parbattanews

কক্সবাজারে দর্জিদের নির্ঘুম রাত

কক্সবাজার প্রতিনিধি:

রোজা রেখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রোদে ঘুরেছেন। কখনো বা ইফতার করতে হয়েছে দোকানে বসেই। নিজের পছন্দে ঈদে পরার জন্য কাপড় কিনেছেন। সঙ্গে মেচিং করে লেস, বোতাম, পাথরতো আছেই। এরপর যখন বাড়ি ফিরেছেন তখন ইন্টারনেট ঘেটে জামার জন্য ডিজাইন খুঁজে বের করেছেন। আর এভাবেই ছবি হাতে হাজির হয়েছেন দর্জিবাড়িতে। খুব সাবধানে ছবি দেখিয়ে এঁকে নিয়েছেন পোশাকের ডিজাইন। এখন শুধু অপেক্ষার পালা।

ঈদের আগে কেমন ব্যস্ততা দর্জিবাড়িগুলোতে তা জানতেই আসা কক্সবাজার শহরের সী-কুইন মার্কেটের নীচ তলায় অবস্থিত টপটেন-এ। ভেতরে ঢুকতেই দেখা যায় এক কিশোরকে। সে বার বার বলেই চলছে ‘প্লিজ ভাইয়া ভুল করবেন না’।

এতো মিনতির কারণ জিজ্ঞেস করতেই কিশোর বলে, ‘অনেক শখ করে আসছি আপনাদের শো-রুমে, একটি ডিজাইন করা কাপড় নিয়ে সেলাই করব। ঈদের সকালে পরবো। এখন যদি ভাইয়া আপনারা ভুল করেন তাহলে সব শেষ’।

পরে টপটেন’র কারখানায় গিয়ে দেখা গেছে-সেলাই মেশিনের চাকা ঘুরছে অনবরত। কাপড়-সুতার মধ্যে কাটছে দিনরাত। নির্ঘুমভাবে কাটছে রমজানের শেষের দিনগুলো। কাস্টমারদের শখের জামাকে কাঙ্খিত ডিজাইন দিতেই তাদের এই অবিরাম পরিশ্রম। ঈদকে সামনে রেখে এরকমই বিরতিহীন ব্যস্ততায় সময় পার করছেন শহরের দর্জিরা।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ঈদের অর্ডার নেয়া বন্ধ করেছে ১৫ রোজার মধ্যে। তাও আবার নিয়মিত কাস্টমারদের ক্ষেত্রে, নতুনদের জন্য তো ১০ রোজাই ডেডলাইন। এরই মধ্যে জনপ্রতি হাতে ২০০’র বেশি অর্ডার। লোকসংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। তার পরেও যেন হিমশিম খেতে হচ্ছে দর্জিদের। তবে বিশেষ সুপারিশে এখনো অর্ডার নিতে হচ্ছে টপটেন শো-রুমে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ঈদের আনন্দকে রঙিন করে তোলার জন্য নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন কক্সবাজার শহরের দর্জিপাড়ার শ্রমিকরা। রাত-দিন কাজ করে তারা দম ফেলার ফুরসৎ পাচ্ছেন না। শহরের অলিগলি থেকে শুরু করে বিভিন্ন এলাকার দর্জিপাড়ায় ব্যস্ততার কমতি নেই। চাঁদ রাতের আগে সবার হাতে নতুন কাপড় তুলে দিতে তাদের এই ব্যস্ততা।

কক্সবাজার শহরের সী-কুইনে অবস্থিত টপটেনসহ আরও একাধিক দর্জি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে শ্রমিকরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। এসব দোকানে নতুন করে আর কোন অর্ডার নেয়া হচ্ছে না। রমজান মাস শুরুর আগে যে অর্ডার নেয়া হয়েছিল সেই কাজগুলোই তারা চাঁদ রাত পর্যন্ত করবেন বলে দোকান মালিকরা জানিয়েছেন।

সরেজমিনে শহরের অন্যতম কারখানা টপটেন’র কারিগর আবদুর রহমান জানান, রমজান মাসে আমাদের ওপর যে চাপ যায়, সারা বছরে এতো চাপ সামলাতে হয় না। তিনি বলেন, আমরা এখন দিন-রাত কাজ করছি। নিয়মিত শ্রমিকের চেয়ে বাড়তি শ্রমিকও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তার পরেও কাজ করে শেষ করা যাচ্ছে না। ঈদের আগ পর্যন্ত এই ব্যস্ততা থাকবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা এখন মোবাইলে কথা বলার সময় পাই না। ইফতারির পাঁচ মিনিট আগে কাজ শেষ করে ইফতারি করে আবার কাজে লেগে যেতে হয়। অনেকে সারা রাত কাজ করছে।

শহরের পানবাজার রোডের সেঞ্চুরী টেইলার্সের মালিক শহিদুল ইসলাম জানান, ঈদকে সামনে রেখে প্রচুর কাজের অর্ডার আসছে। কিছু অর্ডার আছে যেগুলো ঈদের পরে ডেলিভারি দিতে হবে। তিনি আরও জানান, আমরা একদিকে থান কাপড় বিক্রি করছি। আবার এই কাজগুলো আমাদের কাছে ক্রেতারা দিয়ে যাচ্ছেন। তৈরি করতে পারবো না বলে অনেককে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। কারণ এতো কম সময়ে কাজ করে ডেলিভারি দেয়া সম্ভব না।

পর্যটন শহরের একাধিক কারখানায় দেখা গেছে, সেখানে শত শত শ্রমিক বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাক তৈরিতে ব্যস্ত। শ্রমিকরা জানান, আমরা পালা করে রাত-দিন কাজ করছি। এমনিতে আমাদের সারা বছরই ব্যস্ত থাকতে হয়। কিন্তু এই ঈদের মাসে ব্যস্ততা অনেক বেড়ে যায়। চাঁদ রাত পর্যন্ত এইভাবে চলবে।

টপটেন শো-রুমের মালিক মোহাম্মদ আখতার হোসেন জানান, সারা বছরের চেয়ে এই সময়টা কাজ বেশি থাকে। কারণ এই ঈদে মানুষ বেশি কাপড় তৈরি করে। তবে এবার কাজ-বিক্রি একটু কম হচ্ছে। বিশেষ করে ক্রসফায়ার আতংকে অনেক ক্রেতা সাধারণ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আসছে না। গত বছরের তুলনায় এবছর ব্যবসাও কম হচ্ছে। তারপরেও কাজের চাপ সামলানোর জন্য বাড়তি শ্রমিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অনেক কাজ গ্রহণ করছি না। কারণ কাজ রাখলে সময়মতো ডেলিভারি দিতে পারবো না। পরে ক্রেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো থাকবে না।

তিনি আরও বলেন, ছেলেদের ফরমাল প্যান্ট, শার্ট আবার অনেকে কাপড় কিনে পাঞ্জাবি তৈরি করছে।

এদিকে শহরের থান কাপড়ের দোকানগুলোতে এখনো লক্ষণীয় ক্রেতার আনাগোনা দেখা গেছে। মনে রেখ, পরীস্থান, নিশান, রাঙাবউ, সালাম মার্কেট, নিউ মার্কেট, পৌরসভা মার্কেট, হাজেরা শপিং কমপ্লেক্সসহ আরো কিছু মার্কেটে ক্রেতাদের থান কাপড় কিনতে দেখা গেছে।

থান কাপড়ের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, রমজান শুরুর আগে তাদের বিক্রি অনেক ভালো ছিল। এখন কিছুটা কমে গেছে। তবে নিউমার্কেটের একাধিক ব্যবসায়ীরা জানান, এখনো ক্রেতাদের ভিড়ে মুখরিত তাদের দোকান। বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত ক্রেতাদের চাপ এখনো তাদের সামলাতে হচ্ছে। তারা আশা করছেন ঈদের এক সপ্তাহ আগে পর্যন্ত এই চাপ থাকবে। কারণ এর পরে থান কাপড় কিনে তৈরি করার মতো কোনো জায়গা খোঁজে পাওয়া যাবে না।

Exit mobile version