মোবাইল সুবিধা বন্ধের নির্দেশের পরও এখনো রোহিঙ্গাদের হাতে হাতে মোবাইল ফোন রয়েছে। মোবাইল সুবিধা বন্ধের নির্দেশ দেওয়ার সাতদিন পরও কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের হাতে হাতে দেখা মিলছে বিভিন্ন ধরণের মোবাইল ফোন। এমনকি তারা ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইভারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন সুবিধাও ভোগ করছেন। নির্দেশনার পরেও প্রশাসনের তেমন নজরদারি না থাকায় ক্যাম্পগুলোতে মোবাইল ব্যবহারের বন্ধ হচ্ছেনা।
পাশাপাশি প্রযুক্তিগত এসব সুবিধা নিয়ে রোহিঙ্গারা বড় ধরনের অপরাধ কর্মকান্ড ঘটাতে পারে এমন আশঙ্কা স্থানীয়দের। এমনকি গত ২২ আগস্ট রোহিঙ্গাদের না ফিরতে উস্কানি ও ২৫ আগস্ট (রোববার) রোহিঙ্গা ক্যাম্পে লাখো রোহিঙ্গার সমাবেশও মোবাইলের কারণে সম্ভব হয়েছে বলে জানান তারা।
অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের মোবাইল ফোন ব্যবহার বন্ধ করতে গত ২ সেপ্টেম্বর (সোমবার) বিটিআরসির পক্ষ থেকে একটি নির্দেশনা জারি করা হলেও মাঠ পর্যায়ে এখনো প্রভাব লক্ষ্য করা যায়নি। তবে নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
জানা গেছে, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা শিবিরে এখন বসবাস করছেন ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এসব রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর হাতে কী পরিমাণ মোবাইল সিম রয়েছে এর সঠিক তথ্য না থাকলেও, ধারণা করা হয় ৫ থেকে ৬ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের বিভিন্ন অপারেটরের মোবাইল সিম ব্যবহার করছেন।
স্থানীয় ও প্রশাসনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলা ছাড়াও অনেক ব্যবসায়ী বিভিন্ন জেলা থেকে এ ধরনের জালিয়াতির মাধ্যমে নিবন্ধিত সিম সংগ্রহ করে সেগুলো রোহিঙ্গাদের কাছে চড়া দামে বিক্রি করছে বিভিন্ন কোম্পানির এসআর (সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ) নামধারী একাধিক জালিয়াত চক্র। স্থানীয়দের নামে নিবন্ধিত সিম ব্যবহারের মাধ্যমে কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ভয়ঙ্কর অপরাধের সঙ্গে জড়িত। যে কারণে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে।
গত ২২ জুলাই চট্টগ্রাম নগর পুলিশ অভিযান চালিয়ে নগরীর অক্সিজেন এলাকা থেকে বশির হোসেন ইমু (২৩) নামে এক ব্যক্তিকে আটক করে। এ সময় তার কাছ থেকে ৭০টি মোবাইল সিম জব্দ করা হয়। তিনি লাইলা এন্টারপ্রাইজ প্লাস নামের একটি বিপণন কোম্পানির সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ বলে পুলিশকে স্বীকারোক্তি দেয়। আটক ইমু দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মোবাইল গ্রাহকের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও আঙুলের ছাপ নিয়ে বায়োমেট্রিক নিবন্ধন করে সিম অবৈধভাবে কালোবাজারে বিক্রি করে আসছিল।
এর আগে গত ১ জুলাই প্রতারণার অভিযোগে মুক্তার আহম্মদ মুন্না (৩০) নামে এক ব্যক্তিকে চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানা পুলিশ আটক করে। সে একটি মোবাইল অপারেটরের সাবেক কর্মকর্তা। মুন্না দীর্ঘদিন ধরে কম দামে সিম দেওয়ার নামে দরিদ্র লোকজনের এনআইডি ও ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে বেশি দামে কালো বাজারে সিম বিক্রি করে আসছিল বলে পুলিশ সূত্রে জানা যায়।
এদিকে সোমবার ডাক, টেলিযোগাযোগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কোনো প্রকার সিম বিক্রি, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী কর্তৃক সিম ব্যবহার বন্ধ তথা তাদেরকে মোবাইল সুবিধা প্রদান না করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে সব মোবাইল অপারেটরের প্রতি জরুরি নির্দেশ দিয়েছে বিটিআরসি।
অন্যদিকে গত মঙ্গলবার থেকে ক্যাম্পগুলোতে বিকেল ৪টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত থ্রিজি-ফোরজি সেবা বন্ধেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরই প্রেক্ষিতে ফ্রিকোয়েন্সি কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে দেখা যায় কখনো কম ও কখনো স্বাভাবিক নেটওয়ার্ক বিদ্যামান রয়েছে। তবে স্থানীয়রা চরম বিপাকে পড়েছে। কোনো দাপ্তরিক ও অনলাইন সেবাতে বিপর্যয় ঘটছে। তারা ফ্রিকোয়েন্সি না কমিয়ে তাদের মোবাইলগুলো জব্দের দাবি জানিয়েছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রবিউল হাসান জানিয়েছেন, টেকনাফে সব ধরণে সিম বেচাকেনা বন্ধ রয়েছে। রোহিঙ্গারা কোনোমতে মোবাইল ব্যবহার করতে না পেরে সে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।