ঘটনাস্থল পরিদর্শনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ

উখিয়ায় ফোর মার্ডার : আপেল নিয়ে রহস্য

fec-image

উখিয়ার রত্নাপালং ইউনিয়নের পূর্ব রত্না গ্রামে গত বুধবার রাতে শিশুসহ একই পরিবারের ৪ জনকে গলাকেটে নির্মম ভাবে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি সরকারি আইনশৃংখলা বাহিনী ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্তাব্যক্তিরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনার ক্লু বের করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে আসলেও কারো পক্ষে রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়ননি।

মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কেন্দ্রীয় ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সর্বস্বহারা প্রবাসি রোকন বড়ুয়ার দীর্ঘক্ষণ হত্যাকান্ড নিয়ে আলাপ হয়। আলাপচারিতায় উঠে আসে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য।

নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করে রোকন বড়ুয়া বলেন, প্রশাসন তাকে সার্বিক নিরাপত্তা দিলেও ঘাতক এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাওয়ায় সে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। রোকন বলেন, গত রবিবার ঘর পরিস্কার করার সময় আমার রুমে যেখানে আমার স্ত্রী মিলা বড়ুয়া খুন হয়েছে সেখানে চেয়ারের উপরে ১কেজি আপেল পাওয়া যায়। অথচ ঘটনার দিন কোটবাজার থেকে মিলা আধা কেজি আপেল ও ছেলের জন্য ঔষধ কিনেছে সেগুলো এখনো রান্নাঘরে অক্ষত রয়েছে। এখন সন্দেহ হচ্ছে, এই ১ কেজি আপেল নিয়ে কে বা কারা আমার বাড়িতে এসেছিল তা খুঁজে বের করতে পারলে ঘটনার আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে বলে তার ধারণা। সে আবারো বলেন, ঘাতক অবশ্যই পরিচিত কেউ হতে পারে। বেড়াতে আসার ভান করে এ ঘটনা ঘটিয়েছে জানায়।

সে বারবার বলেন, তার পরিবারের কোন সদস্যের সাথে গ্রামবাসির কারো কোন বিরোধ ছিলনা। তবে ঘটনার দুই-চার দিন আগে থেকে বসতভিটার গাছ কাটা নিয়ে সামান্য বিতর্ক হয়েছে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, কক্সবাজার পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান, উখিয়া উপজেলা সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল হুদা, মোঃ আলমগীর।

এর আগে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সহ-সম্পাদক প্রশান্ত ভূষণ বড়ুয়া পূর্বরত্না আনন্দ ভবন বিহারে নিহতদের স্মারণে আয়োজিত সংঘদান, অষ্টপরিস্কার উৎসবে যোগদান করেন। সেখানে তিনি স্বজনহারা রোকন বড়ুয়ার বেশকিছুক্ষণ হত্যাকান্ড নিয়ে আলাপ করেন। পরে প্রশাসনের উদ্দেশ্যে তিনি এ পাষবিক হত্যাকান্ডে যারা জড়িত রয়েছে তাদের খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন । এ মামলায় নিরহ ব্যক্তিরা যাতে হয়রানির শিকার না হয় সে ব্যাপার সজাগ থাকার জন্য উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

মামলার তদন্তকারী অফিসার ওসি (তদন্ত) নুরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, পুলিশ বিভাগ সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের মনোবল নিয়ে তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। যে সময় ঘাতককে আমরা সনাক্ত করে গ্রেপ্তার করতে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হব।

উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আবুল মনসুর বলেন চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের মোটিভ ও ক্লু উদঘাটনে পিবিআই ফরেনসিক এবং সিআইডির ক্রাইম সিন টিমের সদস্যরাও তদন্তের কার্যক্রমে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন। পাশাপাশি পুলিশ এ ঘটনার আসল রহস্য বের করতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে। অচিরেই ইতিবাচক ফলাফল বেরিয়ে আনতে সক্ষম হব বলে আশা করছি।

এদিকে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে প্রতিদিন সমাবেশ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। একই পরিবারে কোমলমতি দুই শিক্ষার্থীসহ ৪জনকে জবাই করে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা। সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে রুমখাঁপালং সরকারি সাইরা প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রুমখাঁপালং উচ্চ বিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষার্থীরা এ প্রতিবাদ জানায়। এ সময় শিক্ষার্থীরা দ্রুত সময়ের মধ্যে ন্যাক্কারজনক এই হত্যাকান্ডে জড়িত অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানায়।

উল্লেখ্য, বুধবার গভীর রাতে রত্নাপালং ইউনিয়নের পূর্বরত্না গ্রামের কুয়েত প্রবাসী রোকেন বড়ুয়ার বাড়িতে ঢুকে তার মা-স্ত্রী, ছেলেসহ চারজনকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় নিহতরা হলেন রোকেন বড়ুয়ার মা সখি বড়ুয়া (৫০), স্ত্রী মিলা বড়ুয়া (২৫), ছেলে রবিন বড়ুয়া (৫) ও রোকেন বড়ুয়ার বড় ভাই শিপু বড়ুয়ার মেয়ে সনি বড়ুয়া (৬)।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আইনশৃংখলা বাহিনী, আওয়ামী লীগ, গোয়েন্দা সংস্থা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন