করোনায় রাঙামাটির লঞ্চ মালিকেরা দিশেহারা

fec-image

বৈশ্বিক করোনা পুরো পৃথিবীকে স্তব্দ করে দিয়েছে। মূহুর্তের মধ্যে মানুষের প্রাণ যেমন কেড়ে নিচ্ছে তেমনি পৃথিবীর অর্থনৈতিক চাকাও বন্ধ করে দিয়েছে। করোনা থেকে বাঁচতে সকলে স্বেচ্ছায় ঘরবন্দী হয়েছে। তাই ঘরবন্দী থাকায় মানুষের ব্যয় বাড়ছে দিন দিন। কিন্তু আয়ের কোন ব্যবস্থা নেই।

অনেকে নিজের জমানো টাকা খরচ করতে শুরু করেছে। অনেকে আবার ব্যাংকে জমানো শেষ সম্বলও শেষ করে দিয়েছে।

করোনার ক্রান্তিকালেও অনেক মালিক পক্ষ নিজেদের কর্মচারীদের পুরো বেতন দিতে না পারলেও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে অর্ধেক বেতন দিয়ে তাদের ধরে রাখার চেষ্টা করছে। যে কারণে আয়ের সাথে ব্যয়ের হিসেব মিলছে না। এই কারণে মালিক পক্ষকেও হাসঁফাঁস করতে হচ্ছে। তারাও অসহায় হয়ে পড়েছে।

অনেকে ঋণ নিয়ে প্রতিষ্ঠান খুলেছে। আয় না থাকলেও ঋণের টাকা তাদের শোধ করতে হচ্ছে। প্রতিনিয়ত তাদের দুশ্চিন্তা বেড়ে যাচ্ছে। ঘুম হচ্ছে হারাম।

সারাদেশের ন্যায় পাহাড়ি জেলা রাঙামাটির ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন মালিকদেরও একই হালচাল। করোনার প্রাদুভার্ব ঠেকাতে রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের নির্দেশ মেনে লঞ্চ মালিকরা গত ২৫ মার্চ থেকে নৌ-পথের সকল প্রকার যাত্রী পরিবহন বন্ধ ঘোষণা করেছে। বর্তমানে বন্ধের মেয়াদ দেড় মাস পার হতে চলেছে। আর দেড় মাস ধরে নৌ- চলাচল বন্ধ থাকায় লঞ্চ মালিকরা পড়েছে চরম বিপাকে।

তাদের একমাত্র আয়ের পথ হলো লঞ্চে যাত্রী পারাপার করে জীবিকা নির্বাহ করা। এখন সেই জীবিকা নির্বাহের পথ বন্ধ থাকায় দুশ্চিন্তায় তাদের ঘুম কেড়ে নিচ্ছে। একদিকে নিজেদের পারিবারিক খরচ অন্যদিকে কর্মচারীদের মানবিকতার দায়িত্ব থেকে দেখতে হচ্ছে। রয়েছে ব্যাংক ঋণের মতো বড় বোঝা। যে কারণে তারা হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছে।

এছাড়া লঞ্চগুলো বন্ধ থাকায় মেশেনারিজ অনেক পার্টস অকেজো হয়ে পড়ছে। আবার লঞ্চগুলোতে সচল রাখতেও অনেক সময় জ্বালানী খরচ মেঠাতে হচ্ছে। চরম এই দুর্দিনে এই যেন তাদের মাথায় বাজ পড়েছে।

লঞ্চ মালিক মঈন উদ্দীন সেলিম বলেন, শান্তিতে নেই, সুখে নেই। কি করবো কিছুই ভেবে পাচ্ছি না। আজ প্রায় দেড় মাস হতে চললো আমার লঞ্চগুলো বন্ধ রয়েছে। কোন আয়-রোজগার নেই।

তিনি আরও বলেন, লঞ্চগুলো চলাচল বন্ধ থাকলেও লঞ্চগুলোতে স্বচ্ছল রাখতে খরচ করতে হচ্ছে জ্বালানী। এছাড়াও যানগুলো বন্ধ থাকায় মেশেনারিজ অনেক যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে পড়ছে। সেদিকেও খরচ বাড়ছে।

তিনি জানান, আমার ব্যক্তিগত ৯টি জাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে প্রতিটি লঞ্চে প্রায় ৫জন করে শ্রমিক রয়েছে। এদের মধ্যে প্রতি মাসে প্রতি শ্রমিকদের বেতন দিয়ে দিতে হয়। যেমন: চালকের বেতন মাসিক ২৫হাজার টাকা, সারেং এর বেতন ২০হাজার টাকা , মিস্ত্রির বেতন ১৮হাজার টাকা এবং দুই শ্রমিককে জনপ্রতি মাসিক বেতন ১২হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়।

বর্তমানে করোনার এই কঠিন সময়ে তাদের পুরো মাসের বেতন দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। তাই মানবিকতার জায়গা থেকে তাদের কিছু টাকা দিয়ে এইসব শ্রমিকদের দেখভাল করছি।

তিনি আরো জানান, আমি তাদের বের করে দিলে তারা কোথায় যাবে। সারাজীবন তারা আমার কাজ করেছে। চেষ্টা করছি তাদের জন্য কিছু করার। তাদের জন্য ব্যক্তি উদ্যোগে ত্রাণের ব্যবস্থা করেছি। কারণ আমারও সীমবদ্ধতা রয়েছে।

ব্যাংক ঋণ শোধ করতে হয়, পারিবারিক খরচ রয়েছে, দিতে হবে সরকারি কর। সবমিলে চরম দুর্দিনে দিন কাটছে।

এদিকে অন্যান্য লঞ্চ মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রাঙামাটি জেলা শহরের সাথে ৬টি উপজেলার যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হলো নৌ-পথ। এরমধ্যে নানিয়ারচর, বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি, বরকল, লংগদু এবং বাঘাইছড়ি উল্লেখযোগ্য উপজেলা।

এই রুটগুলোতে প্রায় ৫৩টি লঞ্চ চলাচল করে। প্রতিটি লঞ্চে চালক, সারেং এবং মিস্ত্রীসহ ৫-৬জন শ্রমিক নিয়োজিত থাকে।
প্রতিটি লঞ্চ দিনে সকল খরচ বাদ দিয়ে দৈনিক পাঁচ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ছয় হাজার টাকা আয় দেয়। প্রতিটি লঞ্চ মিলে মালিক পক্ষদের দৈনিক আয় হয় প্রায় তিন লাখ টাকা এবং তা মাসে গিয়ে দাঁড়ায় কোটি টাকার কাছাকাছি।

কিন্তু করোনা তাদের আয়ের পথ গ্রাস করেছে বলে জানান। একদিকে কর্মচারীদের দেখভাল করা অন্যদিকে নানান খরচে তারা দিশেহারা হয়েছে বলে মত ব্যক্ত করেছেন।

বাংলাদেশ আভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থা রাঙামাটি অঞ্চলের চেয়ারম্যান মঈনুদ্দীন সেলিম বলেন, আমাদের লঞ্চগুলো দেড়মাস ধরে চলাচল বন্ধ থাকায় আমাদের অবস্থা খুব খারাপ। মালিক পক্ষের অনেকে ব্যাংকের ঋণ নিয়ে লঞ্চগুলো চালাচ্ছে। এখন ঋণের চাপ ঘাড়ে উঠেছে।

এখন যদি করোনা মহামারি বিদায় না নেয় তাহলে আমাদের পথে বসা ছাড়া কোন উপায় দেখছি না। তাদের দুর্দিনে সরকারি উর্ধ্বতন মহলকে নজরধারীর মাধ্যমে প্রণোদনা দেওয়ার জন্য জোর দাবি জানান যাত্রী পরিবহ সংস্থার এই নেতা।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস, রাঙামাটি, লঞ্চ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন