parbattanews

করোনায় জীবিকা সংকটে বান্দরবানের পর্যটন-পরিবহণ ও শ্রমজীবী মানুষ

করোনা সংক্রমণ সমগ্র দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এর বিস্তৃতির প্রভাব পড়েছে পার্বত্য জেলা বান্দরবানের মানুষের জীবনযাত্রায়। যার কারনে বন্ধ রয়েছে পর্যটন শিল্পের বিভিন্ন সেক্টর। বেকার হয়ে পড়েছে হোটেল-মোটেল, রেস্টুরেন্ট, পরিবহণসহ শ্রমজীবী মানুষ।

এদিকে বান্দরবানে গেল এপ্রিলে প্রথম করোনা শনাক্ত হলেও এখনো জীবনযাত্রায় উন্নতির কোন চিত্র দেখা যাচ্ছেনা। বরং প্রতিদিন বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ‌্যা। যার কারনে গত ২৩ জুন জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভার সিদ্ধান্তক্রমে প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে নতুন ঘোষণা এসেছে।

ওই ঘোষণা অনুযায়ী বান্দরবান ও লামা পৌর এলাকাকে রেড জোন, আলীকদম নাইক্ষ্যংছড়ি হলুদ এবং রোয়াংছড়ি, রুমা, থানছি উপজেলাকে সবুজ জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

জেলায় বর্তমানে আগের চেয়ে বেড়ে গেছে করোনার প্রকোপ। যার কারনে গত দুই সপ্তাহ ধরে নতুন করে রেড জোন ও লকডাউনের কবলে রয়েছে জেলা শহর।

নতুন করে রেড় জোন ঘোষণার পর লকডাউন কঠোরভাবে পালনের সীদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। সে ধারাবাহিকতায় আগামী ২১ দিনের জন্য ঔষধের দোকান ব্যতীত সবধরনের দোকানপাট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মাছ বাজার, কাঁচাবাজার, মুদি দোকান বন্ধ থাকবে।

ভ্রাম্যমাণ ভ্যানগাড়িতে প্রতিটি ওয়ার্ডে শাকসবজি কাঁচামাল বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান বান্দরবান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শামীম হোসাইন।

এদিকে বিভিন্ন উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহামারীর এমন দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য মানুষ প্রস্তত ছিল না। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষগুলোর স্বাভাবিক জীবন যাত্রা স্থিমিত হয়ে পড়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে আয় উপার্জনও।

জেলার নাইক্ষ‌্যংছড়ি উপজেলা সদর ইউনিয়নের বাজার এলাকার পানের দোকানদার আবদুর রহমান জানান, দোকানে হাজার খানেক উপার্জনের টাকায় সংসার চলতো। কিন্তু লকডাউন ও করোনার প্রভাবে কেউ ঘর থেকে তেমন বাইরে আসেনা যার কারনে উপার্জন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। জমানো টাকা শেষ। এখন উপায় খুঁজছেন আগামীর দিনগুলো কিভাবে চালাবেন।

থানচি উপজেলার ক্ষুদ্র ব‌্যবসায়ী শহিদ জানান “পুরো সংসার চলত তার ছোট ব্যবসার ওপর। কিন্তু হঠাৎ করোনার এমন পরিস্থিতি! আগামীতে খাব কি তা নিয়ে এখন ভাবতে হচ্ছে।

এদিকে মরণব‌্যধি করোনার কারণে বান্দরবানের পর্যটন ব‌্যবসায় বড় ধরনের প্রভাব দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। এর প্রভাব অর্থনীতির ওপরও পড়ছে।

জেলা শহর রেড় জোন ও উপজেলায় লকডাউন ও হলুদ, সবুজ জোন চিহ্নিত হওয়ার কারনে মানুষের চলাচল সীমিত রয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে পরিবহণ সেক্টরেও।

সিএনজি চালক নুরুল কবির জানান-লকডাউনের কারনে গাড়ি চলাচল বন্ধ। জীবিকার তাগিদে গাড়ি নিয়ে বের হলেও বিভিন্ন স্থানে জবাবদিহি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রশ্নের সম্মুুখীন হতে হয়। তাই তারমতো অনেকে জীবনের সকল স্বপ্ন ত্যাগকরে একান্ত বেঁচে থাকার কথা চিন্তা করছেন।

স্থানীয়দের মতে বান্দরবানে প্রায় ১৫-২০ হাজার মানুষ পর্যটন ব‌্যবসার ওপর নির্ভরশীল। একাধিক রেস্টুরেন্ট ব‌্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অব‌্যাহত থাকলে গেল পহেলা বৈশাখ, রাজপুণ‌্যা বা সাংগ্রাই উৎসব এবং ঈদুল ফিতরসহ নানা উৎসব পার্বন আয়োজন হতো। এতে পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠতো। ব‌্যবসার সুযোগও ছিল, কিন্তু তা হয়নি।

এসব বাদ দিলেও বর্তমানে তারা আগামীতে টিকে থাকার চিন্তা করছেন।

বান্দরবান হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম জানান, জেলায় ৬০টি হোটেল-মোটেল রয়েছে। পর্যটন এই শিল্পের সাথে জড়িত রয়েছে অন্তত প্রায় ২০ হাজার মানুষ।

হোটেল হিলভিউ আবাসিকের ম্যানেজার তৌহিদ পারভেজ জানান, গত ১৮মার্চ থেকে বান্দরবানে করোনা সংক্রামণের কারনে আবাসিক হোটেল-মোটেল বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। এই কারনে তারা ব‌্যবসায়িকভাবে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।

ট্যুরিস্ট পরিবহণ জীপ-মাইক্রো শ্রমিক কল্যান সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. কামাল জানান- শহরে প্রায় তিনশতাধিক ট্যুরিস্ট গাড়ি রয়েছে। এসব গাড়ি বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা মানবেতর দিনযাপন করছে। তারমতে অবস্থা স্বাভাবিক থাকলে এই মৌসুমে প্রতিটি গাড়ি ৫০-৬০হাজার টাকা আয় করতো।

Exit mobile version