parbattanews

কক্সবাজার জেলা কারাগারে ধারণ ক্ষমতার ৬ গুণ বেশি বন্দী

ধারণ ক্ষমতার প্রায় ছয় গুণ বন্দী এখন কক্সবাজার জেলা কারাগারে। ৮৩০ আসনে আছে ৪৬০০ জন। তবু সেবা নিয়ে অভিযোগ সেই আগের মতো তেমন শোনা যায় না।

আগে কারাগারে ঢোকামাত্রই বিভিন্ন সেলের ইনচার্জ কর্তৃক আসামি ক্রয় হতো। এখন সে পরিস্থিতি নেই। আগে স্বাভাবিক রান্না করা খাবার মুখে দেওয়া যেত না, তাই অধিকাংশ খাবার ড্রেনে ফেলে দিত বন্দীরা। কিন্তু এখন স্বাভাবিক খাবার যত্ন করেই খাচ্ছে বন্দীরা। আগে দেখেছেন গাঁজা-ইয়াবার আসর বসানো হতো, এখন ধুমপান থাকলেও ইয়াবা-গাঁজার বিকিকিনি নেই। আগে বিত্তশালী বন্দীদের টাকায় পাওয়া সুবিধা দেখে দরিদ্র বন্দীদের দীর্ঘশ্বাস ছাড়ার চিত্রও এখন আর নেই।

সূত্র জানায়, শান্তি-শৃঙ্খলা সৃষ্টি, কারা মনিটরিং, অসুস্থ বন্দীদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা, কারা ক্যান্টিনে ন্যায্যমূল্যের ব্যবস্থা, সার্বক্ষণিক তদারকি, বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ, উন্নতমানের খাবার পরিবেশন, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, সর্বোপরি মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো পৌঁছে দিতে কাজ করছেন কারাগারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

কক্সবাজারের টেকনাফ মাঝিরঘাটার বাসিন্দা মো. জামাল হোসেন প্রকাশ সুলতান। গত ৫ মে কারামুক্ত হন। বের হওয়ার সময় কারাফটকে দেখা হয় তার সঙ্গে। কথাও হয়। কারাগারে কেমন ছিলেন, জানতে চাইলে উত্তর দেন, যতদিন ছিলাম ভালো ছিলাম। কোন সমস্যা হয়নি। ভাল সেবা পেয়েছি। ‘দেখাব আলোর পথ রাখিব নিরাপদ’ এই স্লোগানে প্রায় মিল রয়েছে কক্সবাজার জেলা কারাগারে। ভেতরে বাইরে অনেক পরিবর্তন দেখলাম। বেড়েছে বন্দী সেবার মান।

শুধু কারামুক্ত সুলতান নয়, একই কথা সদ্য কারামুক্ত উখিয়ার ইউপি সদস্য মনজুর আলমসহ অনেকের। তারা কারাগারের ভেতরে বাইরের অবস্থা ও সেবা নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কারাগারে বন্দীদের বিশুদ্ধ পানির সরবরাহে ৮টির মত গভীর নলকূপ আছে। ক্যান্টিনে প্রদর্শিত মূল্য বন্দীরা ক্যান্টিনে খাবার ক্রয় করে। জামিনপ্রাপ্ত বন্দীদের নামের তালিকা ডিজিটাল বোর্ডে প্রদর্শন করা হয়। আটক মায়ের সাথে শিশুদের দৈনিক দুই বেলা দুধ দেওয়া হয়। ছয়গুণ ধারণ ক্ষমতার মাঝেও বন্দিদের সকালের নাস্তা, দুপুর ও রাতের খাবার পরিবেশনে অতিক্রম হয়না। করোনা শেষে বন্দীরা আত্মীয় স্বজনের সাথে কথা বলতে পারায় খুব খুশি। কারাগারে আটক বন্দীরা আত্মীয় স্বজনের সাথে মোবাইলে বিধি মোতাবেক জরুরি প্রয়োজনে কথা বলতে পারে।

কারাগার সূত্র মতে, ৮৩০ জন ধারণ ক্ষমতার স্থলে ৪৬০০ বন্দী আটক থাকলেও তারা কারা কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় খুশি। কারা হাসপালের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও পর্যাপ্ত ওষুধ দেওয়া হয়।

কক্সবাজার জেলা কারাগারের সুপার মো. নেছার আলমের যোগ্য নেতৃত্বে এই কারাগারের মান সারাদেশে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

তিনি জেল সুপার হিসেবে যোগদানের পর থেকে সুন্দরভাবে কারাগার চলছে। বিধি মোতাবেক প্রাপ্য সব সুবিধা বন্দীদের সমানভাবে দেওয়া হচ্ছে।

সূত্রগুলোর মতে, সততায় অবিচল থেকে মডেল কারাগারে রূপান্তর করতে কাজ করে যাচ্ছেন জেল সুপার মো. নেছার আলম।

অতীতে আদালত থেকে জামিননামা কারাগারে পৌঁছলেও নানা টালবাহানায় সেই জামিননামা আটকে রাখা হতো। টাকা না দিলে সেই জামিননামা জমাই পড়ে থাকতো। এখন সেই রেওয়াজে ভিন্নতা পাওয়া গেছে। টাকা ছাড়া কারামুক্ত হন বন্দীরা।

ডেপুটি জেলার মো. মনির হোসেন বলেন, কক্সবাজার সদর হাসপাতালের দুইজন চিকিৎসক কারাগারে নিয়োজিত আছেন। তারা প্রতিদিন কারাবন্দি অসুস্থ রোগীদের দেখেন এবং চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন। কোন বন্দীর উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন হলে সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।

ডেপুটি জেলার আরো বলেন, আমি যোগদানের পর থেকে কারাবন্দিদের প্রত্যক্ষ সেবা প্রদান করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কোন অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে, আমরা সজাগ রয়েছি।

সূত্র মতে, জেল সুপার প্রতিদিন কারাগারের সব ওয়ার্ড পরিদর্শন করেন এবং বন্দী ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কারণে কারো অসুবিধা হচ্ছে না কিনা সে ব্যাপারেও খোঁজ খবর নেন। শুধু তাই নয়, ইয়াবা ব্যবসায়ীরা যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড করতে না পারে সেদিকেও কারারক্ষীদের সচেতন থাকতে নির্দেশনা দেন তিনি।

কারাগার সূত্র জানায়, কারাগারে ৩০০ জনের ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ৬ তলা বিশিষ্ট ভবন উদ্বোধন হয়েছে। এই ভবন উদ্বোধনের পর বন্দীদের দীর্ঘদিনের শোয়ার জায়গার সমস্যা অনেকাংশে কমে গেছে। তাছাড়াও আইসিআরসি কর্তৃক কারাগারের বাইরে ২টি ও ভেতরে ২টি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে জেলা কারাগার খুব ভালো অবস্থানে।

জেল সুপার মো. নেছার আলম বলেন, কারাগার একটি স্পর্শকাতর সরকারি গুরুত্বপুর্ণ প্রতিষ্ঠান। কারাগারে দীর্ঘদিন ধরে আমি কর্মরত আছি। কাঠামো ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য আমার প্রচেষ্টায় কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় কারাগারের উন্নয়নের চিত্র পাল্টে দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। কারাগারের সেবার মান বাড়িয়েছি। মাদকের ব্যাপারে আমরা সজাগ রয়েছি।

তিনি বলেন, এখন কক্সবাজার কারাগারে অনিয়ম-দুর্নীতির কোন প্রশ্নই আসে না। যদি কারাগারের কোন সদস্য অনিয়মের সাথে জড়িত থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Exit mobile version