কক্সবাজার সৈকতে পর্যটকদের উচ্ছ্বাস
দীর্ঘদিন পরে বিধিনিষেধে উন্মুক্ত করে দেওয়ার প্রথম দিনেই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটক এসেছে। আবাসিক হোটেলগুলোতেও প্রাণ ফিরেছে। তবে, বাইরের লোকজনের চেয়ে স্থানীয় লোকজন পদচারণা চোখে পড়ার মতো।
আগামী শনিবার পর্যন্ত টানা তিনদিনের জন্য কক্সবাজারের বেশিরভাগ হোটেলের ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে।
তবে বৃহস্পতিবারে কক্সবাজার সৈকতে কাঙ্ক্ষিত পর্যটকের দেখা মেলেনি। তবে সকালের তুলনায় বিকেলের দিকে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে পর্যটকদের সরব উপস্থিতি দেখাগেছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সমুদ্রসৈকতে গিয়ে দেখা গেছে, এখন পর্যন্ত যে পর্যটকরা এসেছেন তারা যে যার মতো আনন্দ হৈ হুল্লোড়ে ব্যস্ত। সমুদ্র স্নান, বালিয়াড়িতে দৌড়ঝাঁপ, সূর্যাস্ত দেখাসহ আনন্দমুখর সময় পার করছেন তারা। সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট, কলাতলী ও কবিতা চত্বর পয়েন্ট আনুমানিক ১০ থেকে ১২ হাজারের মতো পর্যটকদের উপস্থিতি দেখা গেছে।
কক্সবাজারে ভ্রমণে আসা পর্যটকরা বলছে, করোনা কখনো একেবারে আর শেষ হবেনা। করোনার সঙ্গে লড়াই করে অভ্যস্ত হতে হবে সবাইকে। মন ভালো রাখতে গেলে বিনোদন প্রয়োজন তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে তারা কক্সবাজার ভ্রমণ এসেছে।
এদিকে নিষেধাজ্ঞা শেষে পর্যটন স্পট খুলে দেওয়ায় ব্যবসায়ীরা সন্তুুষ্ট হলেও রয়েছে সংশয়। তাদের মাঝে পরবর্তী লকডাউনের আশঙ্কা বিরাজ করছে। ভয় পাচ্ছেন তারা, যদি আবারও লোকসান গুণতে হয়।
হোটেল সী উত্তরার জেনারেল ম্যানেজার ওসমান রশিদ বলেন, ইতোমধ্যে ৫০ শতাংশ আসনের মধ্যে ৩০ শতাংশ কক্ষ তিনদিনের জন্য বুকিং হয়েছে। হোটেল এর পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি পালন করার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এরপরেও ভয় একটাই, আবার যদি লকডাউনের ঘোষণা আসে।
হোটেলের বীচ হলিডের পরিচালক হাফিজুর রহমান লাভলু বলেন, আগামী তিন দিন হোটেলের কক্ষ আর ভাড়া দেওয়া যাবে না। এর মধ্যে ৫০শতাংশ হোটেলের কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে থেকে কিছু সংখ্যক পর্যটক কক্সবাজার এসে পৌঁছেছে। বাকিরা যথাক্রমে বৃহস্পতিবার ভোরে বা রাতে এসে পৌঁছাবে।
হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউস, কটেজ, রেঁস্তোরা মালিকদের সাতটি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ফেডারেশন অব ট্যুরিজম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, এর মধ্যে প্রায়ই হোটেলের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কক্ষ টানা তিনদিন আগামী শনিবারের পর্যন্ত বুকিং হয়ে গেছে বলে জানতে পেরেছি।
তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কক্সবাজারে পর্যটকরা আসতে শুরু করেছে।দীর্ঘদিন পর হোটেল খোলায় হোটেল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে পর্যটকদের বরণ করে নেয়া হচ্ছে। একই সাথে স্বাস্থ্য বিধি মানার জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘জেলা প্রশাসন ও জেলা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় রেখে ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে পর্যটকদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে সচেতন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কক্সবাজারে পর্যটক আসতে শুরু করেছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা পর্যটন এলাকার সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিতের লক্ষ্যে সার্বক্ষণিক সজাগ রয়েছে।
তিনি বলেন, সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা, কলাতলি, কবিতা চত্তর, ইনানী ও পাটুয়ারটেক-এই ৬টি পয়েন্টে আছে ট্যুরিস্ট পুলিশের শক্তিশালী টিম। জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনায় পৃথক ৩টি মোবাইল টিম কাজ করছে তারা।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পর্যটন স্পট ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কেউ অমান্য করলে শাস্তি পেতে হবে। যদি দেখা যায় যে করোনার সংক্রমণটা আমাদের জন্য আশঙ্কাজনক বা আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না তাহলে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি কিংবা সরকারের নির্দেশনার আলোকে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।