দীঘিনালায় ইটভাটায় বনের কাঠ, বিপন্ন হচ্ছে প্রাণী ও প্রকৃতি

fec-image

সরকারি নিয়মের তোয়াক্কা না করেই খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় তিনটি ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছে বনের কাঠ। লোকালয় এবং কৃষি জমির পাশেই গড়ে তোলা হয়েছে পরিবেশ বিপর্যয়কারী এসব ভাটা। নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও বন উজাড় করে এসব ইটভাটায় প্রকাশ্যে পোড়ানো হচ্ছে হাজার হাজার মণ অশ্রেণিভুক্ত বনের কাঠ। ফলে বিনষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। বিপন্ন হচ্ছে প্রাণী ও প্রকৃতি।

জেলার দীঘিনালার বাবুছড়া সড়ক ঘেষে পুলিন হেডম্যান পাড়ায় গড়ে তোলা হয়েছে হাজী ব্রিকস। ইট প্রস্তুত ও ভাটা নিয়ন্ত্রণ আইনে লোকালয় ও কৃষি জমির পাশে ইট ভাটা স্থাপনে নিয়ম না থাকলেও তা তোয়াক্কা করা হয়নি। ভাটায় শতভাগ কয়লা ব্যবহার করার কথা থাকলেও প্রবেশমুখে রাখা হয়েছে লোক দেখানোর কয়লার ছোট স্তপ। অন্যদিকে প্রতিঘন্টায় চাঁদের গাড়িতে (জীপ) করে ডুকছে বনের কাঠবাহী গাড়ি। প্রতিটি গাড়িতে বহন করা হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ মণ কাঠ।

অভিযোগ রয়েছে, পাহাড়ের অশ্রেণিভুক্ত বন থেকে আম, কাঁঠাল, গামারিসহ বিভিন্ন প্রজাতি গাছ কেটে নিয়ে আসা হচ্ছে ইট ভাটায়। এক শ্রেণির দালাল ইটভাটায় এসব বনের কাঠ সরবরাহ করে। অথচ বন বিভাগের অনুমতি ছাড়া পাহাড় থেকে গাছ কাটা বা পরিবহন সর্ম্পূণ নিষেধ। মৌসুমে প্রতিটি ইটভাটায় পোড়ানো হয় অন্তত ৪০ হাজার মণ কাঠ। উপজেলার অন্য দুইটি ইটভাটাতে কয়লার পরিবর্তে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ ।

ভাটায় কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা জানান, ‘এসব কাঠ পাহাড় থেকে আনা হয়। আম, কাঁঠাল, গামারি, উদালসহ বিভিন্ন কাঠ পোড়ানো হয়। পাহাড় থেকে চুক্তি অনুযায়ী বন কেনা হয়। সেসব কাঠ কেটে ভাটায় নিয়ে আসা হয়। আগামী ৬ মাস কাঠ এভাবেই কাঠ সংগ্রহ করা হবে।

বনের কাঠ পোড়ানোর পাশাপাশি ইট প্রস্তুত ও ভাটা নিয়ন্ত্রণ আইন উপেক্ষা করে কৃষি জমি ও লোকালয় ঘেঁষে গড়ে তোলা হয়েছে ইটভাটা। এতে বিনষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। খাগড়াছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী বলেন, ‘ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো নিষিদ্ধ থাকলে তা মানছেন না ভাটা মালিকেরা। প্রচলিত আইনে তোয়াক্কা না করে ভাটা মালিকেরা প্রকাশ্যে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটাচ্ছে। বন ধ্বংস করার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এর জন্য প্রশাসনের উদাসীনতা দায়ী। পরিবেশ রক্ষা আইনের কঠোর প্রয়োগ করা হলে ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো বন্ধ হবে। কাঠের পরিবর্তে কয়লা পোড়ানোর জন্য ভাটা মালিকদের বাধ্য করা হবে।

তবে প্রকাশ্যে কাঠ পোড়ালেও তা অস্বীকার করছে ভাটা মালিকেরা। হাজী ব্রিকসের মালিক মো. নাসির উদ্দিন জানান, ‘আমাদেরকে প্রশাসন বলেছে কয়লা পোড়াতে আমরা কয়লা ব্যবহার করছি। কাঠ রাখা হয়েছে চুলায় আগুন দেয়ার জন্য। আপনি আসলে দেখবেন আমার এখানে কয়লা মজুদ রাখা হয়েছে। ’

খাগড়াছড়ি বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সরোয়ার আলম জানান, বনের কাঠ ইটভাটায় পোড়ানো বন্ধে টাস্কফোর্স করে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

তিনি বলেন, ‘পার্বত্য এলাকায় বন বিভাগের অনুমোদন ছাড়া কোন কাঠ কর্তন ও পরিবহন সর্ম্পূণ নিষিদ্ধ। জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নেতৃত্বে টাস্কফোর্সের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করে ইটভাটার অনিয়ম বন্ধ রাখতে হবে।

জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস জানান, প্রশাসন বনের কাঠ পুড়িয়ে কেউ ভাটা চালালে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হবে। তিনি বলেন, আমরা ভাটা মালিকদের ইতোমধ্যে সাবধাণ করেছি বনের কাঠ না পুড়িয়ে কয়লা ব্যবহার করার জন্য। গত বছর বেআইনীভাবে ভাটা চালানোয় বিভিন্ন ভাটায় ৪০ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে । এবার কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।’

পরিবেশ রক্ষায় আইন না মেনে চলা ইটভাটার বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান পরিচালনার দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ইটভাটা, খাগড়াছড়ি, জেলা প্রশাসক
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন