উখিয়ায় নিভু বাতিঘরে আলো জ্বালাতে স্থানীয়দের প্রাণান্তর চেষ্টা


দীর্ঘ একযুগ এলাকায় আলো বিচ্ছুরিত করেছে। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগে সেই আলোর বাতিঘরটিই নিভে যায়। কক্সবাজারের উখিয়ার ধামনখালীর স্থানীয় লোকজন প্রাণান্তকর চেষ্টা করেও দারিদ্রতার কারণে পারছে না পুনরায় সেই বাতিঘরের আলো জ্বালাতে।
উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের মধ্যখানে ধামনখালী গ্রাম। এ গ্রামসহ উত্তর রহমতের বিল, দক্ষিণ বালুখালী গ্রামসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে অন্তত তিন হাজার মানুষের বসবাস। এ গ্রামগুলোর মানুষদের যাতায়াতের রাস্তার যেমন বেহাল দশা, তেমনি জীবনযাত্রার মানও অনগ্রসর। এ সব এলাকার লোকজন অনেকদিন পর তাদের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে পারছেন।
উত্তর রহমতের বিল এলাকার বাসিন্দা ও স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সম্পাদক আলমগীর হোসেন মানিক জানান, মিয়ানমার সীমান্ত থেকে প্রায় আধা কিলোমিটারের মধ্যে এ গ্রামগুলোর অবস্থান। এখানকার মানুষের নাফ নদীতে মাছ শিকার ও কৃষি কাজ ছাড়া অন্য কোন আয় রোজগার নেই। তিনি জানান, এ কয়েকটি গ্রামের মানুষের অন্যতম চাহিদা ও দাবি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা।
স্থানীয় শিক্ষানুরাগী মো. ফজলুল হক বলেন, আসলেই আমাদের দুর্ভাগ্য। এ এলাকার ধামনখালী গ্রামের মাঝখানে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল। প্রায় ১২ বছর এ বিদ্যালয়ে নিয়মিত পাঠদান হয়েছে। এ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া অনেকে বর্তমানে সমাজে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু এলাকাবাসীর কপাল পোড়া। ২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত হওয়ার পর স্কুলটি আর চালু করা সম্ভব হয়নি বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, পালংখালী ইউনিয়নের তৎকালীন মেম্বার ও দানবীয় মরহুম রশীদ আহমদ মিয়া এলাকাবাসীর অনুরোধে এ এলাকায় একটি প্রাইমারি স্কুল প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসেন। যদিও তিনি ঐ ৯ নং ওয়ার্ড মেম্বার ছিলেন। কিন্তু ২ নং ওয়ার্ডের ধামনখালীতে স্কুল করতে তিনি ১৯৯৫ সালে রশীদিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে ৪০ শতক জমি ক্রয় করে রেজিস্ট্রি করে দেন। জমি দানপত্র করার পরও তিনি স্কুল ঘর নির্মাণে আর্থিক সহায়তাও দিয়েছিলেন বলে লোকজন জানান।
তৎকালীন ধামনখালী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র, যিনি বর্তমানে স্থানীয় থাইংখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. নুরুল আমিন। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর ২০০৭ সাল পর্যন্ত স্কুলটিতে নিয়মিত লেখাপড়া চলে। কিন্তু ২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত হলে সেটি এলাকাবাসী আর চালু করতে পারেনি। তিনি বলেন, স্কুলের জমি আছে, প্রয়োজন শুধু স্থানীয় লোকজনের আন্তরিকতা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের সহযোগিতা।
সরেজমিনে দেখা যায়, অধুনালুপ্ত ধামনখালী রশীদিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়টি পুনরায় চালু করতে মো. ফজলুল হকের নেতৃত্বে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে পুরাতন স্কুল যেখানে ছিল সেখানেই খুঁটি পুঁতে চালার কিছু কাঠও লাগানো হয়েছে। কিন্তু দরিদ্র এলাকাবাসী সামর্থ্যের অভাবে তা অগ্রসর করতে পারছে না বলে উদ্যোক্তা ফজলুল হক জানান।
স্থানীয় পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, এলাকার লোকজন এগিয়ে আসলে আমি যতটুকু সম্ভব স্কুলটি পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য সহযোগিতা দেব।
উখিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, ঐ এলাকায় একটি প্রাইমারি স্কুল খুবই প্রয়োজন। এক সময় স্কুল ছিল। যেটিকে নতুনভাবে পুনর্নির্মাণ করে চালু করা প্রয়োজন। উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, আশা করছি আগামী ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ঐ স্কুলে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করে লেখাপড়া চালু করতে পারবেন বলে তিনি বলেন। ওখানকার কয়েকটি গ্রামের ২/৩ শত স্কুলগমনোপযোগী শিশুর লেখাপড়া ব্যাহত হচ্ছে বলেও তিনি জানান।