parbattanews

কক্সবাজারে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগে চলছে টমটম গ্যারেজ!

অবৈধভাবে প্রতিদিন ৩ হাজারেরও বেশী টমটম চার্জ করা হয়

কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে অবৈধ টমটমের গ্যারেজ। এসব গ্যারেজে টমটমের ব্যাটারি চার্জের জন্য নামমাত্র মিটার ব্যবহার করে অবৈধ সংযোগ দিয়ে গ্যারেজ ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছে কতিপয় গ্যারেজ মালিক। আর এ কারণে শহরে প্রতিনিয়ত বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব গ্যারেজে অবৈধভাবে প্রতিদিন ৩ হাজারেরও বেশী টমটম চার্জ করা হয়। ফলে একদিকে যেমন সরকার হারাচ্ছে হাজার হাজার টাকার রাজস্ব অন্যদিকে অপরিকল্পিত ঝুকিঁপূর্ণ ভাবে চোরাই বিদ্যুৎ ব্যবহার করে গ্যারেজ করায় প্রতিনিয়তই ঘটছে দূর্ঘটনা, দেখা দিয়েছে বিদ্যুৎ ঘাটতি। অভিযোগ রয়েছে বিদ্যুৎ অফিসের কিছু অসাধু কর্মচারীদেরকে ম্যানেজ করেই গ্যারেজ মালিকরা বহাল তবিয়তে এসব ব্যবসা করে যাচ্ছে।

সরেজমিনে শহর ঘুরে দেখা যায়, কক্সবাজার লিংকরোড থেকে শুরু করে বাসটার্মিনাল, আলীরজাহাল, সিটি কলেজ এলাকা, এসএমপাড়া, টেকপাড়া, পেশকারপাড়া, কালুরদোকান, পাহাড়তলী, বৈদ্যঘোনা, ঘোনারপাড়া, কলাতলি, সমিতিপাড়া, বাহারছড়া, মহিলা কলেজের সামনে ও মোহাজের পাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৫০ টি টমটম গ্যারেজে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন লাইন থেকে চোরাইভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। শুধু তাই নয় ওই লাইন গুলোতে ব্যবহার করা হচ্ছে খুবই নিন্মমানের সরঞ্জাম।

এ কারণে যেকোন সময় এ থেকে অগ্নিপাতের সুত্রপাত হয়ে ঘটতে পারে মারাত্মক প্রাণহানি। মাঝে-মাঝে কর্তৃপক্ষের লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করলেও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় নির্ধারিত অসাধু গ্যারেজ ব্যবসায়ীরা। শহরের টেকপাড়ার হাসান নামের এক ব্যক্তি জানান-বর্তমানে বিদ্যুৎ অফিসের কিছু দুর্নীতিবাজদের টাকা দিলে সব সেবা মিলে। এভাবে মানুষের নিত্য বিদ্যুৎ ঘিরে খাচ্ছে টমটম মালিক বা গ্যারেজ। আবার দেখা যায় প্রশাসন অভিযান চালাতে গেলে এই অসাধু ব্যবসায়ীরা খুবই চালাক, মধ্যরাতে সংযোগ দিয়ে ভোর হবার আগেই সংযোগ খুলে ফেলে।

অনুসন্ধ্যানে জানা গেছে-কক্সবাজার শহরে ৫/৬ হাজারের বেশী ব্যাটারী চালিত টমটম চলাচল করে থাকে। এসব টমটমের ব্যাটারি চার্জ দেয়ার জন্য ছোট বড় মিলিয়ে শহরের বিভিন্ন স্থানে ১শ’র বেশী গ্যারেজ স্থাপন করা হয়েছে। যার মধ্যে কিছু বৈধ হলেও অধিকাংশ গ্যারেজ অবৈধ।

এসব গ্যারেজে টমটম চার্জ দেয়ার ফলে অতিরিক্ত চাপ সামলাতে না পেরে বিদ্যুতের লোডশেডিং সৃষ্টি হয়। প্রায় সময়ই দেখা যায় অতিরিক্ত লোডের কারণে মেইন লাইনের তার ছিঁড়ে যায়। এতে করে প্রতিদিনই ২ থেকে ৩ ঘন্টা বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় থাকতে হয় শহরবাসীকে। আর এর জন্য টমটমের ব্যাটারি চার্জকেই দায়ী করছেন শহরবাসী।

টমটম গ্যারেজের মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় ভূক্তভোগী এলাকাবাসী মুখ খুলতেও ভয় পাচ্ছেন। কক্সবাজার পৌরসভা থেকে ২৫০০ হাজার টমটমের অনুমতি দেয়া হলেও বর্তমানে শহরে টমটমের সংখ্যা ৬ হাজারেরও বেশী ছাড়িয়েছে। তবে ২৫০০ হাজার টমটমই কোথায় চার্জ দেয়া হবে তারও নির্ধারিত স্থান নির্ণয় করা হয়নি। এক জরিপে দেখা গেছে-লিংকরোড থেকে শুরু করে ১নং ওয়ার্ড সমিতিপাড়া পর্যন্ত ছোট বড় ব্যাঙের ছাতার মত প্রায় শতাধিক টমটম গ্যারেজ রয়েছে। ওইসব এলাকায় মোবাইল কোর্ট গেলে নিমিষেই গ্যারেজ হয়ে যায় গুদাম ঘর।

এদিকে, একটি মহল সম্প্রতি টমটমের ভাড়া বৃদ্ধির কথা প্রচার করে শহরে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। অপরদিকে পর্যটকদের কাছ থেকে যেনতেনভাবে আদায় করছে ভাড়া। আবার পর্যটন মৌসুমে স্থানীয়দের রিজার্ভ বলে গাড়িতে তুলে না টমটম চালকরা। এ কারণে আগের নিয়মে ভাড়া নেয়া হচ্ছে না। বলতে গেলে এখন ৫ টাকার ভাড়া নেই। ভুক্তভোগী যাত্রীদের অভিযোগ পৌরসভার অনুমোদন নিয়ে টমটম শহরে চলাচলের বৈধতা পেয়েছে। অথচ পৌরসভা ছাড়াই ভাড়া নির্ধারণ করছে কতিপয় সংগঠন ও মালিকরা।

মালিক ও গ্যারেজ ভাড়া বৃদ্ধির কথা বলে টমটম চালকরা যাত্রীদের কাছ থেকে ১০ টাকা করে ভাড়া আদায় করছে। আর এতে লাভবান হচ্ছে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠা কতিপয় গ্যারেজ মালিক। ভাড়ার বৃদ্ধির সুযোগ নিয়ে তারাও তাদের গ্যারেজের ভাড়া ও চার্জের টাকার পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে যাত্রীরা পড়েছেন বিপাকে।

কক্সবাজার পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা খোরশেদ আলম জানান-পৌরসভার পক্ষ থেকে কোন গ্যারেজের অনুমতি নেই। এমনি যে টমটমের লাইসেন্স বা অনুমতি আছে তারা কোথায় চার্জ দেয় কোন গ্যারেজে রাখে সেটা টমটম মালিকরা জানেন।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকৌ: আব্দুল কাদের গনি জানান, কক্সবাজারে কোন বৈধ টমটম গ্যারেজ নেই। বাণিজ্যকভাবে লাইন নিয়ে অনেকে ব্যবসা পরিচালনা করছেন।

তারপরেও আমরা অসাধু লাইন বা মিটার ব্যবহারকারীর বিরুদ্ধে বার বার ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করলেও তারা থামছে না। মূলত এখন পৌরসভার অনুমতি ছাড়া আমরা কোন গ্যারেজের অনুমতি দিচ্ছিনা। পৌর এলাকার বাইরে যেগুলো রয়েছে সেগুলো তদন্ত করে দেয়া হয়েছে। তারপরেও কোন অসাধু কর্মকর্তা বা কোন দালাল চক্র যদি অবৈধ লাইন দিয়ে এসব অপরাধ কর্মকান্ড করে থাকে তাহলে অবশ্যই তাদের বিরোদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Exit mobile version