ইউক্রেন থেকে ফিরলেই বিয়ের সিদ্ধান্ত ছিল হাদিসুরের

fec-image

কর্মব্যস্ততার মধ্যে বিয়ের সময়টা যেন পার হয়ে যাচ্ছিল। তাই এবার বাড়ি ফিরে বিয়ের পিঁড়িতে বসার কথা ছিল তরুণ মেরিন ইঞ্জিনিয়ার মো. হাদিসুর রহমান আরিফের (২৯)। তবে বুধবার (২ মার্চ) ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে আটকে পড়া বাংলাদেশি পণ্যবাহী জাহাজ বাংলার সমৃদ্ধিতে রকেট হামলায় এ স্বপ্ন ও পরিকল্পনার অপমৃত্যু হয়। স্থানীয় সময় বিকাল ৫টা ১০ মিনিটে জাহাজে রকেট হামলা হয়। এতে প্রাণ হারান আরিফ। এ ঘটনায় তার গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।

আরিফ বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের বাসিন্দা মো. আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। চার ভাই বোনের মধ্যে হাদিস মেঝ। বেতাগী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাকসুদুর রহমান ফোরকানের চাচাতো ভাইয়ের ছেলে আরিফ।

চেয়ারম্যান মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘আরিফ ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছাত্র ছিল। সে চট্টগ্রাম মেরিন অ্যাকাডেমি থেকে পাস করার পর ২০১৮ সাল থেকে ওই জাহাজে ছিল। অবিবাহিত ছেলেটা সর্বশেষ বাড়িতে এসেছিল মাস ছয় আগে।’

আরিফের স্বজনরা জানান, আট বছর ধরে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে বিভিন্ন জাহাজে চাকরি করছেন আরিফ। বুধবার জাহাজ থেকে ছোট ভাই গোলাম মাওলা প্রিন্সকে ফোন করেন তিনি। প্রিন্সের সঙ্গে কথা বলার সময় আরিফের প্রান্তে বিকট শব্দ হয়। পরে তার সংযোগটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

ভাই গোলাম মাওলা প্রিন্স আরও বলেন, গোলার আঘাতের সময় বড় ভাই বাইরে এসে মোবাইলফোনে আমাকে ফোন দিয়েছিলেন। তবে হঠাৎ গোলা এসে পড়ে জাহাজটিতে। বিকট শব্দের কারণে কিছুই শুনতে পাইনি। আমার ভাই এবার বাড়ি ফিরে বিয়ে করার কথা ছিল। আমাদের সব শেষ।

এদিকে ছেলে নিহত হওয়ার খবর পেয়ে শোকে ভেঙে পড়েছেন মা-বাবা। শোকে মুহ্যমান পরিবারের অন্য স্বজনেরা। বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে আরিফের মৃত্যুর বিষয়টা নিশ্চিত হন তারা।

মা আমেনা বেগম কান্না জড়ানো কণ্ঠে বলেন, গত বুধবার ছেলে আমাকে ফোন দিয়েছিল। ডাক্তার দেখিয়েছি কিনা জানতে চেয়েছে। এরপর সবশেষ গতকাল ভিডিও কলে কথা হয়। এরপর রাতে তার মৃত্যুর খবর পাই। আমার ছেলে আমাকে বলেছিল- মা তুমি আমাদের ভাই -বোনদের পুতুলের মতো সাজিয়ে তুলে কোথায় যাবা, মা তুমি না বাঁচলে আমার বেঁচে থেকে কি লাভ?

জানা যায়, বাংলাদেশি জাহাজ বাংলার সমৃদ্ধি গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের অলিভিয়া বন্দরে পৌঁছায়। ওই দিনই দেশটিতে রাশিয়ার হামলা শুরু হয়। পরে বন্দরের সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। একই সঙ্গে জাহাজে আটকা পড়েন ক্যাপ্টেন জি এম নুর ই আলম, চিফ ইঞ্জিনিয়ার ওমর ফারুকসহ ২৯ বাংলাদেশি নাবিক। ইউক্রেনে হামলা শুরুর সপ্তম দিনে বাংলাদেশি জাহাজটিতে গোলার আঘাতের ঘটনা ঘটলো। সমুদ্রগামী জাহাজ বাংলার সমৃদ্ধি ২০১৮ সালে বিএসসির বহরে যুক্ত হয়।

সূত্র: বাংলাট্রিবিউন

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন