parbattanews

ঈদগাঁও মেহেরঘোনা রেঞ্জে বন্য হাতির বিচরণস্থল নিধনের মহোৎসব

কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের মেহের ঘোনা রেঞ্জের অধীন গভীর বনে পাহাড় নিধনের মহোৎসব চলছে বছরের পর বছর। খোদ এ বনজ সম্পদ ধ্বংসে মেতেছে রেঞ্জেরে সাথে সংশ্লিষ্টরা।দুর্গম পাহাড়ি বন এলাকায় পরিবেশ বিধ্বংসী এ মহোৎসব চললেও সংশ্লিষ্টরা অনৈতিক টাকার কারণে রক্ষক হয়েও ভক্ষকের ভুমিকা পালন করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে স্থানীয়রা।

সরেজমিনে দেখা যায়, মেহের ঘোনা রেঞ্জের অধীন মেহেরঘোনা বিটের আওতাভুক্ত বন অফিস থেকে পূর্বে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরত্বে দুর্গম পাহাড়ি বন এলাকা বরগুনার পাহাড়ি ছরার পানি চলাচলে বাঁধ সৃষ্টি করে পানি বন্দ করে।দিনের পর দিন পানিতে চুবিয়ে ছরার পাশের বিশালাকার পাহাড় পানিতে গলিয়ে তা মাটি আর বালি হিসেবে ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে উত্তোলন করে লাখো ঘনফুট বালি ও মাটির স্তুপ করে চিহ্নিত সংঘবদ্ধ চক্র। পরে স্তুপকৃত বালি-মাটি বিক্রি শেষ না হওয়া পর্যন্ত মেশিন ও অন্য সরঞ্জাম বনের মধ্যে গোপন স্থানে সরিয়ে নেয়।যাতে বনবিভাগ বা সাংবাদিকদের ফাঁকি দিতে পারে।

বনসম্পদ ধ্বংস করে উত্তোলন করা এসব বালি-মাটি জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় বিক্রি করতে সংঘবদ্ধ বনখেকোর দল দুর্গম উচু বন পাহাড় রাতারাতি কেটে ডাম্পার চলাচলের অতি ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা তৈরি করে। যাতে ঐস্থানে তাদের গাড়ি ছাড়া অন্য কোন গাড়ি পৌঁছতে না পারে। দুর্গম ও উঁচু পাহাড় হয়ে হেটে ঐস্থানে পৌঁছা প্রায় অসম্ভব মনে হয়েছে প্রতিবেদকের। ঐ বন এলাকাটি এতই দুর্গম যে, দিনের বেলায়ও কোন মানুষ একা ঐপথ বা পাহাড় দিয়ে চলাচল করতে ভয় করবে।

উক্ত বনজ সম্পদ ধ্বংসে নিয়োজিত কয়েকজন শ্রমিকের সাথে কথা হলে জানায়, এসব তারা স্থানীয় বন বিভাগের কর্মকর্তাদের মোটা অংকের টাকায় ম্যানেজ করে করছে।সংশ্লিষ্ট রেঞ্জ ও বিটের কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং ভিলেজের হেডম্যান প্রত্যেকে মোটা অংকের টাকা নিয়েছে এ বনখেকোদের কাছ থেকে।এমনকি যারা এসব নিয়ে বাঁধা সৃষ্টি করতে চায় তাদেরও ছলে বলে কৌশলে ম্যানেজ করে।

এ বন খেকোরা সাবেক ও বর্তমান ভিলেজার এবং হেডম্যানদের সন্তান।তাই তারা সহজেই বনকর্মকর্তাদের ম্যানেজ করতে সক্ষম। এমনকি উক্ত বন এলাকাটি এতই দূরত্বে এবং দুর্গম যে, যেখানে দিনের বেলায়ও হাতির অবাধ বিচরণ ঘটে।

সরেজমিনে দেখা যায়, এসব বালি-মাটি পরিবহনে বনদস্যুরা পাহাড় কেটে যে রাস্তা তৈরি করেছে, তার উপর এবং আশপাশে বন্য হাতির বেশ কিছু তাজা মল চোখে পড়ে।

স্থানীয় সচেতন মহল ও সাধারণ জনগণের অভিযোগ, এলাকার যেসব গরীব লোকদের মাথা গুজার ঠাই নেই, তারা যদি বন বিভাগের ছোট্ট জায়গায় একটা ঝুপড়ি ঘরও তৈরি করে, তখনি বন বিভাগ মুহুর্তেই তা উচ্ছেদ করে দিয়ে বন মামলায় হয়রানি করে। কিন্তু সংঘবদ্ধ এ বনদস্যুচক্র দীর্ঘ সময় ধরে ভিলেজার এবং হেডম্যানি নাম ভাঙ্গিয়ে এভাবে বনজসম্পদ তথা গাছ পালা উজাড় করার পর নিকটবর্তী বনপাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করে এবং পাহাড় বিক্রি করে অবৈধভাবে কালো টাকার মালিক হয়েছে। এতেও ক্ষান্ত না হয়ে এবার গভীর জঙ্গলের দুর্গম পাহাড়ে রাতারাতি পাহাড়ে রাস্তা তৈরি করে বন্য হাতি বিচরণ এলাকার পাহাড় নিধনের মহোৎসব শুরু করে দিয়েছে দীর্ঘদিন পূর্ব থেকে। তাদের কালো টাকার নেশায় এত ধ্বংসের পরেও সংশ্লিষ্ট রেঞ্জ ও বিট অফিসে কর্মরতদের ঘুম ভাঙ্গছে না।

এ ভূমিদস্যুরা শুধু বনজসম্পদ ধ্বংস করছেনা, তাদের মাটি এবং বালিবাহী ডাম্পারের বেপরোয়া চলাচলে সরকারের কোটি টাকায় নির্মিত এলাকার রাস্তাঘাট ধ্বংস করে ফেলছে প্রতিনিয়ত।তাই তারা বন্য হাতির বিচরণস্থল গভীর বনজসম্পদ রক্ষার স্বার্থে সরেজমিনে সত্যতার জন্য কক্সবাজার উত্তর বিভাগীয় বন কর্মকর্তার জরুরি পরিদর্শন কামনা করেছেন।

অবশিষ্ট বনজসম্পদ রক্ষায় রক্ষকরুপী ভক্ষক বন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে জরুরী ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

মেহের ঘোনা রেঞ্জ কর্মকর্তা মামুন মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বন এলাকাটি খুবই দুর্গম এবং উক্ত এলাকাটি মেহের ঘোনা ও ভোমরিয়াঘোনা রেঞ্জের যৌথ সীমান্ত। তিনি বিট কর্মকর্তার সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেবেন বলে জানান।

বিট কর্মকর্তা যাকেরের সাথে কথা হলে, তিনি নানা কৌশলে ঘটনা সত্য নয় বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে, সাক্ষাতে কথা বলবেন বলে জানান। প্রতিবেদকের হাতে উপরোক্ত তথ্য ছাড়া আরও বস্তুনিষ্ঠ তথ্য রয়েছে, যা পর্যায়ক্রমে প্রকাশ করা হবে।

Exit mobile version