ঈদগাঁও ইউএনও’র বিরুদ্ধে গোপনে আ.লীগের সাথে বৈঠক ও স্কুলের অচলাবস্থা বজায় রাখার অভিযোগে স্মারকলিপি

fec-image

কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুবল চাকমার বিরুদ্ধে পতিত স্বৈরশাসক আওয়ামীলীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের দোসরদের সাথে নিয়মিত গোপন বৈঠক ও ঈদগাহ আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের অচলাবস্থা ইচ্ছাকৃত ভাবে জিইয়ের রাখাসহ নানা অভিযোগে নবাগত জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি পেশ করেছেন বিদ্যালয়ে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষকবৃন্দ।এসময় তাদের সাথে সাংবাদিক, শিক্ষক ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন।

বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকালে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে নবাগত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিনের হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন ঈদগাহ আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের এমপিওভূক্ত শিক্ষকদের পক্ষে সিনিয়র শিক্ষক মো: রেজাউল করিম,মো:আশিকুর রহমান ও আবদুল্লাহ আল নোমান। এসময় উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক মমতাজ উদ্দিন বাহারী,সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজার সভাপতি এডভোকেট জিএম আশেক উল্লাহ,বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রতিনিধি এডভোকেট ফারুকসহ গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ।

এসময় প্রতিনিধিরা নবাগত জেলা প্রশাসক মো: সালাহ উদ্দিন লকে ঈদগাঁও উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ঈদগাহ আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের বিদ্যালয়ের চলমান অচলাবস্থা অব্যাহত রাখার পেছনে ঈদগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবল চাকমার রহস্যময় ভুমিকা রয়েছে বলে দাবি করেন।

ইতিপূর্বে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী,শিক্ষক,অভিভাবক,সচেতন মহল ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের তীব্র আন্দোলনের মুখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবল চাকমা অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক খুরশীদুল জন্নাতকে সাময়ীক কর্মবিরতিতে পাঠাতে বাধ্য হন এবং উক্ত অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন করার বিষয়টিও ওনারা নবাগত জেলা প্রশাসককে তুলে ধরেন।

এছাড়া উক্ত স্মারকলিপি থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, গত ২৫ আগস্ট বিদ্যালয়ের একদল প্রাক্তন শিক্ষার্থী প্রধান শিক্ষক খুরশীদুল জন্নাতের সাথে বৈঠক করে বিভিন্ন দফা ও দাবী উত্থাপন করে। নির্ধারিত তারিখের মধ্যে উক্ত দাবি পূরণ না হলে তারা তাকে পদত্যাগের অনুরোধ জানায়। এতে তিনি কর্ণপাত না করলে ২৭ আগস্ট প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা তার পদত্যাগের দাবিতে স্কুল গেইট ও ঈদগাঁও বাস স্টেশনে মানববন্ধন করে এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর স্মারকলিপি ও স্থানীয় সেনাবাহিনীকে বিষয়টি অবহিত করে।

২৯ আগস্ট অধ্যয়নরত প্রতিবাদী শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন শুরু করে।

১ সেপ্টেম্বর শিক্ষার্থীরা একই দাবিতে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে বিক্ষোভ মিছিল সহকারে চট্টগ্রাম- কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করে। এসময় সড়কের উভয় পাশে শত গাড়ি আটকা পড়ে। ৪ /৫ ঘন্টা ব্যাপী সড়কে সকল প্রকার যান চলাচল বন্ধ থাকে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ঈদগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবল চাকমা বিদ্যালয়ের কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষক, অভিভাবক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক খুরশীদুল জন্নাতকে কর্মবিরতিতে পাঠান এবং তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেন। তবে তাৎক্ষণিক তদন্ত কমিটির সদস্যদের নাম ঘোষণা করেনি। অভিযোগ দাখিলের জন্য তিনি একটি ‘অভিযোগ বক্স’ স্থাপনের কথাও জানান।

এ সংক্রান্ত অফিস আদেশে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরবর্তী কর্মদিবস তথা ২ সেপ্টেম্বর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিয়োগের কথাও উল্লেখ করেন।

কিন্তু অদ্যাবধি তিনি তার উল্লেখিত আদেশ বাস্তবায়ন করতে পারেননি। ফলস্রুতিতে বিদ্যালয়ের একাডেমিক- প্রশাসনিক সহ সার্বিক কার্যক্রমে চরম অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। শিক্ষক- কর্মচারীরা এখনো আগস্ট মাসের বেতন- ভাতা পাননি। ফলে দূর- দূরান্তের শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে।

এদিকে এমপিওভূক্ত সিংহভাগ শিক্ষকদের পক্ষ থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিয়োগের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর কতিপয় শিক্ষকের পক্ষে সম্মতিপত্র প্রদান ও একাধিকবার বৈঠকও করা হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিদ্যালয়ের অচলাবস্থা নিরসনে এখনো পর্যন্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অংশীজনরাও একাধিকবার উনার সাথে দেখা- সাক্ষাত করে দ্রুত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানান। তথাপি তিনি অজ্ঞাত কারণে অচলাবস্থা জিইয়ে রেখেছেন।

এতে আরো উল্লেখ করা হয়, উক্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবল চাকমা ক্ষমতাচ্যুত বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত। তাই তিনি এখনো গোপনে রাতের আধাঁরে আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে বৈঠকে বসছেন বলে লোকমুখে শোনা যাচ্ছে। তিনি বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থী, শিক্ষক, নির্বাচিত অভিভাবক- অভিভাবিকা (প্রধান শিক্ষকের ইঙ্গিতে মামলার কারণে যারা এখনো দায়িত্ব পাননি) ও জন দাবীকে উপেক্ষা করে চলেছেন।

এমনকি বিগত স্বৈরাচার সরকারের দোসর হিসেবে পরিচিত প্রধান শিক্ষক খুরশীদুল জন্নাত ও তার অনুগত পরিচালনা পর্ষদের মাধ্যমে কর্মবিরতিতে থাকা অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে বহাল রাখার জন্য এখনো পর্যন্ত গড়িমসি করছেন। যা প্রাচীনতম এ বিদ্যালয়ের সার্বিক অগ্রযাত্রাকে চরমভাবে ব্যাহত করছে।

অথচ এমপিও ভূক্ত শিক্ষকরা উক্ত পরিচালনা পর্ষদের প্রতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট বারবার মৌখিক অনাস্থা জানিয়েছেন ইতিপূর্বে ।

এমতাবস্থায় শিক্ষক ও সব অংশীজনদের দাবি, অভিযুক্ত ও কর্মবিরতিতে থাকা প্রধান শিক্ষক খুরশীদুল জন্নাত ও তার দোসর হিসেবে চিহ্নিত কতিপয় শিক্ষকদের ব্যাতিরেকে সিংহভাগ শিক্ষকদের মধ্য থেকে সম্মতি প্রাপ্ত শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করে বিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রম সচল রাখার স্বার্থে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নবাগত জেলা প্রশাসকের তড়িৎ হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন