parbattanews

উখিয়ার ক্যাম্পগুলো গাম্বিয়া গাম্বিয়া স্লোগানে মুখরিত: মসজিদে মসজিদে দোয়া মাহফিল

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের গণহত্যা, ধর্ষণ এবং সম্প্রদায় ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে গণহত্যামূলক কাজ করেছে বলে অভিযোগ এনে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া ১১ নভেম্বর আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে মামলা করেছে। মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) এ ইস্যুতে আদালতে শুনানি শুরু করে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার সকালে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইসিজে গণহত্যার বিচারের আগে ‘গাম্বিয়া, গাম্বিয়া’ স্লোগানে মুখর করে তোলেন রোহিঙ্গারা। সাইফুর রহমান নামে এক ব্যক্তি তার টুইটে এ স্লোগানের ভিডিও তুলে ধরেন। তবে প্রশাসনের কঠোর নির্দেশনা থাকায় ছোট্ট পরিসরে জমায়েত হলেও সংক্ষিপ্ত সময়ে তা শেষ করে ক্যাম্পের মসজিদে মসজিদে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেন রোহিঙ্গারা।

নেদারল্যান্ডসের হেগে আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিজে) গণহত্যার শুনানিকে কেন্দ্র করে মিছিল-সমাবেশের অনুমতি না পেয়ে ক্যাম্পের মসজিদ ও মাদ্রাসায় দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে রোহিঙ্গারা।

এর আগে মিছিল-সমাবেশের অনুমতি চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেছিল আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) নামে রোহিঙ্গা সংগঠন।

তবে ওই প্রতিষ্ঠানটিকে বড় ধরনের সমাবেশ করার অনুমতি দেয়নি সংশ্লিষ্টরা। তাই ক্যাম্পগুলোতে ছোট পরিসরে মসজিদ ও মাদ্রাসায় দোয়া মাহফিল চলছে।

অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে অং সান সু চির সমর্থনে মিয়ানমারে বিভিন্ন স্থানে মিছিল-সমাবেশ করেছে বৌদ্ধরা। এমনটি জানিয়েছেন একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম।

এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়, জেলা পুলিশ ও রোহিঙ্গাদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন এআরএসপিএইচ এর নেতারা।

সূত্রমতে, গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলার শুনানির জন্য ১০ ডিসেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথম ধাপে ১০ ডিসেম্বর শুনানি করবে গাম্বিয়া। আর ১১ ডিসেম্বর শুনানি করবে মিয়ানমার। এরপর ১২ ডিসেম্বর এক সঙ্গে দু’দেশে শুনানি হবে।

রোহিঙ্গা নেতারা জানায়, মঙ্গলবার সকাল থেকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে উখিয়ার কতুপালং, লম্বাশিয়া, সীমান্তের শূন্য রেখা, বালুখালী, তাজনিমারখোলা, ময়নারঘোনা এবং শফিউল্লাহ কাটাসহ বেশ কিছু ক্যাম্পের মসজিদ, স্কুল ও মাদ্রাসায় বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে শত শত রোহিঙ্গা ও শিশুরা অংশ নেয়।

নাম না বলার শর্তে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) এক নেতা বলেন, আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিজে) রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার শুরু হতে যাচ্ছে। এই বিচার যথাযথ প্রক্রিয়ায় রোহিঙ্গাদের পক্ষে রায় পাওয়ার জন্য এখানে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কর্মসূচি পালনে কর্তৃপক্ষের অনুমতি না পেয়ে মোনাজাত ও দোয়া মাহফিল করছি। রোহিঙ্গাদের বিচার পেতে আল্লাহ যেন সহায় হন।

বালুখালী ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা নুরুল বাশার বলেন, রোহিঙ্গাদের এটি একটি বড় অর্জন যে, গণহত্যার মতো জঘন্য অপরাধের বিচারে মিয়ানমার স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচিকে কাঠগড়ায় বিচারের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তার জন্য গাম্বিয়াকে তিনি সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, রোহিঙ্গাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল মিয়ানমারের অপরাধ ও নির্যাতনের বিচারিক মুখোমুখি করতে। আজ তা হতে হচ্ছে।

তুমব্রু শূন্যরেখা রোহিঙ্গা শিবিরের নেতা দিল মোহাম্মদ বলেন, রোহিঙ্গা গণহত্যার দায়ে আইসিজে আদালতে বিচার শুরু হতে যাচ্ছে। রোহিঙ্গারা যাতে সুবিচার পায়, এজন্য এখন মসজিদে মসজিদে বিশেষ দোয়া মাহফিল চলছে। আল্লাহর কাছে দোয়া করছি যেন আত্মীয়-স্বজনদের হত্যার সুবিচার পায়। সকলে এ প্রত্যাশায় বুক বেঁধে আছে।

বাংলাদেশ শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে মিছিল-সমাবেশের অনুমতি চেয়েছে। তবে বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেখছেন।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে মিছিল-সমাবেশের অনুমতি চেয়েছিল কিন্তু দেওয়া হয়নি। এ বিচার নিয়ে যাতে ক্যাম্পে কোনও ধরনের অপ্রীতিকর অবস্থা সৃষ্টি না হয়, সেজন্য সংশ্লিষ্টরা সর্তক রয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ১১ নভেম্বর ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সমর্থনে গাম্বিয়া মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে মামলাটি করে। গাম্বিয়াও গণহত্যা সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ।

এ দিকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্মম নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর অল্প সময়ের মধ্যে রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে আসেন প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা। এর আগে থেকে এ দেশে অবস্থান করছিলেন আরও চার লাখ রোহিঙ্গা। সীমান্তবর্তী জেলা কক্সবাজারের প্রায় ৩৪টি শিবিরে বর্তমানে বসবাস করছে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা।

Exit mobile version