parbattanews

উখিয়া-টেকনাফ সীমান্তে মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণ: আতঙ্কে পালাচ্ছে গ্রামবাসী

উখিয়া প্রতিনিধি:

বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তের উখিয়া ও ঘুমধুম ঢেকুবনিয়া এলাকায় শনিবার (২৬ আগস্ট) বিকেল ৪টার থেকে প্রচণ্ড গুলিবর্ষণে পুরো এলাকা চরম অতঙ্ক ও উৎকন্ঠা বিরাজ করছে। মায়ানমারের আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর অর্তকিত গুলিবর্ষণে উখিয়ার সীমান্ত এলাকা বালুখালী ও ঘুমধুম তুমব্রু ঢেকুবনিয়া এলাকা ও সীমান্ত জনপদ জুড়ে সাধরণ লোকজনের মাঝে উদ্বেগ ও অজনা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন গতকাল সকাল ১০টায় উখিয়া উপজেলা পরিষদ হল রুমে এক জরুরী সভায় প্রশাসনসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সকলকে কড়া সর্তক অবস্থায় থেকে সব ধরণের পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা আবুল মঞ্জুর হেলালী সাংবাদিকদের জানান, বালুখালী, ঘুমধুম তুমব্রু বেতবনিয়া এলাকার বাসিন্দারা মায়ানমারের সীমান্ত বাহিনীদের মুহুর্মহু প্রচণ্ড গুলিবর্ষনের ঘটনায় সীমান্ত এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ঘর-বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয় নিচ্ছে তারা।

বালুখালী গ্রামের মেম্বার নুরুল আবছার চৌধুরী বলেন, মায়ানমারের বাহিনী বিকেলে একের পর এক গুলিবর্ষণ শুরু করলে স্থানীয় বাসিন্দারা প্রাণের ভয়ে নিরাপদ আশ্রয় নিচ্ছে।

কক্সবাজার ৩৪ বিজিরি অধিনায়ক লে. কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান জানান, সীমান্তের যেকোন ধরণের পরিস্থিতি মোকাবেলায় অতিরিক্ত বিজিবি সদস্য মোতায়েন ও টহল জোরদার বৃদ্ধি করা হয়েছে।

এদিকে মায়ানমারের উত্তরাঞ্চলের রাখাইন রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্যাতন থেকে রেহাই পেতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছে মুসলিম রোহিঙ্গারা। রাতের আঁধারে বিভিন্ন সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দলে দলে তারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে। বিজিবির কড়া নজরদারির মাঝেও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানো যাচ্ছে না। ইতোমধ্যে প্রায় ৬ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।

গতকাল সকাল (২৫ আগস্ট) থেকে সরজমিনে, উখিয়ার বালুখালী, পালংখালী, উলুবনিয়া ও টেকনাফের হোয়াইক্যং, লম্ববিল, উনছিপ্রাং, ঝিমংখালী, খারাংখালী, হ্নীলার পুলের ডেইল, রঙ্গীখালী ও চৌধুরীপাড়া সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে দলে দলে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করছে। শুক্রবার বিকেলে নাফ নদী পাড়ি দেওয়া প্রায় ৫ হাজার রোহিঙ্গা নারী-পুরুষকে বিজিবি ঠেকাতে পারলেও রাতের বেলা তারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে।

শনিবার ভোরের আলো ফোটার পর থেকে ওই এলাকায় তাদের আর দেখা যায়নি। হোয়াইক্যং’র সিএনজি চালক নুর মোহাম্মদ জানান, রাতের আঁধারে সিএনজি, মাহিন্দ্রা ও টমটম যোগে দলে দলে রোহিঙ্গা বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্পে ঢুকে পড়েছে। তারা নিজেরাই এসব ভাড়া মেরেছেন বলে জানান নুর মোহাম্মদ।

এদিকে লেদা শরণার্থী ক্যাম্পের বস্তি কমিটির নেতা আনোয়ার হোসেন জানান, মিয়ানমারের হত্যাযজ্ঞ থেকে বাঁচতে বাংলাদেশের বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্পে ইতোমধ্যে ৬ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। তারা টেকনাফের নয়াপাড়া, লেদা, উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী শরণার্থী ক্যাম্পেগুলোতে অবস্থান করছে বলেও জানান তিনি ।

উল্লেখ্য, মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের রাখাইন রাজ্যে পুলিশ পোস্টে হামলার পর নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত বেড়ে ৮৯ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে কমপক্ষে ৭৭ রোহিঙ্গা মুসলিম ও নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য রয়েছেন। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের পর রোহিঙ্গা যোদ্ধারা পুলিশ পোস্টে হামলা এবং একটি সেনাঘাঁটিতে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করলে এ সংঘর্ষ বাঁধে। এরপর শুক্রবার মায়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইনের বিভিন্ন গ্রামে ঢুকে পড়ে গুলি করে হত্যা ও বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়।

Exit mobile version