এনডিসিকে বহনকারী গাড়ির ধাক্কায় খাগড়াছড়ি জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকসহ আহতদের সুচিকিৎসার দাবি

fec-image

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও এনডিসি বাসুদেব কুমার মালোকে বহনকারী গাড়ি জেলা ছাত্রদলের সেক্রেটারিসহ ২ নেতাকে চাপা দিয়েছে। পরবর্তীতে চিকিৎসা করানোর নামে ছলচাতুরীর আশ্রয় নেয়ার ঘটনায় প্রতিবাদ এবং আহতদের সুচিকিৎসার জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি জানিয়েছে জেলা ছাত্রদল। অন্যথায় এই বিষয়ে আইনের আশ্রয় নেয়া হবে। মঙ্গলবার (২০ জুলাই) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জেলা ছাত্রদলের পক্ষে সভাপতি শাহেদুল হোসেন সুমন এ দাবি জানান।

উল্লেখ, গত ১৫ জুলাই জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক জাহেদুল আলম ও যুগ্ম সম্পাদক আবুল কাশেম রাসেল মোটরসাইকেল যোগে আলুটিলা যাচ্ছিলেন। এসময় আলুটিলার দিক থেকে খাগড়াছড়িমুখী জেলা প্রশাসনের গাড়ি নং (ঢাকা মেট্টো গ-১১-৮৮৮৮) ছাত্রনেতাদের বহনকারী মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেয়। এসময় গাড়িতে স্বশরীরে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও এনডিসি বাসুদেব কুমার মালো। গাড়ি চালাচ্ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত ড্রাইভার চাথোয়াই মারমা। আলুটিলা খাস্রাং নামক স্থানে বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৪টায় এই ঘটনাটি ঘটেছে।

গুরুতরভাবে আঘাতপ্রাপ্ত ছাত্রনেতা জাহিদ ও রাসেলসহ ৩ জনকে উদ্ধার করে প্রথমে খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসার এক পর্যায়ে আহতদের হাতের ও পায়ের অপরেশনের জন্যে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

ঘটনার পর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে আহতদের বিষয়ে যোগাযোগ করে এবং এনডিসি ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) একাধিকবার হাসপাতালে এসে চিকিৎসাধীন ছাত্রনেতাদের খোঁজখবর নেন। এসময় দুর্ঘটনার জন্যে দুঃখ প্রকাশ করেন। তারা আহত ছাত্রনেতাদের চিকিৎসার যাবতীয় খরচ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বহন করবে বলে রোগীর আত্মীয়দের ও দলের সিনিয়র নেতাদের আশ্বাস দেন।

ঘটনার পরদিন গিয়ে এনডিসি বাসুদেব কুমার মালো তাদের চিকিৎসার খোঁজ খবর নেন এবং তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে এও বলে যান আহতদের চিকিৎসার যাবতীয় সব খরচ জেলা প্রশাসন বহন করবে। রোগীদের কাছ থেকে যেনো কোনো টাকা-পয়সা বা বিল চাওয়া না হয়, তাও বলে আসেন। কিন্তু পরবর্তীতে জেলা প্রশাসন হাসপাতালে কোনো বিল পরিশোধ না করলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীদের বিল পরিশোধের জন্য চাপ দিতে থাকে। এমতাবস্থায়, দলের সিনিয়র নেতারা জেলা প্রশাসকের সাথে যোগাযোগ করলে তিনিও একই আশ্বাস দিয়ে বলেন, আপনারা কোন চিন্তা করবেন না। আমরা চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয় বহন করবো। সেই অনুযায়ী একই কথা তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে এবং ডাক্তারদেরকেও জানিয়ে দেন।

এখন দুঃখের সাথে বলতে হয়, ঘটনারপর এভাবে আশ্বাস দিয়ে ৫ (পাঁচ) দিন অতিবাহিত হলেও আহতদের চিকিৎসা বাবদ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জেলা প্রশাসন একটি টাকাও জমা দেয়নি। ফলে রোগীদের চিকিৎসা প্রায় থেমে গেলে জেলা বিএনপির প্রতিনিধি দল জেলা প্রশাসকের সাথে গত সোমবার (১৯ জুলাই)  সাক্ষাৎ করেন। এসময় হাসপাতালের বিল পেমেন্টের বিষয় নিয়ে আলোচনা করলে জেলা প্রশাসক বিএনপি নেতাদেরকে অপমান করেন এবং ভোল পাল্টে চিকিৎসাধীন ছাত্রনেতাদের চিকিৎসার খরচ বহন করতে পারবেন না বলে জানিয়ে জেলা প্রশাসক সামান্য কিছু খরচ দিতে পারবেন বলেন। তারা নাকি এর বেশি কিছু করতে পারবে না। অথচ মাত্র চার দিনে হাসপাতালের বিল এসেছে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা। এর বাহিরেও রোগীদের চিকিৎসা চালাতে হবে কমপক্ষে আরো ২ থেকে ৩ মাস।

এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সেই খরচ কে বহন করবে? এই অসহায় দরিদ্র আহত ছাত্রনেতাদের পক্ষে কি এই টানা চিকিৎসা করে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠা সম্ভব? এখানে প্রশ্ন আসে জেলা প্রশাসন যদি তাদের দায় না নেন, তাহলে এতবার হাসপাতালে গিয়ে রোগীদের দেখে আসা এবং সম্পূর্ণ ব্যয় বহন করার আশ্বাসই বা দিলেন কেন?

জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে জেলা ছাত্রদল তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছে। এহেন আচরণের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি। পাশাপাশি আহত ছাত্রনেতাদের সুচিকিৎসার দায়িত্ব নেয়া এবং পরবর্তী চিকিৎসার ক্ষতিপূরণ দাবি জানানো হচ্ছে। অন্যথায় এই বিষয়ে শীঘ্রই সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় এবং আইনগত পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে জানান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন