উখিয়ায় আ. লীগের ইউপি চেয়ারম্যানের হাতে জিম্মি উপকূলের ৫০ হাজার বাসিন্দা

fec-image

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়ন, বঙ্গোপসাগরের উপকূল ঘেঁষা এই জনপদে প্রায় ৫০ হাজার বাসিন্দার বাস।

নৌকা প্রতীক নিয়ে ১১ নভেম্বর ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে যেখানে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এস এম সৈয়দ আলম।

আওয়ামী লীগের দলীয় চেয়ারম্যান হওয়ায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন তিনি, তার সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতিতে অতিষ্ট সাধারণ নাগরিকরা।

ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারি প্রকল্প থেকে শুরু করে সবখানেই সমানতালে দুর্নীতি করে যাচ্ছেন আলোচিত এই জনপ্রতিনিধি।

আশ্রয়ন প্রকল্প ২ এর আওতায় জালিয়াপালংয়ের ১৭৩ জন বাসিন্দা পেয়েছেন ঘর। ২০২৩ সালের মার্চে কার্যক্রমটির তৃতীয় পর্যায়ে জালিয়াপালং থেকে ৭৭ জন উপকারভোগী চূড়ান্ত করা হয়।

ঘর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কমপক্ষে ১০৮ জনের কাছে মাথাপিছু ১৫ হাজার থেকে শুরু মাথাপিছু ৩০ হাজার পর্যন্ত প্রায় ২০ লাখ টাকা অনৈতিকভাবে আদায় করেছেন এস এম সৈয়দ আলম।

অভিযোগ রয়েছে, বেশি টাকা প্রদান করা ৭৭ জন ঘর পেলেও বঞ্চিত থেকে গেছেন বাকিরা। এছাড়া স্থানীয় বাসিন্দা ইব্রাহীম, জব্বার, মোস্তাক সহ নিজের ডজনখানেক কথিত দালাল দিয়ে টাকা নিয়েছেন তিনি।

সংরক্ষিত ইউপি সদস্য রুজিনার আক্তার স্বামী মোস্তাককে ১৯ হাজার টাকা দেন ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আব্দুর রহিম।

রহিমের দাবী, স্ত্রীর জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকার অজুহাত দেখিয়ে ঘর দেওয়া হয়নি তাকে এবং মোস্তাক টাকা ফেরত দিচ্ছেন না।

মুঠোফোনে মোস্তাক ১০ হাজার টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে সে টাকা চেয়ারম্যান’কে দিয়েছেন বলে জানান।

মানবিক খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির অংশ হিসেবে জালিয়াপালংয়ে নিবন্ধিত ২০৭৫ জন জেলের জন্য ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে জনপ্রতি ৫৬ কেজি করে বরাদ্দ দেওয়া হয় ১১৬ মেট্রিক টন চাল।

জালিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে চালগুলো বিতরণ কার্যক্রম সম্পন্ন করে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ত্রাণ ও পুর্নবাসন শাখা।

বিতরণের সময় বরাদ্দকৃত অংশ থেকে জনপ্রতি ৬ কেজি করে চাল না দিয়ে জালিয়াপালংয়ের প্রত্যেক জেলেদের হাত ধরিয়ে দেওয়া হয় ৫০ কেজি ওজনের একটি চালের বস্তা।

কৌশলে হাতিয়ে নেওয়া এই চালের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১২ মেট্রিক টন, যার বাজার মূল্য আনুমানিক ৭ লাখ টাকা।

মোহাম্মদ আইয়ুব নামে স্থানীয় এক জেলে বলেন, “আমরা যা পেয়েছি তা পরিবার সামলানোর জন্য খুবই নগণ্য। অথচ রামুতে থাকা আমার এক আত্মীয় জেলে জানিয়েছে তারা ৬ কেজি বেশি পেয়েছে। আমাদের রিযিক যারা লুট করেছে, আল্লাহ তাদের হেদায়েত দিক।”

ইউপি চেয়ারম্যান তার সহচরদের সহযোগিতায় চালগুলো সরিয়ে সোনারপাড়া বাজারের নিজের বিশ্বস্ত এক আড়তদার কে বিক্রি করে দিয়েছেন বলে নির্ভরযোগ্য এক সূত্রে জানা গেছে।

ইউনিয়ন প্রশাসনিক কর্মকর্তা তরিকুল ইসলামকে তার পরিষদ সক্রান্ত এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি চট্টগ্রামে ছুটি কাটিয়ে অফিসে ফিরছেন বলে জানান এবং প্রতিবেদককে দেখা করতে যেতে বলেন।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হোসেন বলেন, ” জনপ্রতিনিধিরা যদি নাগরিকদের ভোগান্তিতে রাখেন তাহলে দেশের আইন ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় করণীয় পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ আছে। যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।”

এস এম সৈয়দ আলমের মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ করা হলেও অন্যপ্রান্ত থেকে কোন প্রকারের সাড়া মেলেনি।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: উখিয়া
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন