ইউপিডিএফের মতো একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠির সাথে বসে নিজেদেরই বিতর্কিত করল ঐকমত্য কমিশন

fec-image

ভারতের নির্দেশনায় তৎকালীন শেখ হাসিনার সরকার ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর জন সংহতি সমিতি (জেএসএস) এর সাথে একটি দেশবিরোধী চুক্তি করে। সেই চুক্তির মধ্যেই পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার উপাদান বিদ্যমান আছে।

কিন্তু সেটা কিছু সময় সাপেক্ষ। সে কারণেই এই চুক্তির বিরোধীতা করে সেই সময় একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠি পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্ব শাসনের দাবিতে সংঘটিত হয়। সংগঠনটির নাম ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)।

১৯৯৮ সালে আত্মপ্রকাশের পর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে ইউপিডিএফ হত্যা, চাঁদাবাজি, গুম, অপহরণ বাণিজ্য, কিয়াং নির্মাণের নামে বাঙালিদের জায়গা দখল, ধর্ষণ, জাতিগত দাঙ্গা-হাঙ্গামার মাধ্যমে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রেখেছে।

তারা সন্ত্রাসের পথ পরিত্যাগ না করার কারণে তাদের পক্ষ থেকে বার বার আলোচনার প্রস্তাব দেয়া হলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিনিধি কখনোই কোনো আলোচনায় বসেনি ইউপিডিএফের সঙ্গে। এমনকি তারা ২৪-এর গণ অভ্যুত্থানেরও বিরোধিতা করেছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনের সময়ও এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠিটি ঢাকা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি এবং রাঙ্গামাটিতে নিজেদের কোটার দাবিতে আন্দোলন করেছে। কিন্তু ৫ আগস্ট যখন শেখ হাসিনার পতন হয়ে যায় তখনই তারা হঠাৎ করেই বুলি পাল্টাতে থাকে।

শুধু তাই নয়, শেখ হাসিনার পতনের পর খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটিতে যে দাঙ্গা-হাঙ্গামাগুলো হয়েছে, তার প্রত্যেকটার নাটের গুরু এই ইউপিডিএফ নামের সন্ত্রাসীরা। যমুনা টেলিভিশনের সাথে আকারে-ইঙ্গিতে তাদের সেই পরিকল্পনার কথা স্বীকারও করেছে দলটির এক নেতা অংগ্যা মারমা।

তার কথায় ফুটে উঠেছে যে, তারা পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে অন্তর্বর্তী সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে নিজেদের স্বায়ত্ত শাসনের দাবি আদায় করতে চেয়েছিল।

এমন একটি সন্ত্রাসী সংগঠনের সাথে শনিবার (১০ মে) হঠাৎ করেই বৈঠক করেছে আলী রিয়াজের নেতৃত্বে ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’!

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয়েছে মূলত আগামী নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, সংবিধান ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে সংস্কারের জন্য গঠিত কমিশনগুলোর সুপারিশ বিবেচনা ও গ্রহণের লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের জন্য। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে এবং সুপারিশ করবে এই কমিশন। কিন্তু ইউপিডিএফ কোনো রাজনৈতিক দল নয়, বরং এটি একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠি।

পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্ত শাসনের নামে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করাই যাদের মূল লক্ষ্য, এমন একটি সশস্ত্র গোষ্ঠির সাথে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বৈঠক করতে পারে কোন যুক্তিতে? সে প্রশ্নই করছেন সচেতন মহল।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলী রিয়াজের নেতৃত্বাধীন যেসব সদস্য ইউপিডিএফের মতো একটি সশস্ত্র গোষ্ঠির সাথে বৈঠক করেছে তাদের উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন উঠছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে।

সিএইচটি রিসার্চ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও পার্বত্যনিউজের সম্পাদক এ প্রসঙ্গে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ইউপিডিএফ কোনো রাজনৈতিক দল নয়, একটি আঞ্চলিক সন্ত্রাসী সংগঠন। প্রতিদিন যারা পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, খুন, ধর্ষণ, আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে বন্দুকযুদ্ধে লিপ্ত হচ্ছে। যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশের অখণ্ডতা ও নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যাপক অপপ্রচার চালাচ্ছে।

এহেন একটি সংগঠনের সাথে ঐকমত্য কমিশন কী করে বৈঠক করতে পারে? এটা তো সংস্কার প্রস্তাব গ্রহণ বিষয়ক বৈঠক নয়। ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক। এই বৈঠকের মধ্য দিয়ে ইউপিডিএফ যে রাজনৈতিক স্বীকৃতি অর্জন করলো তার দায় কে নেবে? এখন জেএসএস, ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক, জেএসএস সংস্কার, এমএনপি, কেএনএফ যদি বৈঠক করতে চায়- এরা কি তাদের সাথে বৈঠক করবে?’

এ প্রসঙ্গে এম. এস. চৌধুরী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘সাদা শার্ট পরাগুলো সবাই বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব এবং অখন্ডতা বিরোধী, টেবিল এর অপর পাশে যারা আছেন সবার বিদেশি পাসপোর্ট বা গভীর বিদেশি কানেকশন আছে! জাতি হিসেবে আমরা এমন পরিস্থিতিতে কিভাবে পৌঁছালাম? এখানে কিসের ঐক্যমত্য হচ্ছে? এটার ম্যান্ডেট কি? এখানে যা সিদ্ধান্ত হবে সেখানে দেশের প্রায় ১৮ কোটি জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটবে?’

একেএম মহসিন নামের একজন লিখেছেন, ‘উগ্র জাতীয়তাবাদী হটকারী, দেশদ্রোহী ডাকাত বাহিনীর সাথে যারা বৈঠকে বসেছে তারা কি পাহাড়ে রাজনৈতিক ইতিহাস জানেন? পার্বত্য চট্রগ্রামের জাতীসত্বা সমুহের আত্ব্যনিয়ন্তের অধিকার আদায় আর বিছিন্নতাবাদী সশ্রস্র সংগ্রাম তাও আবার ভারতীয় সাহায্য সহযোগিতায় এক বিষয় না।’

রিয়াজুল হাসান নামের একজন তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের তথাকথিত আঞ্চলিক সংগঠনসমূহ—যেমন জেএসএস, ইউপিডিএফ, কেএনএফ ইত্যাদি-সবই মূলত একটি বৃহত্তর ভারতীয় এজেন্ডার অংশ। এই এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তারা সময়ে সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল করে তোলে, যাতে দেশের নিরাপত্তা ও অখণ্ডতা বিঘ্নিত হয়।

তাদের মনে রাখা উচিত—বাংলার মানুষ স্বাধীনতা শুধু অর্জনই করেনি, প্রয়োজনে তা রক্ষা করতেও জানে। আর যারা এদের প্রতি অকারণে সহানুভূতি দেখায় বা নরম মনোভাব পোষণ করে, তারা হয় স্বার্থান্ধ, নারীলোভী অথবা সরাসরি দেশদ্রোহী। দেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে কোনো আপস নেই—এই বিষয়টি আমাদের সবাইকে দৃঢ়ভাবে মনে রাখতে হবে।’

পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ (পিসিসিপি), রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি মো: আলমগীর হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফ নামক এই বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনটি পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালিদেরকে উৎখাতের মাধ্যমে চাকমা অধ্যুষিত জনগোষ্ঠীর কিছু ব্যক্তির নেতৃত্বে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী আগ্রাসনের নেতৃত্ব দিচ্ছে।

তাদের মূল উদ্দেশ্য পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ হতে বিচ্ছিন্ন করা এবং বাঙালি সহ অন্যান্য উপজাতি সমূহ যেমন মারমা, তনচংগ্যা, ত্রিপুরা, বম ইত্যাদি জনগোষ্ঠীকে অবদমিত করা। বাংলাদেশের সর্বাধিক সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও নিরীহ জনগণ হত্যা এবং দেশকে বিভক্ত করার প্রধান কারিগর হিসেবে সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফ কে নিষিদ্ধ করা হোক। কোন অবস্থাতেই এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেনা। তাদেরকে রাজনৈতিক পুনর্বাসনের যেকোনো প্রচেষ্টা রুখে দিবে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ পিসিসিপি এর ডাকে পাহাড়ের ছাত্র-জনতা।’

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ইউপিডিএফ, ঐকমত্য কমিশন
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন