জেলেদের জালে কক্সবাজারে ১০ টন পাখি মাছ

fec-image

কক্সবাজার উপকূল সংলগ্ন পশ্চিমে গভীর বঙ্গোপসাগরে ইলিশের পর এবার আচমকা জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে বিরল প্রজাতির পাখি মাছ। দীর্ঘদিন সাগরে অনুপস্থিত বা কদাচিৎ দু-একটা ধরা পড়া এই প্রজাতির মাছ ধরা পড়ায় খুশি জেলেরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রোববার এক দিনেই কক্সবাজার ফিশারি ঘাটের পল্টুনে বিভিন্ন ফিশিং ট্রলার থেকে বিক্রির জন্য উঠেছে অন্তত ১০ টন পাখি মাছ। এতের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন ট্রলার মালিক ও শ্রমিকরা।

মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের বাজার ছাড়িয়ে সুস্বাদু এই মাছের বিদেশেও রয়েছে প্রচুর চাহিদা। তবে বিগত প্রায় দু’বছর ধরে করোনা পরিস্থিতির কারণে রপ্তানি অনেকটা বন্ধ থাকায় ন্যায্য মূল্য মিলছে না। জানা গেছে, পাখি মাছ এর বৈজ্ঞানিক নাম “সেইল ফিশ”। গভীর সাগরের দ্রুত প্রজাতির বিরলতম এই সাধারণত বিচরণ করে আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরে। মাছটির পিঠের বিশাল পাখনা দেখতে নৌকার সেইল বা পালের মতো হওয়ায় একে সেইল ফিশ বলা হয়। সেইল ফিশ ১০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। ওজনে ৩০/৪০ কেজি থেকে সর্বোচ্চ ১০০ কেজি পর্যন্ত হতে দেখা গেছে। এরা সাধারণত উষ্ণ জলজ পরিবেশে থাকতে পছন্দ করে এবং দলবদ্ধভাবে খাবার সংগ্রহ করে।

প্রচন্ড দ্রুতগতির এই মাছ উড়ন্ত মাছ, টুনা মাছ, ম্যাকরল ইত্যাদি শিকার করে খায় বলে এক পাখি মাছ বলা হয়ে থাকে। মৎস্য বিশেষজ্ঞদের মতে সেইল ফিশ ঘন্টায় ৬৮ মাইল বা ১০৯.৪ কিলোমিটার বেগে ছুটতে পারে। এটিই হচ্ছে সমুদ্রের সবচেয়ে দ্রুত গতিতে ছুটতে সক্ষম মাছ। রোববার কক্সবাজারের বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফেরিঘাটের পল্টুন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, পল্টনের প্রায় অর্ধেক পাটাতন জুড়ে বিশাল বিশাল আকারের পাখি মাছের স্তূপ।

ফিশিং ট্রলার মালিক ও জেলেদের সাথে আলাপকালে তারা জানান, এই প্রজাতির পাখি মাছ কদাচিৎ সাগরের দু-একটা ধরা পড়লেও গেল কয়েক যুগে ও এভাবে ধরা পড়েনি। এই মাছ গভীর সাগর থেকেও আরো দূরে বসবাস করায় সাধারণত এরা সহজেই জালে ধরা পড়ে না।

সাম্প্রতিক সময়ে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞায় সাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকার কারণে নির্ঝঞ্ঝাট পরিবেশ পাওয়ায় বড় সাইজের ইলিশ সহ এসব মাছ গভীর সাগর থেকে কিনারে চলে আসায় ধরা পড়ছে। কক্সবাজার বিমানবন্দর সড়কের নতুন ফিশারি পাড়ার মৎস্য আমদানি-রপ্তানিকারক ব্যবসায়ী মেসার্স ই,এ, এন্টারপ্রাইজ এর স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ ইসহাক বলেন, ঢাকার হোটেল শেরাটন, সোনারগাঁ রূপসী বাংলা সহ গুলশান-বনানীর চাইনিজ রেস্টুরেন্টগুলোতে সুস্বাদু সেলফিশ বা পাখি মাছের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এছাড়া এ মাস আমরা ইউরোপ আমেরিকাসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে লকডাউন এর কারণে বিদেশে রপ্তানি বন্ধ থাকায় এখন এই মাসের বাজার মূল্য পাচ্ছে না ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে কেনা মাছের এই সালাম গুলো আমরা কক্সবাজারের মেসার্স আলী কোল্ড ষ্টোরেজ, পূর্বালী কোল্ডস্টোরেজ, সাগর এন্টারপ্রাইজ ও এন আলম কোল্ড ষ্টোরেজ নামের ৪টি কোল্ড স্টোরেজে ফ্রিজিং করে জমা রাখবো। আসছে শীত মৌসুমে এ চালানগুলো আমরা ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে রপ্তানি করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।

এসব জমা করা চালান সুষ্ঠুভাবে রপ্তানি করতে পারলে আমরা প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে সক্ষম হবো। কক্সবাজারের নতুন ফিশারি পাড়ার এবং,বি সোহেল রানা নামক ফিশিং ট্রলারের মালিক আমির হোসেন জানান, তার ফিশিং ট্রলারে গত ১৫ দিনে ২৩ টি ও ২৭ টি করে অনুমানিক ২ টন ওজনের পাখি মাছ পেয়েছে। এ মাছ বিক্রি করে তিনি চার লক্ষ টাকা পেয়েছেন।

অপরদিকে নুনিয়াছড়া এলাকার এফবি মায়ের দোয়ার মালিক আব্দুর রহিম সওদাগর ও মাঝি আব্দু শুক্কুর জানান, তাদের ট্রলারে ধরা পড়েছে ৪০টির মত পাখি মাছ। মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের বড় সিন্ডিকেটের ব্যবসায়ী মোঃ ইউনুছ, রিয়াজউদ্দিন, ইসমাইল হোসেন আবু, হাসান, ইব্রাহিম ও রুবেল জানান, তারা গত কয়েকদিনে কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র টাকি মাছের কয়েকটি বড় চালান খরিদ করে জমা রেখেছে। বিদেশে রপ্তানীকারক বায়ার না পাওয়ায় তারা নিজেরাই আমেরিকাসহ ইউরোপের বাজারে প্রেরণের জন্য রপ্তানিকারক খুঁজছেন।

সূত্র: ইনকিলাব

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন