parbattanews

উখিয়ায় স্কুল মাদ্রাসায় শিক্ষক দ্বারা শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ

স্কুল মাদ্রাসার শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষার্থীদের ওপর নীরবে চলছে যৌন হয়রানি। ভয়ে, লজ্জায় ও সামাজিক সম্মানহানির কথা চিন্তা করে শিক্ষার্থীরা সবকিছু নীরবে সহ্য করতে বাধ্য হচ্ছে। অনেক সময়ই যৌন হয়রানির বিষয়টি তারা অভিভাবক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান বা সহপাঠীদের কাছে বলতেও বিব্রতবোধ করে। সাহস করে দুয়েকজন শিক্ষার্থী মুখ খুললেও প্রতিকার পায় না, বরং প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে অভিযোগ ধামাচাপা পড়ে যায়।

এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, স্কুল-মাদ্রাসায় অপ্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষার্থীরা কতখানি নিরাপদ? অভিভাবক ও কর্তৃপক্ষ এসব ব্যাপারে কতটা সচেতন? উখিয়া সদরের বেসরকারি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনৈক শিক্ষকের বিরুদ্ধে তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রী যৌন লালসার শিকার হয়েছেন। স্কুল পরিচালনা কমিটির বরাবরে ছাত্রীর পিতা অভিযোগ করলে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হওয়ায় ঐ শিক্ষককে দুই মাসের জন্যে বহিস্কার করা হয়।

দুই মাস পর শিক্ষক কর্মস্থলে যোগদানের এক বছরের মাথায় প্রাইভেট পড়ানোর সময়ে ছাত্রের মায়ের সাথে অনৈতিক কাজে ধরা খেয়ে গণধোলায়ের শিকার হন। প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ঐ ঘটনা ধামাচাপা পড়ে গেলেও পরবর্তীতে একই স্কুলের জনৈক শিক্ষিকা তারই যৌন লালসার শিকার হন। এই ঘটনায় শিক্ষিকা প্রধান শিক্ষিকার বরাবরে ঘটনা জানানোর পরও কোন প্রতিকার না পাওয়ায় ঐ শিক্ষকের বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযোগ পেয়ে স্কুল থেকে ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অভিভাবকদের সামনে থানা পুলিশ ঐ লম্পট শিক্ষককে গ্রেফতার করে। ২ জন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের জিম্মায় থানা হাজত থেকে ছাড়া পায়।

এ ধরণের আরও একাধিক নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে, যে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের দ্বারা সময় অসময়ে ছাত্রীরা যৌন লালসার শিকার হয়েছেন। এখন সময় এসেছে রুখে দাঁড়াবার। মেয়ে শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানি বা ধর্ষনের অভিযোগ উঠেছে ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মাদ্রাসার কোনো কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধেও। যার সর্বশেষ উদাহরণ নাইক্ষ্যংছড়ির মদিনাতুল উলুম দাখিল মাদ্রাসার সুপার ছৈয়দ হোসেনের বিরুদ্ধে। একই উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে।

উখিয়ার স্বনামধন্য এক মাদ্রাসার সাবেক ছাত্রী আয়েশা ছিদ্দিকা ( ছদ্মনাম ) এ প্রতিবেদককে তার একটি তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানান। অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় এক সহকারি শিক্ষক কর্তৃক যৌন নিপীড়নের শিকার হন তিনি। তাকে মাদ্রাসায় বেতন, ফি প্রাইভেট পড়ানো, পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র দেয়া এবং পরীক্ষার খাতায় বেশি নম্বর দেয়ার প্রলোভন দেখানো হয়। তবে বিষয়টি তিনি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ, অভিভাবক বা অন্য কাউকে জানাননি। কেন জানাননি-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই শিক্ষকের কাছেই তাকে পড়াশোনা করতে হয়েছে। তাই তিনি পরবর্তী হয়রানির কথা চিন্তা করে কাউকে কিছু বলতে পারেননি।

উখিয়ার প্রসিদ্ধ আরেক উচ্চ বিদ্যালয়ের ঝরে পড়া এক সাবেক ছাত্রী বর্তমানে গৃহিনী জান্নাত আরা (ছদ্মনাম ) বলেন, স্কুলের সহকারি শিক্ষক কর্তৃক যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে অভিভাবকদের অভিহিত করায় আমার পড়া লেখা বন্ধ হয়ে যায়।

ছাত্রীটির লেখা-পড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়ে তার বাবার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় মেয়েটি একদিন বিকেলে বাড়ি ফিরে তার মায়ের কাছে কান্নাকাটি করে শিক্ষক কর্তৃক নিপীড়নের বিষয়টি জানালে তার মায়ের পরামর্শে তার লেখাপড়া বন্ধ করে দেই। শিক্ষকের বিরুদ্ধে কেন অভিযোগ দেননি- জানতে চাইলে এই অভিভাবক বলেন, সামাজিক সম্মানহানির কথা বিবেচনা করে বিষয়টি এড়িয়ে যাই।

বিদ্যালয়ের একাধিক অভিভাবকের সাথে এই ব্যাপারে কথা বলে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দেশের মানুষের অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, প্রত্যেক কন্যা শিশুর বাবা-মাকেও সাবধান হতে হবে। একজন শিক্ষকের কাছে কেউ হয়রানির শিকার হবে, সেটা আশা করা যায় না। আমাদের নিশ্চিত সচেতনতায় এ ধরনের ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে।

উখিয়া মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রায়হানুল ইসলাম মিয়া বলেন, যৌনহয়রানীর ছাড়াও কোন ছাত্র/ছাত্রীর সাথে কোন শিক্ষক/শিক্ষিকার অসৌজন্যমূলক আচারণ করার অভিযোগ পাওয়া গেলেও অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে সেটি হতে হবে তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে।

Exit mobile version