উচ্চ আদালতের রায় এবং আঞ্চলিক পরিষদের ভবিষ্যৎ

fec-image

১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত পার্বত্য চুক্তির আলোকে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন ১৯৯৮ প্রণয়ন করে সরকার। এই আইনের অধীন গঠিত আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে সন্তু লারমা ও পরিষদের সদস্যবৃন্দ ১৯৯৯ সালের ১২ মে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর থেকেই ‘চলছে গাড়ি, যাত্রাবাড়ি’ অবস্থা বিরাজ করছে। একমাত্র মৃত্যু ছাড়া এই পরিষদে কোনো পরিবর্তন হয়নি। কারণ, না আছে নির্বাচন, না আছে বদলানোর অন্যকোনো ব্যবস্থা।

ইতোমধ্যে অনির্বাচিত এই পরিষদ ২৬ বছর ধরে চলছে, চেয়ারম্যান এবং সদস্যদের পেছনে সরকার বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করছে। কিন্তু এই পরিষদ থেকে দেশ ও জনগণ কী পাচ্ছে? এমনকি পাহাড়ের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, বন্যা, পাহাড়ধস, খরার মতো নানা সংকট আসে, সেসব আবার চলেও যায়। কিন্তু কোনো সংকটেই পাহাড়ের জনগণ এই পরিষদের চেয়ারম্যান বা কোনো সদস্যকে তাদের পাশে পেয়েছে বলে কারো জানা নেই। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, এই পরিষদের চেয়ারম্যান নানা কারণে পরিচিত হলেও সদস্য হিসেবে কে কে আছেন? তাদের কাজই-বা কী তা জানে না কেউ।

রিট আবেদন নম্বর ২৬৬৯/২০০০ এবং ৬৪৫১/২০০৭-এর প্রেক্ষিতে বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীকে নিয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ২০১০ সালের ১২ ও ১৩ এপ্রিল দুই দিনব্যাপী এক ঐতিহাসিক রায় প্রদান করেন। রায়ে আঞ্চলিক পরিষদ আইন সম্পর্কে আদালতের বক্তব্য হচ্ছে, “আঞ্চলিক পরিষদ আইনের ধারা ৪১-এর মাধ্যমে আইন প্রণেতাদের ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দেয়ার উদ্দেশ্যকেই প্রকাশ করে। রাষ্ট্রের একক স্বত্বাকে খর্ব করার উদ্দেশ্যেই আঞ্চলিক পরিষদ আইনের ধারা ৪০ এবং ৪১ ইচ্ছাকৃতভাবেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও আঞ্চলিক পরিষদ আইন সংবিধানের ১ নম্বর অনুচ্ছেদে রক্ষিত রাষ্ট্রের একক চরিত্র হিসাবে সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে বিনষ্ট ও ধ্বংস করেছে। বাদি এবং বিবাদি পক্ষের যুক্তিতর্ক ও সংবিধানের ৮ম সংশোধনী মামলার মতামত ও পর্যবেক্ষণ থেকে আদালত সিদ্ধান্তে আসে যে, আঞ্চলিক পরিষদ আইনটি রাষ্ট্রের একক চরিত্র ধ্বংস করেছে বিধায় এটি অসাংবিধানিক। এ ছাড়াও সংবিধানের ৫৯ অনুচ্ছেদ মোতাবেক এই আঞ্চলিক পরিষদ কোন স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা নয়। এর কারণ হচ্ছে যে, পরিষদ আইনে আঞ্চলিক পরিষদকে প্রশাসনিক কোনো ইউনিট হিসাবে আখ্যা দেয়া হয়নি।”

যে পরিষদের সরকারি তহবিল থেকে বেতন-ভাতা গ্রহণ ছাড়া আর কোনো কাজ নেই। এমনকি গত প্রায় ২৬ বছর ধরে তারা তাদের কোনো প্রয়োজনীয়তাও পার্বত্যবাসীর সামনে হাজির করতে পারেনি। তাছাড়া উচ্চ আদালত যাকে অবৈধ বলে আখ্যা দিয়েছে, সেই পরিষদ নামের এই অকর্মন্য প্রতিষ্ঠানকে জনগণের ট্যাক্সের টাকায় কেন লালন-পালন করা হচ্ছে, কেউ কি বলতে পারেন?

রিট দুটি আপিল বিভাগে রিভিউ শুনানির অপেক্ষায় আছে, দ্রুত সেটার শুনানি শেষ করার ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করুন। তারপর, রায় অনুসরণ করে ব্যবস্থা নিন, বিনা প্রয়োজনে জনগণের ট্যাক্সের টাকা অপচয়ের বিলাসিতা বন্ধ করুন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন