কক্সবাজারের ক্যাম্প থেকে গোপনে মিয়ানমারে গিয়ে যুদ্ধ করছে বহু রোহিঙ্গা

fec-image

বাংলাদেশের কক্সবাজারে বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একটি অংশ সক্রিয়ভাবে মিয়ানমারে সশস্ত্র লড়াইয়ে যোগ দিচ্ছে। এই বিদ্রোহী তৎপরতা ২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যা থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নতুন সংকটে ফেলেছে।

রয়টার্স জানিয়েছে, ২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যা ও নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীরা এখন মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধে জড়াচ্ছেন। কক্সবাজারের শিবির থেকে ৩,০০০-৫,০০০ বিদ্রোহী মিয়ানমারের জান্তা সরকার, আরাকান আর্মি এবং অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে লড়াইয়ে যুক্ত হয়েছে। অনেক যেমন জান্তা বাহিনীর পক্ষ লড়াইয়ে নামছে তেমনি অনেক লড়াই করছেন জান্তা বাহিনীর বিপক্ষে।

চলতি বছরের জুলাইয়ে ৩২ বছর বয়সী রফিক বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিরির থেকে বেরিয়ে একটি ছোট নৌকায় করে সীমান্ত পেরিয়ে বিদ্রোহে যোগ দিতে মিয়ানমারে প্রবেশ করেন। রফিকের মতো হাজার হাজার রোহিঙ্গা বিদ্রোহী কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির থেকে বেরিয়ে গেছে বিদ্রোহে যোগ দিতে। রফিক বলেন, আমাদের জমি ফিরিয়ে নিতে লড়াই করতে হবে। রফিক বিদ্রোহে যোগ দেয়ার পর পায়ে গুলিবিদ্ধ হন।

বিদ্রোহী কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়া রোহিঙ্গাদের অনেকেই মিয়ানমারের জান্তা সরকার থেকে সামরিক প্রশিক্ষণ, অস্ত্র এবং নাগরিকত্বের প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন। নাগরিকত্ব এবং নিজেদের ভূমি ফিরে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা অনেক রোহিঙ্গাকে এই সংঘাতে যোগ দিতে উদ্বুদ্ধ করছে।

বাংলাদেশের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক শাহাব এনাম খান বলেছেন, কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোতে রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) এবং আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) দুটি বৃহত্তম রোহিঙ্গা জঙ্গি গোষ্ঠীর ব্যাপক সমর্থন রয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। একটি নিরাপত্তা সুত্র জানিয়েছে, রোহিঙ্গা শিবির এবং এর আশেপাশে প্রশিক্ষিত রোহিঙ্গা যোদ্ধা এবং অস্ত্রের উত্থানকে বাংলাদেশ একটি ‘টিকিং টাইম বোমা’ হিসেবে ধরা হচ্ছে।

রয়টার্সের জুনের এইড এজেন্সির ব্রিফিং অনুসারে, মতাদর্শগত, জাতীয়তাবাদী এবং আর্থিক প্রলোভনের সাথে মিথ্যে প্রতিশ্রুতি, হুমকি এবং জবরদস্তি নিয়োগের মাধ্যমে প্রায় ২ হাজার লোককে শরণার্থী শিবির থেকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। নগদ অর্থ সংকটে পড়া বাংলাদেশ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের এই বিষয়টির সাথে পরিচিত একজন ব্যক্তি বলেছেন, বাংলাদেশের কিছু কর্মকর্তা বিশ্বাস করেন যে সশস্ত্র সংগ্রামই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার একমাত্র উপায়। তারা আরও বিশ্বাস করেছিল যে একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে সমর্থন করা ঢাকাকে আরও বেশি প্রভাব ফেলবে।

বাংলাদেশের অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মঞ্জুর কাদের বলেন, বাংলাদেশ সরকারের উচিত রোহিঙ্গাদের তাদের সশস্ত্র সংগ্রামে সমর্থন করা। রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সংগ্রাম মিয়ানমারের জান্তা এবং আরাকান আর্মিকে আলোচনার টেবিলে আনতে বাধ্য করবে এবং প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সহজ করবে।

এদিকে কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে বর্তমানে আন্তর্জাতিক তহবিলও কমতে শুরু করেছে। নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের পরিচালক ওয়েন্ডি ম্যাকক্যান্স বলেন, “আন্তর্জাতিক সহায়তা না থাকলে আগামী দশ বছরের মধ্যে শিবিরগুলোতে গভীর সংকট দেখা দেবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন