উখিয়া নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে তীব্র গুলির শব্দ, আতঙ্কে স্থানীয়রা

fec-image

কক্সবাজারের উখিয়া ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তর থেকে ভারী অস্ত্রের গোলাগুলির তীব্র শব্দ শোনা গেছে।

বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) সীমান্তসংলগ্ন একাধিক গ্রামে এই গোলাগুলির শব্দে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়রা জানান, থেমে থেমে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত এসব শব্দ শোনা গেছে। রাত ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত গুলির আওয়াজ সবচেয়ে বেশি ছিল।

উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের রহমতেরবিল, ধামনখালী, থাইংখালী, বালুখালী এবং নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু পশ্চিম পাড়াসহ অন্তত সাতটি সীমান্ত গ্রামজুড়ে রাতভর এই গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়।

থাইংখালীর স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রবাসী নাসির বলেন, “রাতে প্রচুর গুলির শব্দ শুনেছি। মনে হচ্ছে, ওপারে বড় ধরনের সংঘর্ষ চলছে। আগে কখনও এভাবে শব্দ শোনা যায়নি। গ্রামে এখন ভয় আর আতঙ্ক বিরাজ করছে। কখন না জানি কোনো গুলি এপারে এসে পড়ে।”

স্থানীয় ও রোহিঙ্গা ক্যাম্প–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মিয়ানমারের মংডু জেলার ঢেকুবনিয়া এলাকায় রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে রাখাইন-নিয়ন্ত্রিত বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মি এর সংঘর্ষ চলছে।
এ সময় সীমান্তবর্তী ১২ নম্বর অস্থায়ী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক রোহিঙ্গা আহত হয়েছেন—এমন দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুটি ছবি ছড়িয়ে পড়ে।

এ বিষয়ে পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছেন,“মিয়ানমারে তাদের অভ্যন্তরীণ গোলাগুলি চলছে, আর বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একজন গুলিবিদ্ধ। তাহলে আমরা কি নিরাপদ?”

তবে এসব তথ্যের সত্যতা এখনো নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র থেকে নিশ্চিত করা যায়নি। অতীতে এমন ঘটনা ঘটলেও বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) জানিয়েছে, সীমান্তের শূন্যরেখা থেকে অনেক দূরে, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। উখিয়া ব্যাটালিয়ন (৬৪ বিজিবি)-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, “আমরা সতর্ক অবস্থানে আছি এবং পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। বালুখালী বিওপি-সংলগ্ন সীমান্ত থেকে মিয়ানমারের দিকেই গুলির শব্দ এসেছে। টহল জোরদার করা হয়েছে।”

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গুলি আসার বিষয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের ভেতরে কোনো গুলি এসে পড়েছে এমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। সীমান্ত থেকে ক্যাম্পটি অনেক দূরে।”

রাখাইনে নতুন করে সংঘর্ষে উদ্বিগ্ন বিশ্লেষকরা কারণ সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘর্ষ তীব্র হয়েছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে আরাকান আর্মি দাবি করে, তারা রাখাইনের বিস্তীর্ণ এলাকা ও বাংলাদেশ সীমান্তসংলগ্ন প্রায় ২৭১ কিলোমিটার এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। তবে সামরিক জান্তা সম্প্রতি সেই নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারে অভিযান শুরু করেছে বলে জানা যায়।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাখাইনে আরাকান আর্মি ও রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ নতুন মাত্রা পেয়েছে, যা বাংলাদেশের সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগজনক। কারণ, সীমান্তের ওপারের প্রতিটি সংঘর্ষের প্রতিক্রিয়া এসে পড়ছে উখিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ির জনবসতিতে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: উখিয়া, নাইক্ষ্যংছড়ি, সীমান্ত আতঙ্ক
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন