ইউপিডিএফ নিষিদ্ধে ৩ দফা দাবিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র সংসদের বিক্ষোভ


পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বিদ্যমান শান্তি ও সম্প্রীতির ঐতিহ্য হুমকির মুখে। ১৯৯৭ সালের বিতর্কিত পার্বত্য শান্তি চুক্তির সুযোগ নিয়ে এবং বিগত আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক ২০০৯ সালে
পার্বত্য অঞ্চলের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ স্থান থেকে ২৪২টি সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহারের পর, চাকমা, মারমা, ত্রিপুরাসহ অন্যান্য জনগোষ্ঠীর সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফ এবং জেএসএস-এর মতো সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো পাহাড়ের স্বাভাবিক সৌন্দর্যকে বিনষ্ট করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
এই সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো চাঁদাবাজি, অপহরণ, খুন, লুটপাট ও টেন্ডারবাজির মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলকে ক্রমাগত অস্থিতিশীল করে তুলছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, এসব চাঁদাবাজ চক্র প্রতি বছর ৬০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে। এই চাঁদাবাজির আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তারা নিজেদের মধ্যেও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে, যার ফলস্বরূপ পার্বত্য চট্টগ্রাম রক্তাক্ত জনপদে পরিণত হয়েছে।
অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় এই যে, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রহস্যজনক ভূমিকার অংশ হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফ-এর সাথে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকের প্রতিবাদে আজ রবিবার (১৩ মে) বিকেল ৫টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র সংসদ।
সমাবেশে সংসদের সভাপতি রফিকুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “ভারতের ‘র’-এর পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত এবং বাংলাদেশ, ভারত ও আরাকানে বিস্তৃত ইউপিডিএফের মতো একটি ত্রিদেশীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠনের সাথে অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কীভাবে বৈঠক করার নৈতিক সাহস পেল, তা আমাদের বোধগম্য নয়।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্য,বাঙালি সাধারণ জনগণ, চাকমা, মারমা, ত্রিপুরাসহ অন্যান্য জনগোষ্ঠীর বহু নিরীহ মানুষের রক্ত যাদের হাতে, সেই সন্ত্রাসীদের সাথে বৈঠক অত্যন্ত উদ্বেগজনক।”
তিনি আরও বলেন, “এই বৈঠকের মাধ্যমে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি ঐকমত্য কমিশনের ভূমিকা ও দায়বদ্ধতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। অতএব, ঐকমত্য কমিশনের যেসব সদস্যের সহায়তায় ইউপিডিএফকে রাজনৈতিক সংগঠনের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে, তাদেরকে অতি দ্রুত অপসারণ ও আইনের আওতায় আনতে হবে।”
সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী মারুফ বলেন, “রোহিঙ্গা গণহত্যায় জড়িত আরাকান আর্মির সহযোগী সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফকে রাজনৈতিক স্বীকৃতি প্রদান মানে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বায়ত্তশাসনকে স্বীকৃতি দেওয়া একই কথা। এর পরবর্তী ধাপই হলো বিচ্ছিন্নতাবাদীদের স্বপ্নের জুম্মল্যান্ড গঠন।
ইউপিডিএফ-এর সাথে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে বিচ্ছিন্নতাবাদকেই উস্কে দেওয়া হয়েছে। অবিলম্বে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দোসরদেরকে ঐকমত্য কমিশন থেকে অপসারণ করতে হবে।
যাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদদে একটি চিহ্নিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী, যারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো জঘন্য অপরাধ এবং গুম-খুনের সাথে সরাসরি জড়িত, তাদেরকে আইনের আওতায় না এনে রাষ্ট্রীয়ভাবে আপ্যায়ন করা রাষ্ট্রের সাথে প্রহসনের শামিল।”
সমাবেশ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি নিম্নলিখিত ৩ দফা দাবি জানানো হয়: ১. সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফ-এর সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। ২. ঐকমত্য কমিশনে যারা ইউপিডিএফ-এর মতো বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সহযোগিতা করছে, তাদের অপসারণ করতে হবে।
৩. বিগত আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক প্রত্যাহারকৃত ২৪২টি সেনা ক্যাম্প পুনঃস্থাপন করতে হবে এবং বাংলাদেশের অখণ্ডতা রক্ষা ও পার্বত্য অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনে বিশেষ বা আধা-সামরিক বাহিনী মোতায়েন করতে হবে।