parbattanews

কক্সবাজারে সুপেয় পানির সংকটরোধে ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যবহার নিশ্চিতকরণের দাবি

পরিবেশ রক্ষা এবং সুপেয় পানির সংকট মোকাবেলায় কক্সবাজার ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সকল ধরনের প্লাস্টিক ব্যবহার নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন নাগরিক সমাজ। বিশেষ করে উখিয়া-টেকনাফে সুপেয় পানির সংকট মোকাবেলায় ভু-গর্ভস্থ পানির ব্যবহারের উৎস খুঁজে বের করতেও তাঁরা আহবান জানান।

রবিবার (৪ জুন) দুপুরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও সিসিএনএফ এর আয়োজনে এই মানববন্ধন থেকে এ দাবি দেওয়া হয়েছে।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের তলদেশ আজ পলিথিনে ভরপুর। পৌর এলাকায় যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। সারাদেশ যেন আবর্জনার ভাগাড়। সরকার প্লাস্টিক বিরোধী আইন করেছে। কিন্তু আইনের বাস্তবায়ন নাই। পলিথিন কারখানাগুলো অবৈধভাবে উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। এখন থেকে পলিথিন উৎপাদনের জন্য কারখানার অনুমোদন বন্ধ করতে হবে। অবিলম্বে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। সরকারের প্রণীত আইন বাস্তবায়ন করা হোক। বিকল্প সৃষ্টির মাধ্যমে প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। এজন্য সবমহলের সদিচ্ছা থাকা দরকার।

আয়োজিত মানবন্ধনে বক্তব্য রাখেন, বাপা কক্সবাজার জেলা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল কাদের চৌধুরী, কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. মুজিবুল ইসলাম, কোস্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক মোস্তফা কামাল আকন্দ, জেলা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও বাপা সহ-সভাপতি এইচএম এরশাদ, ইপসার প্রজেক্ট ম্যানেজোর মো. হারুন, শিক্ষক এবং বিশিষ্ট লেখক মকবুল আহমেদ, কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমির সভাপতি মুহম্মদ নূরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক কবি রুহুল কাদের বাবুল, অর্নব এর প্রধান নির্বাহী পরিচালক নুরুল আজিম, একলাবের প্রকল্প কর্মকর্তা মো. মুনিরুজ্জামান, সমাজকর্মী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কামাল উদ্দিন রহমান পেয়ারো, দৈনিক রূপালি সৈকতের বার্তা সম্পাদক নেজাম উদ্দিন, উন্নয়ন কর্মী সুরাইয়া নাসরিন, আদিবাসী নারী উন্নয়ন কর্মী মাটিনটিন, স্বপ্নজালের শাকির আলম।

কোস্ট ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক ও সিসিএনএফ এর সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম ও মিজানুর রহমান বাহাদুরের যৌথ সঞ্চালনায় মানববন্ধনে ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, ভূগর্ভস্থ পানির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে না হলে অচিরেই পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি নতুন আরেকটি মানবিক সংকটের মুখোমুখি হতে হবে। তাছাড়া প্লাস্টিক ব্যবহার পরিপূর্ণভাবে বন্ধ করতে হলে অবশ্যই সরকারকে হস্তক্ষেপ করতে হবে।

মো. মুজিবুল ইসলাম বলেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত মহলের উদাসীনতার কারনে প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। ভূপৃষ্ঠস্থ পানি শোধন করে এর সঠিক ব্যবহার করলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ কক্সবাজারের সকল পর্যায়ে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমে আসবে এবং পরিবেশ সুরক্ষিত হবে। তাই সরকার ও সংশ্লিষ্ঠ সকলকে উদ্যোগী হতে হবে। এইচএম এরশাদ বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হলে এ সংকট কোনভাবেই নির্মূল করা সম্ভব নয়। পলিথিন উৎপাদন বন্ধ করতে হলে লাইসেন্স বাতিল করতে হবে এবং নতুন লাইসেন্স দেয়া বন্ধ করতে হবে। মোস্তফা কামাল আকন্দ বলেন, পলিথিন এবং প্লাস্টিক বন্ধে বাংলাদেশ সরকারের যে আইন রয়েছে সেটির কার্যকর বাস্তবায়ন জরুরি। এছাড়া তিনি পরিবেশ সুরক্ষা নিশ্চিতে পরিবেশ সুরক্ষা পুলিশ ফোর্স গঠনের দাবি জানান।

মো. হারুন তার বক্তব্যে বলেন, প্লাস্টিক ব্যবহার শূন্যে নামিয়ে আনার জন্য আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন অব্যাহত রাখতে হবে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ কক্সবাজারে সকল পর্যায়ে প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। পানির যত্রতত্র ব্যবহার বন্ধ করে ভূ-গর্ভস্থ সুপেয় পানির বিকল্প হিসেবে ভুপৃষ্ঠের পানি শোধন করে যেমন সাগর, নদী ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা করা এবং অনতিবিলম্বে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এ ব্যবস্থা চালু করতে হবে। মকবুল আহমেদ বলেন, প্লাস্টিক উৎপাদন এবং বিপণন বন্ধের সঠিক নীতিমালা বাস্তবায়ন করা হোক। প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধের আন্দোলনের সাথে সরকারের যারা আইন প্রণয়নকারী এবং নীতিনির্ধারকদের সম্পৃক্ততা করা জরুরি।

উল্লেখ্য, গত ১ ও ৩ জুন টেকনাফ এবং উখিয়ায় সুপেয় পানির সুষম ব্যবহার এবং প্লাস্টিক ব্যবহাররোধে পৃথক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

Exit mobile version