ঈদের ছুটিতে পর্যটকের পদচারণায় মুখর সমুদ্রের নগরী কক্সবাজার


জোরদার নিরাপত্তা
ঈদের টানা ছুটির দ্বিতীয় দিনেও লাখো পর্যটকের পদচারণায় মুখর সৈকত নগরী কক্সবাজার। ঈদের আনন্দ উপভোগে পর্যটকদের পাশাপাশি সৈকতে ভিড় করছেন স্থানীয়রাও।
এদিকে কাঙ্ক্ষিত সংখ্যক পর্যটক সমাগম হওয়ায় খুশি হোটেল-মোটেলসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িরা। তারা বলছেন এর মধ্যে ৫ শতাধিক হোটেল-মোটেলের অন্তত ৮০ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে।
আজ থেকে আশা করা যায় শতভাগ হোটেল কক্ষ বুকিং থাকবে। পর্যটক আগমনের এই ঢল অব্যাহত থাকবে আগামী ৫ এপ্রিল পর্যন্ত। এদিকে আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা ও হয়রানি রোধে সার্বিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছেন, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা।
ঈদের তৃতীয় দিনে সকালে সমুদ্র সৈকতে গিয়ে দেখা যায়, সৈকতের সুগন্ধাসহ সবক’টি পয়েন্ট লোকে-লোকারণ্য। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে পর্যটকের আনাগোনা।
যেদিকে চোখ যায় শুধু মানুষ আর মানুষ। যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই বিস্তৃত বালিয়াড়ি’র সৈকতের কোথাও। তপ্ত রোদেও সৈকতে ভ্রমণ পিপাসু মানুষের মনে আনন্দ-উচ্ছাসের কমতি নেই। সৈকতে ঘুরতে আসা অধিকাংশ পর্যটকের গন্তব্য গোসলে নেমে সাগরের লোনাজলের স্পর্শ নেওয়া।
পর্যটকের ঈদ আনন্দের কাছে যেন হার মেনেছে সাগরের উত্তাল ঢেউও। কোলাহলময় যান্ত্রিক জীবনের অবসাদ কাটাতে ছুটে আসা ভ্রমন পিপাসুরা বলছেন, প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি কক্সবাজার ঘুরতে এসে তারা তৃপ্ত।
কক্সবাজার বেড়াতে আসা বাংলাদেশ টেলিভিশনের সঙ্গীতশিল্পী ছন্দা মৌলিক জানান, তিনি প্রথমবার কক্সবাজার এসেছেন। আসার আগে যেভাবে সমুদ্র সৈকতকে কল্পনা করেছেন এই দৃশ্য তার চেয়েও সুন্দর। এবার থেকে তিনি প্রতিবারই এখানে আসবেন। এমন সৌন্দর্য আর মিস করতে চাননা।
ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা নব দম্পতি’র সাইফুল ইসলাম জানান, এত কাছ থেকে আগে কখনো সমুদ্র দেখেনি। এই দৃশ্য খুবই ভাল লাগছে। এখানে না আসলে বুঝা যাবেনা
এটি কত সুন্দর। নিরাপত্তাও চমৎকার। তবে বাড়তি চাপের কারণে হোটেল ভাড়া আর খাবারের দাম একটু বেশি মনে হচ্ছে।
সিলেট থেকে বেড়াতে আসা সাইমা আক্তার জানান, উত্তাল সমুদ্রে গোসল করা এবং সাগরকে এত কাছ থেকে স্পর্শ করতে পারা সত্যিই অনেক আনন্দের। এখানে আসলে যে কারো মন ভাল হয়ে যাবে। পরিবারের সাথে বেড়াতে এসে এখানে কাটানো সময়গুলো স্মৃতি হয়ে থাকবে।
কাঙ্ক্ষিত সংখ্যক পর্যটক আসায় খুশি সাগরপাড়ের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে হোটেল-রেস্তোঁরা ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, ঈদের ছুটিতে কক্সবাজারে বিপুল সংখ্যক পর্যটক সমাগম ঘটেছে। তাদের সেবা নিশ্চিতের মধ্য দিয়ে পুষিয়ে উঠবে ক্ষতি।
কক্সবাজার বৃহত্তর বিচ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুর রহমান বলেন, তাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা থাকবে পর্যটকদের সেবার সাথে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ। পাশাপাশি রয়েছে পর্যটকদের কাছেও অনুরোধ রয়েছে অনৈতিক কোন কিছু প্রত্যাশা না করতে।
এতে বেড়াতে আসা পর্যটকরা যেমন বিপদে পড়ার আশংকা রয়েছে ঠিক তেমনি রয়েছে এই নগরীর সুনামও ক্ষুন্ন হওয়ার আশংকা। তিনি আরো বলেন, আগামী ৩-৪-৫ এপ্রিল এই তিন দিন শতভাগ হোটেল-মোটেল বুকিং থাকবে। সুতরাং কক্সবাজার আসার আগে অনলাইনে বুকিং দিয়ে আসলে ভাল হয়। নয়ত রুম নিতে ঝামেলায় পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সুতরাং বেড়াতে আসা পর্যটকদেরও একটু সর্তক থাকতে হবে।
এদিকে সমুদ্রে নেমে কোন পর্যটক যেন বিপদাপন্ন পরিস্থিতিতে না পড়েন সেজন্য সতর্ক দৃষ্টি রেখেছে লাইফগার্ড সদস্যরা। আর গোসলে জন্য পর্যটকদের নির্দেশনা মেনে সাগরে নামার পরামর্শ দিচ্ছেন।
কক্সবাজার সী সেইফ লাইফ গার্ডের সুপারভাইজার ওসমান গনি জানান, রমজানে প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে সী সেইফ লাইফ গার্ড আরো বেশি দক্ষ হয়ে উঠেছে পর্যটকদের সেবা প্রদানে।
গোসল করতে নেমে সাগরে ভেসে যাওয়া পর্যটকদের উদ্ধারের জন্য যুক্ত হয়েছে বেশকিছু নতুন বোটসহ সরঞ্জাম। অতি উৎসাহী অনেক পর্যটক তাদের নির্দেশনা শুনতে চায়না। এতে পর্যটকরা বিপদে পড়ে।
তিনি সকল পর্যটককে জানাতে চায় লাবণী-সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টে লাল-হলুদ পতাকার মাঝখানে গোসল করতে পারবে। ওখানে পর্যটকদের নিরাপত্তায় সী সেইফ লাইফ গার্ডের সদস্যরা অবস্থান করছেন। এছাড়া পর্যটকদের সর্তক থাকতে হবে যেন বিপদ সীমায় না যায়।
পর্যটক হয়রানি রোধে যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ ও জেলা প্রশাসন। কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (এডিআজি) আপেল মাহমুদ জানান, বিপুল সংখ্যক পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিতে ৩ স্থরের নিরাপত্তায় টহল জোরদার করা হয়েছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি অন্যান্য আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীও দায়িত্ব পালন করছে। রয়েছে সাদা পোষাকের টিম। হারিয়ে যাওয়া সন্তানকে পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়াসহ নেওয়া হয়েছে নানা নতুন পদক্ষেপ।
হোটেল বাড়তি দাম রাখলে নেওয়া হচ্ছে ব্যবস্থা। যানজট নিরসন ছাড়াও কেউ পর্যটক হয়রানী করলে কঠোর আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে। সবার প্রচেষ্টা একটাই, পর্যটকরা যেন নিরাপদ ভ্রমণ শেষে বাড়ি ফিরতে পারে।
কক্সবাজার শহরে থাকা সাড়ে ৫ শতাধিক হোটেল, রিসোর্ট, গেস্টহাউসে পর্যটক ধারণ ক্ষমতা দেড় লাখের বেশী।
সমুদ্র সৈকতের পাশাপাশি বিশ্বের দীর্ঘতম মেরিন ড্রাইভ, হিমছড়ি ঝর্ণা, ইনানী ও পাটুয়ারটেকের পাথুরে সৈকত, শহরের বার্মিজ মার্কেট, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্ক এবং রামুর বৌদ্ধ বিহার সহ কক্সবাজারের বিনোদন কেন্দ্রগুলো পর্যটকদের আনাগোনায় মুখরিত হয়ে উঠেছে।

















