ইরানে ইসরাইলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে ঢাকায় সমাবেশ

fec-image

 

ইরানে ইসরাইলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে আজ রাজধানী ঢাকায় বাদ জুম্মা সমাবেশ ও রেলি অনুষ্ঠিত হয়েছে । র‍্যালিটি রাজধানীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেন্ট্রাল মসজিদের সামনে থেকে কলাভবন, শ্যাডো এবং মলচত্ত্বর অতিক্রম করে রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে পৌঁছায়।

সাধারণ শিক্ষার্থী এবং শান্তি ও ঐক্যকামী নাগরিকদের আহ্বানে এ প্রতিবাদ সমাবেশ ও রেলি অনুষ্ঠিত হয়।

বিগত ১৩ জুন সকালে ইসরায়েল ‘Operation Rising Lion’ নামে পরিকল্পিত এবং কাপুরুষোচিত গুপ্তহত্যা চালায়, যাতে শহীদ হন IRGC প্রধান হোসেইন সালামি, সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মাদ বাকেরি, খাতামুন আম্বিয়া কেন্দ্রীয় সদর দপ্তরের কমান্ডার গোলাম আলী রাশিদ, IRGC বিমান কমিশনার আমির আলি হাজিযাদেহ ও ড্রোন ইউনিটের তাহেরপোর ও দাউদ শেখিয়ান।

শহীদ হন পরমাণু বিজ্ঞানী ফেরেদুন আব্বাসি, মোহাম্মাদ মেহদি তেহরানচি, আব্দুল হামিদ মিনোচেহার, আহমাদ রেজা জোলফেগারি, সায়েদ আমির হোসেন ফাকহি, মোতলাবিজাদেহ- মোট ছয়জন বিজ্ঞানী। একই সাথে বেসামরিক জনগণের মধ্যেও শতাধিক নারী-শিশু-বৃদ্ধ শহীদ হয়েছেন।

এরকমই এক পরিস্থিতিতে, আজ ২০ জুন, ২০২৫ রোজ শুক্রবার বাদ জুম্মা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল মসজিদ থেকে বের হওয়া ইরানের উপর সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ এবং মানবতা ও উম্মাহর ঐক্যের পথ মিছিল আয়োজিত হয়েছে যাতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেনী-পেশা এবং বয়সের মানুষ অংশ গ্রহণ করেন।

ঐক্য ও সংহতি মিছিলটি কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাস পরিভ্রমণ করে রাজু ভাস্কর্যে পৌঁছে। সেখানে বক্তৃতা দেন, সাধারণ সম্পাদক, আল কুদস কমিটি বাংলাদেশ- জনাব মোস্তফা তারেকুল হাসান। ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ(আপ বাংলাদেশ) এর সদস্য সচীব মোহাম্মদ হিজবুল্লাহ, বিশিষ্টি ইসলামী অর্থচিন্তাবিদ মোহাইমিন পাটোয়ারী, ডিরেক্টর, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাবিশিষ্ট গবেষক এবং এক্টিভিস্ট নুরে আলম মাসুদ।

উক্ত আয়োজনে বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে বিভিন্ন বয়স, মত ও পেশার মানুষ উপস্থিত হন এবং মূহুরমুহু স্লোগান এবং আল্লাহু আকবর তাকবীরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসকে প্রকম্পিত করেন। কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি কলাভবন, শ্যাডো এবং মলচত্ত্বর অতিক্রম করে রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে পৌঁছায়।

আল কুদস কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা তারেকুল হাসান বলেন, “আমেরিকা যদি ইরানকে আক্রমণ করে তবে তার জবাব দেওয়ার জন্য তেহরান প্রস্তুত আছে।” তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের আপামর জনগণ এই লড়াইতে নৈতিকভাবে ইরানের সাথেই আছে। তাদের এবং ফিলিস্তিনের মজলুমদের জন্যে আমাদের নিরন্তর দোয়া।

ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আলী খামেনীর উক্তিটি আমাদের সামনে তুলে ধরেন, “আমার শরীরের দাম নেই, ইরানের দাম নেই। দাম রয়েছে ইসলামের” উদ্ধৃত করে তিনি আরো বলেন, “আমরা ইরানকে পূর্ণাঙ্গ শক্তিতে দেখতে চাই। ইসলামের পতাকাকে উড্ডীন রাখার জন্য ইরান তার সকল শক্তি দিয়ে ইজরায়েলকে প্রতিহত করবে, ইনশাআল্লাহ।

ইউনাইটেড ফর বাংলাদেশের সদস্য সচীব মোহাম্মদ হিজবুল্লাহ বলেন, ” এই লড়াইতে ইরান একা।সারা দুনিয়ার বুকে এক ইরানই লড়াই করে যাচ্ছে।আমরা ইরানের সাথে আছি।ইরানের সাথে এবং গাজার মজলুম জনগনের সাথে সংহতি জানাচ্ছি।”

রাজু ভাস্কর্যে আয়োজিত সমাবেশে,  মুসলিম বিন হাই বলেন, “ইরান যেকোনো ধরনের সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে মোকাবিলা করার প্রস্তুতি আগেই নিয়ে রেখেছিল। আর, আরবের অন্যান্য রাষ্ট্রগুলো এখনো আমেরিকার পা চাটা নীতিতে অটল রয়েছে।”

নুরে আলম মাসুদ বলেন, “শিয়া সুন্নি ঐক্য দুটা আলাদা দুটা গ্রুপের ঐক্য নয়, বরং নিজ ভাইয়ে ভাইয়ে ঐক্য।ভাই ভাইয়ে ভুল বোঝাবুঝি দূর করা।…।চিৎকার চ্যাচামেচির ওয়াজে কাজ হয়না, কিন্তু আমরা সবাই খো …।

কতিপয় মানুষ এবং মিডিয়া তথ্য সন্ত্রাসের মাধ্যমে মানুষকে হতাশ করে,তারা বলে, ইরান মনে হয় পারবে না, ইরান মনে হয় খতম হয়ে গেল, আমেরিকা মনে হয় চলে আসলো,পারমানবিক বোমা মেরে দিলো। কিন্তু আমরা তাদেরকে বলতে চাই,আমরা এসব কথার পরোয়া করি না।

আপনাদের দায়িত্ব হচ্ছে, সোশাল মিডিয়াতে আপনারা সচেতনার কাজগুলো করুন। বিভক্তিমূলক কথাগুলোতে ঢুকবেন না। উস্কানিমূলক কথা এবং আকিদার আলাপে আপনারা জড়াবেন না।

ইরানের মাদ্রাসা আজজাহরাতে অধ্যয়নরত নারী শিক্ষার্থী মাহমুদা সুমাইয়া বুশরা বলেন,  “আজ এখানে একজন মুসলিম হিসাবে ইরানকে সংহতি জানাতে, ফিলিস্তিনের পক্ষে নিজের মানবিক ও ইমানি দায়িত্ব থেকে অবস্থান করেছি।

নিসন্দেহে ইজরাইলের পতন খুব নিকটে কারণ ইজরাইল ভুল ব্যক্তির সাথে শত্রুতা করছে, ইজরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা সাহসী নেতা  সৈয়দ আলী খামেনায়ী (হা.) ইমাম হুসাইন-এর শিক্ষায় শিক্ষিত তাই আমরা কেবল শক্তির জোরে নয়, ইমান এবং শাহাদাতের জোরে ইসলামের বিজয় নিশ্চিত করব এবং

ফিলিস্তিন কে মুক্ত করব বলে বিশ্বাসী ইনশাআল্লাহ!  আমি একজন ক্ষুদ্র মুসলিম নাগরিক হিসাবে পুরো বাংলাদেশবাসী এবং বিশ্ববাসী কে ইরান কে সহযোগীতা এবং ফিলিস্তিন কে মুক্ত করার এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার আহবান জানাচ্ছি। নিসন্দেহে শিয়া-সুন্নির বিদ্বেষ হচ্ছে ইহুদী দের চক্রান্ত তাই ফাদ থেকে বাচতে হলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। মুসলিম উম্মাহর ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সর্বোচ্চ সময় এটাই!”

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন