কক্সবাজারে বনভূমির ৭০০ একর জায়গায় এডমিন একাডেমি নির্মাণ থেকে সরে আসার আহ্বান

fec-image

বন বিভাগের আপত্তি ও সংসদীয় কমিটির সুপারিশ মেনে নিয়ে কক্সবাজারে রক্ষিত বনভূমির ৭০০ একর জায়গায় সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য প্রশিক্ষণ একাডেমি নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছে কক্সবাজারের স্থানীয় ১৩টি পরিবেশবাদী ও সামাজিক সংগঠন। সংগঠনগুলো আশা করে, বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ ধ্বংস করে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ একাডেমি স্থাপনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে ভূমি ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এবং এটাই হবে সংবিধান, দেশের আইন, আদালতের আদেশ, রায় ও সর্বোপরি জনমতকে প্রাধান্য দিয়ে গৃহীত সঠিক সিদ্ধান্ত।

২০ সেপ্টেম্বর (সোমবার) ১৩টি পরিবেশবাদী ও সামাজিক সংগঠনগুলোর পক্ষে গণমাধ্যমে এ বিবৃতি পাঠান ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটির (ইয়েস) প্রধান নির্বাহী ইব্রাহিম খলিল উল্লাহ মামুন।

বিবৃতিতে বলা হয়, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের প্রেক্ষিতে জানাগেছে, কক্সবাজারের ঝিলংজা মৌজার রক্ষিত বন ও প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার ৭০০ একর জায়গায় সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ একাডেমির জন্য জমি বন্দোবস্তের বিরোধীতা করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। সংসদীয় কমিটি একইসাথে এ প্রশিক্ষণ একাডেমি নির্মাণে চূড়ান্ত অনুমোদন না দিতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছে এবং সভায় উপস্থিত পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, উপমন্ত্রীসহ সংসদীয় কমিটির সকল সদস্য এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন। সংবিধান ও প্রচলিত আইনের আলোকে একটি সঠিক ও সাহসী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় সংসদীয় কমিটিকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে ২০ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ আশা করেন, বন বিভাগের আপত্তি ও সংসদীয় কমিটির সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে অন্য কোন স্থানে, পরিমিত পরিমাণ ভূমিতে প্রশিক্ষণ একাডেমি নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে সেটিই হবে সংবিধান, দেশের আইন, আদালতের আদেশ, রায় ও সর্বোপরি জনমতকে প্রাধান্য দিয়ে গৃহীত সঠিক সিদ্ধান্ত।

বিবৃতিদাতারা হলেন, ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটির (ইয়েস) প্রধান নির্বাহী ইব্রাহিম খলিল উল্লাহ মামুন, কক্সবাজার নাগরিক কমিটির সভাপতি এইচ এম নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দল এর কক্সবাজার জেলা সভাপতি এড.আবুহেনা মোস্তফা কামাল, দরিয়া নগর গ্রীণ ভয়েস এর সভাপতি পারভেজ মোশারফ, টিম ইলেভেন কক্সবাজার এর সভাপতি ইরফান, সেভ দ্যা নেচার অব বাংলাদেশ এর কক্সবাজার জেলা সভাপতি ওমর ফয়েজ হৃদয়, ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস কক্সবাজার এর সমন্বয়কারী জিমরান মোঃ সায়েক, টেকপাড়া রাখাইন ছাত্র পরিষদ এর সভাপতি-উথান্ট অং, রাখাইন ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি মং সেন য়াইন, একতা ছাত্র পরিষদ এর সভাপতি ওয়াসিম মাহমুদ অভি, বড় বাজার রাখাইন যুব সংঘের সভাপতি উসেন হেন, রাখাইন একতা সংঘের সভাপতি উসেনমি রাজধানী ফ্রেন্ডস সার্কেল এর সভাপতি এম. এ আজিজ রাসেল।

উল্লেখ্য, ভূমি মন্ত্রণালয়ের ২০১৮ সালের ১২ নভেম্বরের এক চিঠির মাধ্যমে কক্সবাজার জেলার ঝিলংজা মৌজার ৭০০ একর পাহাড়ি বনভূমি খাস ও অকৃষি খাস জমি দেখিয়ে বঙ্গবন্ধু একাডেমি অব পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন প্রতিষ্ঠার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে বন্দোবস্তের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। পরে ভূমি মন্ত্রণালয় এ বছরের ৩ জুন বিএস খতিয়ানের দাগ দুটি দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত প্রদানের কার্যক্রম সম্পাদন পূর্বক মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠাতে জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করে। কিন্তু ভূমি মন্ত্রণালয়ের কোনো চিঠিতেই ইচ্ছাকৃত ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে বন বিভাগের আপত্তির কথা উল্লেখ করা হয়নি। এখানে বনভূমি ও রক্ষিত ছড়া থাকার পাশাপাশি জায়গাটি যে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন ঘোষিত এলাকার অন্তর্ভুক্ত, তা ইচ্ছাকৃতভাবে উল্লেখ করা হয়নি।

অথচ প্রস্তাবিত এলাকায় ১০০ একর সৃজিত বাগান থাকায় এলাকাটি জীববৈচিত্র্যে ভরপুর। এই রক্ষিত বনটিতে দুর্লভ প্রজাতিসহ ৫৮ প্রজাতির বৃক্ষ আছে এবং এলাকাটি এশীয় বন্য হাতি, বানর, বন্য শূকরসহ বিভিন্ন প্রজাতির সাপ ও পাখির আবাসস্থল। যেহেতু প্রস্তাবিত ভূমি বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন, তাই বন বিভাগকে পাশ কাটিয়ে ভূমি মন্ত্রণালয় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে বন্দোবস্ত গ্রহণ করতে পারবে না।

রিট মামলা ৬৩৯/২০১০–এর প্রদত্ত রায় অনুসারে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা হওয়ায় কক্সবাজারের ঝিলংজা মৌজায় সব ধরনের ইজারা প্রদান এবং স্থাপনা নির্মাণ নিষিদ্ধ।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন