parbattanews

উখিয়া-টেকনাফে এনজিও কর্মীর আড়ালে চলছে ইয়াবা পাচার

ঘুমধুম প্রতিনিধি:

রহিঙ্গা ইস্যুকে পুঁজি করে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার নারী-পুরুষের বেশ কয়েকটি ইয়াবা পাচারকারী সিন্ডিকেট রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে এনজিও কর্মী হিসেবে। তারা কৌশলে এনজিও’র আইডি কার্ড সংগ্রহ করে তা গলায় ঝুলিয়ে সারা ক্যাম্প বিচরণ করলেও দেখার কেউ নেই। এ সুযোগের সৎ ব্যবহার করে একটি চক্র ইয়াবা পাচার করছে। পাচার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে নামি-দামী গাড়ি।

সম্প্রতি ইয়াবা চালান নিয়ে যাওয়ার সময় এমএসএফ হল্যান্ডের নামে ব্যবহৃত এ্যাম্বুলেন্স থেকে এনজিও কর্মী শিখা রানী ৪৫হাজার ইয়াবাসহ মরিচ্যা বিজিবি’র হাতে ধৃত হওয়ার পর কিছু দিন এনজিও সংস্থার গাড়িতে নিয়মিত তল্লাশী চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এসময় কিছুদিন পাচার কাজ থমকে গেলেও গত ১মাস ধরে ইয়াবা পাচার আশঙ্কাজনক ভাবে বেড়ে গেছে বলে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিমত।

বর্তমান বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী অবস্থানের প্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী রোহিঙ্গা নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত থাকার সুযোগে ওই চক্রটি আবারো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ২৭ জানুয়ারি সলিডারটি ইন্টারন্যাশালের ড্রাইভার আবুল হোসেন ৩হাজার ইয়াবাসহ আটক হয় মরিচ্যা বিজিবি’র হাতে।

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) রাত ৩টার দিকে উখিয়া থানা পুলিশ গোপন সূত্রের সংবাদের ভিত্তিতে একটি কক্সবাজারগামী বিলাস বহুল প্রাইভেট কারে সন্দেহজনক তল্লাশী চালিয়ে ৪০ হাজার পিস ইয়াবা ও সাইফুল ইসলাম নামের কথিত এক সাংবাদিকসহ ৪জন পাচারকারী চক্রকে আটক করেছে। কথিত সাংবাদিক ছাড়া অন্য ৪জনের বাড়ি উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বলে পুলিশ জানিয়েছে। তারা এখানে এনজিও কর্মী পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ইয়াবা পাচার করে আসছে। খোঁজ খরব নিয়ে জানা গেছে, ২৮জানুয়ারি রাতে এসিএফ

ইন্টারন্যাশনালের ডেপুটি প্রেগ্রাম ম্যানেজার ডা. দেবাশিষ চন্দ্র নাথ বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ মরিচ্যা যৌথ চেকপোস্ট অতিক্রমকালে বিজিবি গাড়িটি থামিয়ে তল্লাশী চালায় এসময় গাড়ি সিটের নিচে লুকিয়ে রাখা প্রায় ২০হাজার ইয়াবা উদ্ধার করে তার বিরুদ্ধে রামু থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে বিজিবি সূত্রে জানা গেছে ।

এছাড়া আরটিএম ইন্টারন্যাশনাল এনজিও সংস্থার ড্রাইভার বাদশা মিয়াকে ১৫ হাজার ইয়াবা সহ উখিয়া থানা পুলিশ আটক করে। সর্বশেষ কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের দায়িত্বরত হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ রাজেশ বড়ুয়া মঙ্গলবার দুপুরে বালুখালী কাস্টমস এলাকায় যাত্রীবাহি গাড়িতে তল্লাশী চালিয়ে ৪০হাজার ইয়াবা সহ চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থানার বাসিন্দা হেলাল উদ্দিন (২৫) নামের এক ইয়াবা পাচারকারীকে আটক করেছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ইয়াবা পাচার হচ্ছে এমন অভিযোগে ভিত্তিতে একাধিক রোহিঙ্গা নেতারা জানান, যেসব রোহিঙ্গাদের সাথে মিয়ানমারের বিজিপি ও রাখাইন ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সাথে সখ্যতা ছিল তাদের হাত বেয়ে এখনো মিয়ানমার থেকে ইয়াবা আসছে অতি সুকৌশলে। ওই রোহিঙ্গা পাচারকারী চক্রটি মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে স্থায়ী ভাবে ক্যাম্পে অবস্থান নিয়ে ইয়াবা মজুদ করে, পরে বস্তি কেন্দ্রিক ইয়াবা সিন্ডিকেটের যোগসাজশে সুযোগ বুঝে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পাচারকারী চক্রের হাতে তুলে দেয় ইয়াবার চালান। এভাবে ইয়াবা পাচার আগের চেয়ে আরো দ্বিগুণ বেড়েছে বলে দাবি করে ওই রোহিঙ্গা নেতারা ।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ন্ত্রণে ও রোহিঙ্গাদের মানবিক সেবায় নিয়োজিত থাকার কারণে ইয়াবা থেকে তাদের দৃষ্টি ভিন্ন পথে ধাবিত হয়েছে। যে কারণে ইয়াবা পাচারকারী চক্র পার পেয়ে যাচ্ছে। অভিজ্ঞ মহল মনে করেন এনজিও কর্মী ছদ্মবেশে অচেনা অজানা পুরুষ মহিলারা বেপরোয়া হয়ে ইয়াবা পাচার করে আসছে। তাদের তল্লাশী চালানো হলে আসল তথ্য বেরিয়ে আসবে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, রোহিঙ্গা ইস্যুকে সামনে রেখে যত্রতত্র এনজিও সংস্থা নামধারী বেশ কিছু চক্র ক্যাম্পে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা ইয়াবা পাচার থেকে শুরু করে এমন কোন অনৈতিক কাজ নাই করছেনা। এদেরকে হাতে-নাতে ধৃত করা না হলে এসব এনজিও নামধারী টাউট বাটপার চক্র আরো বেপরোয়া হয়ে উঠবে।

উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আবুল খায়ের এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ব্যস্ত থাকার সুযোগে পাচারকারী চক্র ইয়াবাসহ নানান অবৈধ পণ্য সামগ্রী পাচার করছে। তবে মাঝে মধ্যে পুলিশ হানা দিয়ে ইয়াবা, মাদকদ্রব্যসহ পাচারকারীদের আটক করে মামলা দিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হচ্ছে।

Exit mobile version