parbattanews

উখিয়ায় ব্যস্ত সময় পার করছে কামার শিল্পীরা

আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে উখিয়া দারোগা বাজারে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কামার শিল্পীরা। দম ফেলবারও যেন ফুসরত পাচ্ছেন না তারা। দিনরাত টুং টাং শব্দে মুখরিত উখিয়ার বিভিন্ন হাটবাজারগুলো।

সরেজমিন উখিয়া সদর দারোগা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, স্থানীয় পেশাদার কামার শিল্পীরা মরিচ্যা বাজার, কোটবাজার, সোনারপাড়া বাজার, কুতুপালং রোহিঙ্গা বাজার, বালুখালী বাজার, থাইংখালী বাজার, পালংখালী বাজারসহ উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দা, বটি, চাকু, ছোরা, কুঁড়াল, চাপাতিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরি করছে কামাররা।

স্থানীয় কামার শিল্পীরা জানান, বর্তমানে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহারের ফলে কৃষি কাজে ব্যবহ্নত দেশীয় তৈরি সব পুরনো উপকরণ আর তেমন ব্যবহ্নত হচ্ছে না। প্রযুক্তি নির্ভর কৃষিতে লোহার তৈরি পুরনো সব উপকরণের যোগ্যতা এখন আর নেই বললেই চলে। কৃষি উপকরণসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরিতে জড়িত কামার শিল্পীদের প্রায় সারা বছর মন্দাভাব নিয়েই সংসারের গ্লানি টানতে হয়। কিন্তু প্রতি বছর কোরবানির ঈদের পূর্বে এক-দেড় মাস মহাব্যস্ত সময় পার করেন কামার শিল্পীরা।

শনিবার দারোগা বাজারের কামার বাবুল কর্মকার জানান, এক সময় লোহা আগুনে পুড়িয়ে দা, বটি, কোদাল, খন্তা, সাবল, টেটা, কাচি, চাকু, ছোরা, কুড়াল, চাপাতিসহ কৃষি উপকরণের বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরিতে কামারদের যথেষ্ট চাহিদা ও কদর ছিল। কিন্তু বর্তমানে সে কদর আর চাহিদা কোনোটাই নেই বললেই চলে। মেশিনের সাহায্যে বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রপাতি তৈরি হচ্ছে। ফলে কামারদের তৈরি যন্ত্রপাতির প্রতি মানুষ দিন দিন আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।

তিনি আরো বলেন, হয়তো বা এক সময় এই পেশা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তবে কোরবানির ঈদের সময় আমরা একটু আশাবাদী হই। সারা বছরের তুলনায় কোরবানির ঈদের সময় রুজি-রোজগার অনেক বেশি হয়। বাবুল কর্মকার আরো বলেন, বাপ-দাদার কালের এই পেশা আমি তাদের কাছেই শিখেছি। লেখাপড়া না জানার কারণে অন্য কোনো কাজে যেতে পারি না। সারা বছরই সংসার অভাবে চলে। অন্য কোনো কাজ জানাও নেই। সারা বছর তেমন কোনো কাজ না থাকলেও কোরবানির সময় আমাদের কাজের চাহিদা অনেকগুণ বেড়ে যায়। আমার স্ত্রী লাকী কর্মকার ও দুই মেয়ে নিয়ে সংসার চালাতে আমাকে দিন রাত এই পরিশ্রমের কাজটি করতে হচ্ছে। কোরবানের ঈদের সময়টুকুতে সংসার নিয়ে একটু ভালো থাকি।

এ ব্যাপারে বিভিন্ন হাটের কামার শিল্পীরা জানান, এই পেশায় যারা আছেন তারা খুবই অবহেলিত। বর্তমান বাজার মূল্যের যে উর্ধ্বগতি সে অনুযায়ী তারা কাজের ন্যায্য মূল্য পান না। এই পেশায় থেকে সংসার চালাতে খুবই কষ্ট হয়। কামার শিল্পীরা মনে করেন সরকারি পৃষ্টপোষকতা কোনো আর্থিক কোনো সহযোগিতা না পেলে এ শিল্প হয়তো অচিরেই হারিয়ে যাবে।

এছাড়াও বৈশ্বিক করোনা মহামারীর কারনে লকডাউন থাকায় দোকান গুলো দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ রাখতে হয়েছে। এর ফলে ব্যাপক লোকসান গুনতে হয় স্থানীয় কামারদের।

Exit mobile version