ঈদগাঁওতে একমাত্র উপার্জনক্ষম সন্তানকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ বৃদ্ধ পিতা
কক্সবাজারের ঈদগাঁওতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাসাধিককাল পর মিল আরো এক শহীদের তথ্য। আওয়ামী সন্ত্রাসী ও প্রশাসনের হয়রানির ভয়ে গোপনে দাফন করে তারা এতদিন ঘটনাটি বুকে চাপা দিয়ে রাখে। নিহত শহীদের নাম নুরুল আমিন। তার পিতার নাম ছৈয়দ নুর, মাতার নাম মৃত আমেনা খাতুন। সে কক্সবাজার জেলার ঈদগাঁও উপজেলার ইসলামাবাদ ইউনিয়নের পূর্ব গজালিয়া ঢালার মুখ এলাকার বাসিন্দা।
নিহত শহীদ নুরুল আমিনের ভাই মুসলিম উদ্দিন কান্না জড়িত কণ্ঠে ফোনে জানান, নুরুল আমিন মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। কিন্তু তার পড়াশোনা খরচ বহন করতে পারি না বলে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়।
পরে সে চট্টগ্রাম শহরে একটি ভাতের হোটেলে মাসিক চাকরি নেয়। তবে তার এই বেতনে অসুস্থ বাবার চিকিৎসা ও পরিবারের ভরণপোষণ চালানো চরম কষ্ট সাধ্য ছিল। যার কারণে নিরুপায় হয়ে ধারদেনা করে তাকে বিদেশ পাঠানোর সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হচ্ছিল। সে ঘটনার আগে কক্সবাজার এসে ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে গত ২২ আগস্ট আবারও তার কর্মস্থল যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন। ঐদিন চট্টগ্রাম পৌঁছেই আন্দোলনরত বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার মিছিলে যোগ দেন। এসময় চারদিক থেকে পুলিশ রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ছোঁড়ে। সেই সাথে আওয়ামী ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের আক্রমণের মুখে গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও আঘাতের কারণে উদ্ধার পরবর্তী চিকিৎসারত অবস্থায় (৩০ আগস্ট) মঙ্গলবার ভোর ৪টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করে। মৃত্যু পরবর্তী লাশটি আওয়ামী সন্ত্রাসী ও প্রশাসনের হয়রানির ভয়ে গোপনে এনে দাফন করে ফেলে।
এই বিষয়ে ঈদগাঁও উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জড়িত হাফেজ শাহেদ মোস্তফা ও আবদুল্লাহর সাথে কথা হলে জানান , আমরা ইতোমধ্যে অবগত হয়েছি ছাত্র আন্দোলনে আহত হয়ে ইসলামাবাদ গজালিয়ার নুরুল আমিন মৃত্যু বরণ করেন। কিন্তু পরিবারটি স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হয়রানির ভয়ে তারা মৃত্যুর ঘটনা গোপন রেখেছিলেন। তারা ইতিমধ্যে এ বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছেন।
শহীদ নুরুল আমিনের অসুস্থ বৃদ্ধ বাবা ছৈয়দ নূর নির্বাক অশ্রুতে ছেলে হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন। ওই এলাকার বাসিন্দা আবু হেনা, শিক্ষার্থী রেজাউল করিম, লিয়াকত হোসেন, জুবাইদুল ইসলামসহ অনেকে বলেন পরিবারটি খুবই দরিদ্র। একমাত্র উপার্জনকারী নুরুল আমিন শহীদ হয়ে যাওয়ায় পুরো পরিবার অনিশ্চিত জীবনের মুখে। পরিবারটির পাশে সরকার এবং সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসা উচিত ।