একটি পাকা সেতুর জন্য দুর্ভোগ ছয় গ্রামের দশ হাজার মানুষের

fec-image

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নে স্বাধীনতার ৪৭ বছর পার হলেও একটি পাকা সেতুর অভাবে যাতায়াতের জন্য দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ছয় গ্রামের দশ হাজার মানুষ। একটি বাঁশের সাঁকো দিয়ে বছরের পর বছর এ উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের বাজারপাড়া ও বারবাকিয়া ইউনিয়নের বুধামাঝিরঘোনার সংযোগস্থলে ভোলাখালের ওপর বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে এসব গ্রামের শিশু শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ৪৭ বছর যাবত চলাফেরা করে আসছে। এ সাঁকো দিয়ে পারাপারে ঘটছে বড় ধরণের দুর্ঘটনাও।

স্থানীয় লোকজন বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে বারবাকিয়া ইউনিয়নের বুধা মাঝিরঘোনা এলাকায় মানুষের বসবাস শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে দক্ষিন পাড়া, উত্তর পাড়া, মৌলভী পাড়া, জলিয়া বাপের পাড়া ও পশ্চিম জালিয়াকাটা নামের আরও তিনটি গ্রাম সৃষ্টি হয়। এসব গ্রামে এখন ১০ হাজার মানুষের বসবাস।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভোলাখালের ওপর বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে একটি সাঁকো। এই সাঁকো দিয়ে ৬ থেকে ৭ বছরের শিশুরা পার হচ্ছে মায়ের কোলে। পাঁচ থেকে ছয়জন লোক সাঁকোটিতে উঠলেই দুলতে থাকে। সাঁকোর দু’পাশে রয়েছে তিন ফুটের দুটি কাদা মাটির সড়ক।

বুধামাঝির ঘোনা এলাকার গৃহবধু নার্গিস আকতার বলেন, শুষ্ক মৌসুমে মানুষ যে কোনোভাবে সাঁকোটি পার হয়। বর্ষা মৌসুমে ভোলাখালে পাহাড়ি ঢলের স্রোত নামলে সাঁকোটি ভেঙে যায়। তখন এই সাঁকো দিয়ে মানুষের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ভাঙাচোরা ও কাঁচা সড়ক পার হয়ে তিন কিলোমিটার পথ ঘুরে পেকুয়া সদরে যেতে হয়।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, বারবাকিয়া ইউনিয়নের বুধামাঝিরঘোনা, দক্ষিণ পাড়া, উত্তর পাড়া, জলিয়া বর পাড়া, জালিয়াকাটা ও মৌলভী পাড়াসহ ছয় গ্রামের শিক্ষার্থীরা পেকুয়া জিএমসি ইনস্টিটিউশন, পেকুয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মগনামা শাহ রশিদিয়া মাঝিরপাড়া মাদ্রাসা, মগনামা উচ্চ বিদ্যালয় ও পূর্ব মগনামা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেতে এ বাঁশের সাঁকোটি ব্যবহার করে।

পূর্ব মগনামা এলাকার আব্দুল মজিদ বলেন, বারবাকিয়া ইউনিয়নের অন্তত শতাধিক শিক্ষার্থী বুধামাঝির ঘোনা সাঁকো পার হয়ে বিদ্যালয়ে আসে। ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা জীবন প্রদীপ হাতে নিয়েই এই সাঁকো পার হয়। এখানে একটি পাকা সেতু নির্মিত হওয়া দরকার।

বুধামাঝিরঘোনা এলাকার বাসিন্দা বেলাল উদ্দিন বলেন, এই সাঁকো নিয়ে মানুষ দূর্ভোগ পোহাচ্ছে স্বাধীনতার পর থেকে। একটি পাকা সেতু কত প্রয়োজন, সেটা এই অঞ্চলের মানুষের চেয়ে কেউ বেশি বুঝবে না। প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি সবার কাছেই এই এলাকার মানুষ ধর্ণা দিয়েছে, কিন্তু কেউ কার্যকর পদক্ষেপ নেন না। শুধু আশ্বাসই দিয়ে যান।

বারবাকিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবু ছৈয়দ বলেন, সেতু না থাকায় রোগী পার করানো যায় না। ভাঙাচোরা ও কাঁচা সড়ক বেয়ে বারবাকিয়ার ফাঁসিয়াখালী সেতু পার করে চিকিৎসকের কাছে নিতে হয়। কোনো শিশু পানিতে ডুবলে তাৎক্ষনিক হাসপাতালে নেওয়া যায় না। সাঁকো পার করে হাসপাতালে নিতে দুই ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। ততক্ষণে অনেক রোগী ও শিশু মারা যায়।

কক্সবাজার-১(চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সাংসদ জাফর আলম বলেন, বুধামাঝিরঘোনাসহ ছয় গ্রামের বাসিন্দাদের সাঁকো পারাপারে দূর্ভোগের বিষয়টি অবগত হওয়ার পর উপজেলা প্রকৌশলীকে সরেজমিনে দেখে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সব ঠিকঠাক থাকলে দ্রুত সময়ের মধ্যে দূর্ভোগ লাগব থেকে জনগণকে রক্ষা করতে সেতু নির্মাণে প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন