parbattanews

একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না

একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না। এ কান্না যেন থামেই না। ১২ এপ্রিল সকালে বিএসআরএম স্টিল মিলের মীরসরাইস্থ জাহাজ কাটার ডিপুতে শ্রমিক গ্রুপের অধীনে কাজে যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় হারিয়ে ৪ শ্রমিক আহত হয়। এদের মধ্যে গুরুতর আহত মো. কোরবান আলী (৩৫)কে চমেক হাসপাতালের ভর্তি করা হয়। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা যায় কোরবান আলীর শ্বাসনালি ও মেরুদণ্ডের হাড়ে জটিল সমস্যা চিহ্নিত হয়েছে।

ফলে ২৫ এপ্রিল মেডিকেল টিম ৫ ঘণ্টা অপারেশনের পর ১২ দিন তাকে অবজারভেশনে রেখে চিকিৎসা দেন। এই সময়ে পরিবারের একমাত্র আয় নির্ভর কোরবান আলী পিছনে গত ৪ মাসে ব্যয় হয়েছে ৬ লাখ টাকা! একটি সড়ক দুর্ঘটনায় এই অসহায় পরিবারের সব আনন্দ কেড়ে নিয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে।

মো. কোরবান আলী খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার ঢাকাইয়া শিবির এলাকার বাসিন্দা। স্ত্রী শারমিন আক্তার (৩০) ও কন্যা তানজিলা আক্তার (৫)কে নিয়ে সুখের সংসার গড়ার স্বপ্ন দেখা মো. কোরবান আলীর জীবন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয় একটি সড়ক দুর্ঘটনায়!

অপারেশনের পর পরিপূর্ণ সুস্থ হওয়ার আগেই অর্থ সংকটে পড়ে কোরবান আলী! ফলে ৬ মে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়িতে এসে ঔষধ সেবনের পাশাপাশি নিয়মিত (চমেক) হাসপাতালের চিকিৎসকের পরামর্শ ড্রেসিং, থেরাপিতে আরও ব্যয় হয়েছে ২ লাখ টাকা!

এদিকে টানা ৪ মাস বিছানায় শুইয়ে থাকতে গিয়ে পীঠে ক্ষতের সৃষ্টি হয়ে পচন ধরেছে। একজন শ্রমিকের দৈনিক আয়ের অর্থে ৬ লাখ টাকা ব্যয়ে পথের ভিক্ষারি হওয়ার উপক্রম হলেও এখনও পুরোপুরি সুস্থ হয়নি কোরবান আলী।

এদিকে চিকিৎসায় ধার-দেনা, কর্জে জর্জরিত কোরবান আলী শেষমেশ আশ্রয় নিতে হয়েছে আরেক হতদরিদ্র ভগ্নীপতির পরিবারে! যার পরিবারেও নেই কোনো স্থায়ী আয়ের উৎস! কেবল ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল ও বড় ছেলের ছোট্ট একটি চায়ের দোকানের আয়ে চলে ৯ জনের সংসার।

বিএসআরএমের জাহাজ কাটা শ্রমিক মো. কোরবান আলীর স্ত্রী শারমিন আক্তার জানান, আমার স্বামী বিএসআরএমের জাহাজ কাটার শ্রমিক হিসেবে স্থানীয় একটি শ্রমিক গ্রুপের অধীনে কাজ করতো। কাজে যাওয়ার পথে ওই শ্রমিক গ্রুপের গাড়ি দুর্ঘটনায় আহত হয়। চার মাসের অধিক সময় ধরে বিছানায় শুয়েই চিকিৎসা চলছে। এতে এখন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৬ লাখ টাকা। কবে নাগাদ পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবেন তাও জানি না। তবে সুস্থ্ না হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসা চালানোর পরামর্শ দিয়েছেন ডাক্তার। এমতাবস্থায় কী করব ভেবে উপায় পাচ্ছি না।

চিকিৎসায় ইতোমধ্যে যে, ৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে, তারমধ্যে শ্রমিক গ্রুপ থেকে ৪৫ হাজার টাকা সহযোগিতা ছাড়া সবই ধার-দেনা। এখন চিকিৎসা খরচ যোগাড় করাই মুশকিল! নিরুপায় হয়ে সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান আপনারা আমার স্বামীকে বাঁচাতে পাশে দাঁড়ান।

ভগ্নিপতি মো. মনিরুল হোসেন জানান, আমার শ্যালকের পরিবারে দায়িত্বশীল কেউ না থাকায় ছোটবেলা থেকেই দেখাভাল করে আসছি। বিপদে-আপদে পাশে থেকেছি। কিন্তু এমন দুর্ঘটনায় সবাইকে অসহায় করে দিয়েছে! অর্থ-সম্পদ না থাকায় পুরো খরচ ধার দেনা কর্জে চালাতে হচ্ছে আমাকে। বর্তমানে প্রতিদিন ২৫০-৩০০ টাকার ঔষধ লাগছে । যা আমাদের পক্ষে মোটেও সম্ভব হচ্ছে না।

Exit mobile version