করোনায় পানছড়ির মিরাজ আলীর হতাশা

fec-image

শনিবার (১১জুলাই)বিকেল তখন ঠিক সাড়ে চারটা। পানছড়ি বাজারের প্রধান সড়কের একপাশে মেহগনি গাছের তলায় একখানা পুরনো রিকসার সিটের উপর দু’পা তুলে হেলান দিয়ে চুপচাপ ঘুমিয়ে আছে এক রিকসা চালক।

কাছে গিয়ে জানতে পারি নাম তার মিরাজ আলী। যাত্রীর আশায় আশায় কখন ঘুমিয়ে পড়েছে নিজেও জানেনা।

সামনে এগিয়ে কথা বলে জানা যায়, লকডাউনের পর থেকেই মানবেতর দিন যাপন করছে। কিছু রোজগারের আশায় সাত সকালে পুরনো মরিচা ধরা রিকসা নিয়ে বের হলেও সারাদিনে দুই কেজি: চাউলের পয়সা হয়না। তাই প্রায়ই এভাবে ঘুমিয়ে পড়ে রিকসার উপর।

সে জানায়, বর্তমান সময়ে রিকসার প্যাডেল ঘুরানো আর বেকারত্ব প্রায় একই কথা। গত দু’দিনে মিলে চল্লিশ টাকা ভাড়া মেরেছে। মিরাজ আলীর বর্তমান বয়স ৬৫। প্রায় ত্রিশ বছরের অধিক সময় ধরে রিকসার প্যাডেল ঘুরায়।

উপজেলার মোল্লাপাড়া গ্রামের আবদুল শেখ ও কদর জানের ছেলে মিরাজ আলীর পাঁচ সন্তান। যার মাঝে ৩জন ছেলে ও ২জন মেয়ে। মেয়েদের বিয়ে হয়েছে। বড় দুই ছেলের আলাদা সংসার। কোন খোঁজ খবর রাখেনা তারা। সহধর্মিনী শুক্কুর জান ও ছোট ছেলে হাবিবুলকে নিয়েই নড়বড়ে ঘরে অভাবের সংসার।

ছেলে মাদ্রাসায় পড়ে। স্বামীর আয় রোজগার নাই দেখে স্ত্রী নিজেই জুমে কাজ, লাকড়ি বিক্রিসহ নানান কাজ করে সংসারের চুলো কিছুটা সচল রাখে।

মিরাজ আলীর নাই কোন রেশন কার্ড। বয়স্ক ভাতা পেতে আরো তিন বছর অপেক্ষা করতে হবে। এই বয়সে কাজ করার শক্তিও নেই। যাত্রী থাকলে হয়তো কোন রকম প্যাডেল ঘুরাতো।

তাছাড়া রিকসা মেরামত করতে দেড়-দুই হাজার টাকার প্রয়োজন সেটাও নেই। গায়ের জোর দিয়েই প্যাডেল ঘুরাতে হয়।

এলাকার কয়েক মুরুব্বী জানালেন পানছড়িতে মিরাজ আলী, মুজিবুর, সাইদুল ও কামিনী চাকমা রিকসার প্যাডেল ঘুরাতে ঘুরাতে শেষ বয়সে এসেছে। এই মুহুর্তে তাদের প্রয়োজন বিশ্রাম। তাদের কষ্ট দেখে নিজেদের কাছেও খারাপ লাগে। তাই তাদের পূর্নবাসিত করার জন্য প্রশাসনের নজর দেয়া দরকার।

এ ব্যাপারে পানছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম জানায়, আমি তাদের ব্যাপারে সু-নির্দিষ্টভাবে অবগত না। তাদের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিয়ে ভালো একটা কিছু করা যায় কিনা সে ব্যাপারে আন্তরিকভাবে দেখবো।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস, পানছড়ি, হতাশা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন