সেবা দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে ইন্দিরা ভবনে স্থানীয় কংগ্রেস অফিসে বক্তৃতা শুরু করার আগে ১৯০৫ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত গানটি পরিবেশন করেন। উল্লেখ্য, গানটি বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের সময় লেখা হয়েছিল।

মঙ্গলবার রাজ্যের মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু পাল জানান, তিনি কংগ্রেসের এক নেতার দলীয় সভায় বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার তথ্য পেয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘কংগ্রেস যে কোনো কিছুই করতে পারে। দলের সবকিছুই আজব—তারা জানে না কখন, কী গান গাইতে হয়’।

তিনি আরও জানান, ‘আমি ভিডিওটি দেখব এবং পুলিশকে তদন্ত করতে ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলব’।

অন্যদিকে, কংগ্রেস নেতারা এই বিতর্ককে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।

করিমগঞ্জ (শ্রীভূমি) জেলা কংগ্রেস কমিটির গণমাধ্যম বিভাগের সভাপতি শাহাদত আহমেদ চৌধুরী বিধু ভূষণ দাসের পক্ষ নিয়ে বলেন, ‘ওই প্রবীণ নেতা শুধু একটি রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়েছিলেন—বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে নয়’।

তিনি আরও বলেন, ‘আমার সোনার বাংলা’ মূলত নোবেলজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি সৃষ্টিকর্ম হিসেবেই পরিচিত। দাস তাঁর বক্তৃতা শুরু করার সময় বলেছিলেন, তিনি একটি রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে শুরু করবেন। তিনি একজন শ্রদ্ধেয় নেতা, যিনি প্রতি স্বাধীনতা দিবসে ইন্দিরা ভবনে ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। তাই বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গানটি গাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

 

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন