parbattanews

করোনার কারনে ঘরের বাইরে ছিলনা রোহিঙ্গাদের কর্মসূচী

রোহিঙ্গা সংকটের ৩ বছর পূর্ণ হয়েছে আজ ২৫ আগস্ট। করোনার কারনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ছিলনা কোন কর্মসূচী। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাস্ক টাঙিয়ে মাঠে অভিনব কায়দা প্রতিবাদের একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে।

কিন্তু ছবিটির নিচে লিখা আছে ২২ আগস্ট বিকেল ৫টা ৩৯ মিনিট। এনিয়ে ক্যাম্প প্রশাসন এবং গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনের কাছে কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে।

এছাড়াও রোহিঙ্গারা নিজ ঘরে অবস্থান করে দিনব্যাপী দোয়া ও রোযা রেখে সৃষ্টিকর্তার নিকট স্বদেশে ফেরত যাওয়ার প্রার্থনা করেন।

সরেজমিন মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) উখিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে দেখা যায়, ২৫ আগস্ট গণহত্যার ৩ বছরে পূর্ণ হলেও করোনার কারনে চোখে পড়ার মতো রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কোন সংগঠনের পক্ষ থেকে কর্মসূচী পালিত হয়নি। দিনটি উপলক্ষ্যে রোহিঙ্গারা তাদের ব্যবসা প্রতিষ্টান দোকার-পাট, দৈনন্দিন কার্যক্রম বন্ধ রাখেন।

বালুখালী-২ ময়নারখোনা ক্যাম্পের বাসিন্দা রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার নুরুল কবির বলেন, ২৫ আগস্ট উপলক্ষ্যে আমাদের বিশেষ কোন কর্মসুচী ছিলনা। শুরু থেকে আমরা মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার জন্য ৫ দফা দাবি দিয়ে আসছিল।

এগুলো হলো – নাগরিকত্ব দেয়া, নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা, নিজেদের ভিটেবাড়ি ফিরিয়ে দেয়া, ক্ষতিপূরণ দেয়া এবং রোহিঙ্গাদের হত্যা ও নির্যাতনকারীদের আন্তর্জাতিক অদালতে বিচার নিশ্চিত করা।

কিন্তু আমরা (রোহিঙ্গা) সেই দাবির ব্যাপারে কিছুটা নমনীয়। এখন শুধুমাত্র ২ দফা দাবি পুরণ হলেই মিয়ানমারে ফেরত যাবে রোহিঙ্গারা। দারি গুলো হচ্ছে-নিজেদের ভিটেবাড়ি ফিরিয়ে দেয়া এবং নাগরিকত্ব নিশ্চিত করা।

কর্মসূচীর ব্যাপারে কুতুপালং ডি-৫ এর রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার সিরাজুল ইসলাম বলেন, কুতুপালং ক্যাম্প-ওয়ান এবং টু’তে কোন কর্মসূচী পালন করেনি।

তবে শুনতেছি ক্যাম্প ২০ এক্সটেনশনে জন মানব শূণ্য একটি মাঠে মাস্ক টাঙিয়ে অভিনব কায়দায় প্রতিবাদ করেছে। ছবিটির নিচে যে তারিখ উল্লেখ আছে সে বিষয়ে তার জানা নেই।

এই রোহিঙ্গা নেতা আরো বলেন, রোহিঙ্গা হয়তো নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করে দোয়া মাহফিল ও রোযা রেখে ভিন্ন ভাবে কর্মসূচী পালন করতে পারেন।

এসময় কুতুপালং ২ নাম্বার ক্যাম্পের একটি ঝুপড়িতে গিয়ে দেখা যায়, এক বয়োবৃদ্ধ রোহিঙ্গা দম্পতি জুহুরের নামাজ শেষে নিজ দেশে ফেরত যেতে ধর্মীয় আচার-আচারণ মাধ্যমে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করেন।

২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মসূচীর ব্যাপারে জানতে চাইলে কুতুপালং রেজিষ্ট্রার্ড ক্যাম্পের ইনচার্জ খলিলুর রহমান খাঁন বলেন, করোনার কারনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গণজমায়েত, সভা-সমাবেশসহ কোন ধরনের স্বাস্থ্যবিধি বর্হিভূত কর্মসূচী পালন করতে দেওয়া হয়নি।

সার্বক্ষণিক ক্যাম্পে প্রশাসনিক তৎপরতা জোরদার ছিল। নিজ বাসায় অবস্থান করে দোয়া মাহফিল আর রোযা রাখার ব্যাপারে তিনি জানায়, এটি তাদের একান্ত বিষয়, এতে কারো বাধা দেওয়ার সুযোগ নেই।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মাহাবুবুল আলম তালুকদার জানান, সরকারের উদ্দেশ্য হচ্ছে দ্রুত সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গাদের মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন বাস্তবায়ন করা। আর রোহিঙ্গারাও দ্রুত সময়ের মধ্যে যাতে স-সম্মানে মিয়ানমারে ফেরত যেতে পারে সেটির অপেক্ষায় আছেন।

ভাইরাল হওয়া ছবি খোলা মাঠে মাস্ক টাঙিয়ে রোহিঙ্গাদের অভিনব প্রতিবাদের বিষয়ে আরআরআরসি বলেন, সেটি হতে পারে কারণ এতে কোন স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই। আর আমাদেরও দৃষ্টি ছিল যাতে কোন ক্যাম্পে গণজমায়েত না হয়।

উল্লেখ্য যে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনা, বিজিপি, নাটালা বাহিনীর বর্বরতার শিকার হয়ে উখিয়া-টেকনাফে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এসব রোহিঙ্গারা ৩২টি আশ্রয় শিবিরে অবস্থান নিয়ে ৩ বছর ধরে বসবাস করে আসছে।

Exit mobile version