উন্নয়নের ছোঁয়ায় বান্দরবান, বদলে যাবে যোগাযোগ ব্যবস্থা

fec-image

দুই সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে পাহাড়েও নতুন নতুন সম্ভাবনা জেগে উঠছে। একই সঙ্গে পাল্টে যাচ্ছে পাহাড়ের আর্থ-সামাজিক খাতের নানা হিসাব। নতুন নতুন সড়ক’র মাধ্যমে অবকাঠামো বদলে যাবে যোগাযোগ ব্যবস্থা। এই সড়ক বাস্তবায়নের মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতির বিরাট এক বিপ্লব ঘটবে বলে মনে করছেন বান্দরবানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর এলজিইডি সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের পার্বত্য অঞ্চলে অপার এক সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে। এখানকার পর্যটন খাত, কৃষি ও ফলদ চাষাবাদ-উৎপাদনের ক্ষেত্রে নানা নতুন নতুন সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে। পাহাড়ি অঞ্চলে উৎকৃষ্টমানের ড্রাগন, কাজু বাদাম, কমলা-মাল্টা, আনারস, আম, কলাসহ নানা কৃষি ও ফল-ফলাদি উৎপাদন হতে শুরু করেছে। এমনকি এখানে ভালো মানের কফি উৎপাদন শুরু হয়েছে। এরকম আরও নানা কৃষি সম্ভাবনা এখানে জেগে উঠেছে। কৃষি সম্ভাবনার কারণে এখানে অনেক প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে পারে। যার ফলে স্থানীয় পাহাড়ি-বাঙালিদের কর্মসংস্থান যেমন বাড়বে, তেমনই স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাপক অর্থনৈতিক পরিবর্তন ঘটবে। সেখান থেকে চিন্তা করলে এটা দেশের সার্বিক অর্থনীতিতেও একটা বিরাট ভূমিকা রাখবে।

স্থানীয়রা জানান, পাহাড়ে এই দুটি সড়কের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থার যে উন্নয়ন সেটি এখন সবার কাছেই অভাবনীয়। তাছাড়া দুর্গম পাহাড়ি জনপদে ভোগান্তি এলাকার জুড়ে উন্নত মানে কার্পেটিংযুক্ত এত সুন্দর সড়ক সেটি কেউ কল্পনা করতে পারেননি। আগে কোথাও গেলে ধুলাবালি ও ভিজা মাটি স্যাতস্যাতে যাতায়াতে কষ্ট হতো, বর্তমানে সেই সড়ক দিয়ে কৃষিপণ্য ও যাতায়াত সুবিধা পাচ্ছে। নতুন এই দুটি সড়ক নির্মাণের ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থার ও সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও কৃষি অর্থনীতির একটা দারুণ পরিবর্তন হবে।

এলজিইডি তথ্যনুসারে, এ দুটি সড়কের প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৯ কোটির টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে বাঘামারা খানসামা চাকমা পাড়া হতে ভায়া পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার কার্পেটিং সড়ক নির্মাণ করেছে মায়াধন চাকমা স্বত্বাধিকারীর। অপরদিকে সুয়ালক বঙ্গপাড়া হতে গণেশ পাড়া ৩ কিলোমিটার কার্পেটিং সড়ক নির্মাণ করেছে ইমু কনষ্ট্রাকশন। এ দুটি সড়কের প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সড়কটি কাজ শেষ হলে স্থানীয় বাসিন্দাদের যাতায়াত সুবিধা অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতির বিরাট এক বিপ্লব ঘটবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বান্দরবান সদর উপজেলার সুয়ালক ইউনিয়নের বঙ্গ পাড়া সড়ক প্রায় কাজ শেষ। সড়কের পাশে পানি নিষ্কাশন ও চলাচলের নিশ্চিত করতে ড্রেইন, গাইড ওয়ালসহ সৌন্দর্যবর্ধনে তৈরী করা হয়েছে।

অপররদিকে, একই চিত্র বাঘামারা খানসামা চাকমা পাড়া হতে ভায়া সড়ক। সেখানে প্রায় কার্পেটিং সড়ক সমাপ্তি ঘটেছে। ফলে প্রত্যান্তঞ্চলে দুর্গম পাহাড়িরা গাড়িযোগে পণ্যসামগ্রী সহজেই পরিবহণ করতে পারছে। যেখানে দুর্ভোগে পোহাতে সেখানে মুহুর্তে পৌছে যাওয়াতেই খুশি ওই এলাকার সাধারণ মানুষ।

বাঘমারা স্খনীয় বাসিন্দা অংসুই প্রু বলেন, আমরা বর্ষা মৌসমে যাতায়াত করতে খুব কষ্ট হত। এক পাড়া থেকে অন্য পাড়াতে যেতে হলে পাহাড়ি পথে দিয়ে যেতে হত, কিন্তু রাস্তার কাজ হওয়া মুহুর্তে মধ্যে যেতে পারবো এবং আমাদের কষ্টও কমে যাবে।

বঙ্গপাড়া বাসিন্দা সমীরণ তংচঙ্গ্যা বলেন, এই সড়ক আগে প্রচুর ধুলাবালী ও গর্ত ছিল। সামান্য বৃষ্টি পড়লে হাটতে যেতে পারতাম না। কষ্ট হত এই এলাকার মানুষের। এখন এলজিইডি উন্নত মানের সড়কের নির্মানের ফলে মুহুর্তে মধ্যে যেতে পারছি। আগে যে কষ্ট হত এখন সেটি নাই বললে চলে।

জেলা এলজিইডি নিবাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তাসাউর বলেন, এ দুটি সড়ক নির্মাণের ফলে এলাকার কৃষি যাতায়াতের অনেক সহজ হবে। যেসব এলাকায় দুর্ভোগে পোহাতে হত সেখানে এই সড়কের মাধ্যমে উপকার হবে। পাহাড়ে চাষিরা নায্যমূল্যে দাম পাবে আর এলাকায় আর্থসামাজিক উন্নয়ন হবে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: বান্দরবান, মংসিং
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন