উখিয়া-টেকনাফে সর্বক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে রোহিঙ্গারা

fec-image

মিয়ানমার সেনা, বিজিপি, নাটালা বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। কিন্তু পালিয়ে আসা একজন রোহিঙ্গাকেও এ তিন বছরে ফেরত পাঠাতে পারেনি সরকার। উল্টো আশ্রয় নিয়ে উখিয়া-টেকনাফে পরিবেশ, নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসহ সর্বক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে রোহিঙ্গা।

দখল করে নিয়েছে হাজার হাজার একর জমি, জড়িয়ে পড়ছে ইয়াবা,মাদক খুনসহ বিভিন্ন অপরাধে। এসব নিয়ে তীব্র ক্ষোভ ও অস্থিরতা বিরাজ করছে স্থানীয়দের মধ্যে। যেকোনো সময় আইনশৃঙ্খলা খাতে বড় বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, রোহিঙ্গারা আসার পরে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করার জন্য তারা নিজেদের খেয়াল-খুশি মাফিক সব কিছু করে যাচ্ছে। বনাঞ্চলের পাশাপাশি দখলে নিয়েছে হাটবাজার।

মানবিকতার দোহাই দিয়ে প্রায় দেড় শতাধিক এনজিও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তৎপরতা শুরু করায় মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেছে বিভিন্ন ধরনের গাড়ির চলাচল। ফলে এক ঘণ্টার রাস্তা যেতে সময় লাগছে পাঁচ ঘণ্টার বেশি।

এখানেই শেষ নয়, রোহিঙ্গাদের কারণে জায়গা মিলছে না গণপরিবহনে। জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকলে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে চেকপোস্টে। সব মিলিয়ে চরম দুর্দশার মধ্যে পড়ে গেছে স্থানীয়রা।

উধাও হয়েছে অভয়ারণ্য, জনমানুষের শান্তি: সূত্র জানায়, রোহিঙ্গারা ৬ হাজার একর জমি দখল করে ঘরবাড়ি তৈরি করেছে। তাদের নিয়ে কাজ করা প্রায় দেড়’শ এনজিও নিজেদের অফিস স্থাপনার নামে দখল করেছে আরো দুই হাজার একর জমি। পাশাপাশি আরো ৫০০ একর জমিতে দোকান ও সেমিপাকা ঘর তুলেছে স্থানীয়রা।

ফলে রাতারাতি উধাও হয়ে গেছে উখিয়া ও টেকনাফ এলাকার এক সময়ের অভয়ারণ্য। ধ্বংস হয়ে গেছে উঁচু উঁচু পাহাড়। উজাড় হয়ে গেছে বনাঞ্চল। উল্টো রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো থেকে উৎপন্ন বর্জ্যে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাড়ছে বিভিন্ন রোগব্যাধিও।

এদিকে, বনাঞ্চল ধ্বংসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে উখিয়া টেকনাফের অপরাধ।

স্থানীয়রা জানায়, বছর দুই আগেও চুরি-ছিনতাই কিংবা এ জাতীয় অপরাধের তেমন কোনো ঘটনা ঘটত না ওই এলাকায়। অথচ এখন প্রায়ই ঘটছে হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যানুযায়ী, রোহিঙ্গারা আসার পর গত তিন বছরে অর্ধশতাধিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। চুরি ডাকাতিসহ অন্যান্য ঘটনা ঘটেছে সহস্রাধিক। ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে মাদক চোরাচালান।

মূলত রোহিঙ্গা আসার পরে কয়েকগুণ বেড়েছে ইয়াবার চালান। মিয়ানমারে থাকা স্বজনদের সহযোগিতায় রাতের আঁধারে ইয়াবা চালান নিয়ে ফিরছে তারা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারির ফাঁক গলে সেগুলো পৌঁছে দিচ্ছেন ইয়াবা গড ফাদারদের হাতে।

প্রতিটি ক্যাম্পেই গড়ে উঠেছে সশস্ত্র রোহিঙ্গা ডাকাত দল : স্থানীয় সূত্র আরো জানায়, রোহিঙ্গারা আসার পরে যতই দিন যাচ্ছে ততই প্রভাব বিস্তার করে চলেছে তারা। প্রতিটি ক্যাম্প ঘিরে গড়ে উঠেছে সশস্ত্র ডাকাত দল।

যাদের মধ্যে সেলিম, নুর মোহাম্মদ, জহির আহম্মেদ জকির, আবদুল করিম ধইল্যা, নেসার আহমদ, ইউনুছ এর আছে আলাদা ডাকাত গ্রুপ। এরা স্থানীয়দের জমি দখল থেকে শুরু করে রোহিঙ্গাদের স্বার্থে স্থানীয়দের খুন করতেও পিছপা হচ্ছে না।

কুতুপালং লম্বাশিয়া এলাকার মোহাম্মদ আলী বলেন, রোহিঙ্গারা আমাদের জমি দখল করছে। আগে কখনো চুরি ডাকাতি না হলেও বর্তমানে তা বেড়ে গেছে। দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়েছে। আয়-উপার্জনের উপায়গুলিও চলে গেছে রোহিঙ্গাদের দখলে। ফলে স্থানীয় খেটে খাওয়া মানুষ চরম দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। আমরা এ জিম্মি দশা থেকে মুক্তি চাই। আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য নিরাপদ পরিবেশ চাই।

উখিয়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক, পালংখালীর ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা আসার পরে সব ধরনের অপরাধ বেড়ে গেছে। কোনো রোহিঙ্গাকে খারাপ কাজ থেকে দমিয়ে রাখা যাচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের সঙ্কট দেখা দিবে। সুতরাং যত দ্রুত সম্ভব তাদের নিজ দেশে পাঠাতে হবে।

ক্যাম্পভিত্তিক ইয়াবা সিণ্ডিকেট : স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভিত্তিক ইয়াবা সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। বর্তমানে যেসব চালান ধরা পড়ছে সবই আনছে রোহিঙ্গারা। মিয়ানমার বর্ডার কাছাকাছি হওয়ায় কিছুতেই ইয়াবা ও মাদক অনুপ্রবেশ থামানো যাচ্ছে না। পাশাপাশি অন্য অপরাধও বৃদ্ধি পেয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: উখিয়া, টেকনাফ, রোহিঙ্গা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন