parbattanews

করোনার ছোবলে মানিকছড়ির ‘স্বপ্নের পাঠশালা’র দু’শতাধিক শিক্ষক পরিবারে নিরব কান্না!

অনুন্নত পার্বত্য জনপদ মানিকছড়ির একদল শিক্ষিত যুবক পড়ালেখা শেষে সরকারি কিংবা বেসরকারি চাকরির পিছনে না ঘুরে পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠির মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে নিজস্ব উদ্যোগে এলাকার নানা প্রান্তরে গড়ে তুলছিলেন প্রায় ২৫টি স্কুল-মাদরাসা। আর সেই ‘স্বপ্নের পাঠশালায়’ চাকরী নিয়েছিলেন এলাকার শিক্ষিত দুই শতাধিক যুবক/যুবতী। যাঁরা ধন, সম্পদ ও অট্টালিকার স্বপ্ন না দেখে, শুধু স্বপ্ন দেখেছিলেন জনপদে শিক্ষার আলো বিলিয়ে দেয়ার।

বৈশ্বিক মহামারী আজ ওইসব স্বপ্নদ্রষ্টাদের ভাগ্য কেড়ে নিয়েছে! দীর্ঘ দেড় বছর ‘স্বপ্নের পাঠশালা’ বন্ধ থাকায় দু’শতাধিক কর্মরত শিক্ষক/কর্মচারীর বেতন-ভাতা সম্পূর্ণ বন্ধ! ফলে স্বপ্নদ্রষ্টাদের পরিবার-পরিজনে চলছে আজ নিরবকান্না! যা হয়তো কেউ কানে শোনে না। কিন্তু একজন শিক্ষক যখন ক্ষুধা নিবারণে শ্রমিক কিংবা ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে যাত্রী টানছে !

সরজমিন প্রত্যক্ষকালে ও মানবেতর জীবন যাপনে থাকা শিক্ষক পরিবারে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলা সদর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বঞ্চিত বিভিন্ন গ্রামে প্রতিষ্ঠিত ১৫টি কিন্ডারগার্টেন, ৪টি নিম্ন মাধ্যমিক (ননএমপিও) বিদ্যালয় ও ৫টি মাদরাসায় (ননএমপিও) স্বপ্নের পাঠশালায়’ কর্মরত প্রায় দু’শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারীর জীবন ‘করোনার ভয়াল থাবায় এখন লন্ডভন্ড! টানা দেড় বছর প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কর্মরতরা চাকরী হারিয়ে ক্ষেত-খামার ও মোটরযানে শ্রম বিনিময়ে বেঁচে থাকার শেষ চেষ্টা করছে! আর পরিবার-পরিজনে চলছে মানবেতর জীবন-যাপন! ‘করোনার মহামারীতে ওদের স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার! সব যেন অংকুরেই বিনাশ!

২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনার ছোবল দেখা দিলে ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ হয়ে যায় সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। থমকে যায় তাদের কর্মযজ্ঞ! পরিবার-পরিজন ও ছেলে-মেয়ে নিয়ে পরিকল্পিত সংসারে দেখা দেয় অভাব, অনটন। ফলে উপজেলার দুই শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মচারী একেবারেই বেকারত্ব বরণ করেন! ফলে বেঁচে থাকার শেষ সম্বল হিসেবে কেউ শ্রমিক, কেউ প্রান্তিক কৃষক, কেউ ভাড়ায় চালিত মোটরযানে যাত্রী পরিবহন করে অমানবিক জীবন-যাপন করছেন।

এ প্রসঙ্গে গিরিকলি কিন্ডার গার্টেন এর সহকারী শিক্ষক মো. এমাদুল হক  বলেন, অনেক আশা নিয়ে জনপদে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে অল্প বেতনে আন্তরিকতার সহিত শিক্ষকতা করছিলাম। ভাবছিলাম আমার(শিক্ষকের) আলোতে সমাজ একদিন আলোকিত হলে, জনপদে বেকারত্ব থাকবে না। কিন্তু আজ নিজেই বেকার! পরিবারে ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রীকে বাঁচিয়ে রাখতে এখন শ্রম বিনিময়ে খাদ্যের সন্ধান করছি! মাদরাসার শিক্ষক মো. ফারুক হোসেন বলেন, করোনায় আমাদের সব কেড়ে নিয়েছে। দেড় বছর প্রতিষ্ঠান বন্ধ,বেতন বন্ধ, আমরা (শিক্ষক)খাই কী? কেউই খোঁজ নেয়নি। গত বছর জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ১,০০০ টাকা হারে প্রণোদনা পেয়েছিলাম । এই বছর কিছুই পাইনি!

গাড়ীটানা নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ হুমায়ন কবীর আজকের পত্রিকাকে জানান, বৈশ্বিক মহামারী করোনায় ননএমপিও শিক্ষকদের সব কেড়ে নিয়েছে! ভাবতে অভাগ লাগে পাঠশালার নায়করা আজ রাস্তা ও ক্ষেত-খামারের শ্রমিক! প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ননএমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের বাস্তবতা চিন্তা করলে আমরা এই দুর্বিসহ জীবন থেকে স্বস্তি পেতাম। কালাপানি মাদরাসার সভাপতি ডা.মো. রমজান আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ননএমপিও শিক্ষক/কর্মচারীরা এমনিতেই ৩/৪ হাজার টাকা বেতনে চাকরী করেন। টানা দেড় বছর প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থী থেকে প্রতিষ্ঠানে আয় নেই। ফলে শিক্ষকদের বেতনও নেই।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তামান্না মাহমুদ জানান, বৈশ্বিক মহামারী করোনায় কর্মহীন ননএমপিও প্রায় দেড়শ শিক্ষক-কর্মচারীকে করোনার প্রথম ধাপে জেলা প্রশাসকের বরাদ্দ থেকে গত বছর গড়ে ১ হাজার টাকা হারে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া সংশ্লিষ্ট ইউপি’র মাধ্যমে জনপদে কর্মহীন সকল পরিবারে খাদ্য ও নগদ সহায়তা বিতরণ করা হয়েছে।

Exit mobile version