করোনা মহামারীর ‘চূড়ান্ত বিজয়’ ঘোষণা করল চীন

fec-image

করোনার বিরুদ্ধে ‘চূড়ান্ত বিজয়’ ঘোষণা করেছে চীনের ক্ষমতাসীন সরকার। শুক্রবার চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী শাখা পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটি (পিএসসি) এক বিবৃতিতে দেওয়া হয়েছে এই ঘোষণা।

পিএসসির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘করোনা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে আমরা চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করেছি। প্রাণঘাতী এই রোগের ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ধারাবাহিকভাবে যেসব ব্যবস্থা নিয়েছি, সেসবের কার্যকারিতার কারণেই এ বিজয় অর্জন সম্ভব হয়েছে।’

বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল এই দেশটিতেই প্রথম শনাক্ত হয়েছিল প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে বিশ্বের প্রথম করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। করোনায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনাটিও ঘটেছিল চীনে।

করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই এই ভাইরাসটির ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধে দেশজুড়ে দীর্ঘমেয়াদী লকডাউন, কোরেন্টাইন, ভ্রমণ-বিধিনিষেধ, নিয়মিত ব্যাপকমাত্রায় করোনা টেস্ট প্রভৃতি কঠোর বিধি জারি করে চীনের কমিউনিস্ট সরকার। ফলে, মহামারির শুরুর পর আড়াই বছরেরও বেশি সময় বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় করোনায় আক্রান্ত-মৃত্যুর হার অনেক কম ছিল চীনে।

এমনকি ২০২২ সালের শুরুর দিকে বিশ্বের দেশে দেশে যখন করোনার কঠোর সব বিধি শিথিল করা হচ্ছিল, তখনও দৃঢ়ভাবে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখে দেশটির সরকার।

কিন্তু দীর্ঘদিন কঠিন সব বিধির মধ্যে থাকতে থাকতে অতীষ্ঠ চীনের জনগণ গত ২০২২ সালের নভেম্বরের শেষ দিকে ব্যাপক আকারে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু করার পর পরিস্থিতি শান্ত করতে অনেকটা আকস্মিকভাবেই যাবতীয় করোনাবিধি শিথিল করে দেশটির সরকার।

কিন্তু তারপর থেকেই করোনয় সংক্রমণ-মৃত্যুর উল্লম্ফণ শুরু হয় দেশটিতে। জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার হিসেব অনুযায়ী, নভেম্বরের শেষদিকে সরকার সব করোনাবিধি উঠিয়ে নেওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ১৪০ কোটি মানুষ অধ্যুষিত চীনের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন প্রায় ৮০ হাজার মানুষ। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে মৃতের প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি।

অনেক রোগী বাড়িতেই মারা গেছেন, তাছাড়া মৃত্যুর কারণ হিসেবে কোভিডের কথা উল্লেখ করার ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের অনুৎসাহিত করার কারণেও অনেকেই মৃত্যু চীনের সরকারি তালিকায় আসেনি, ভাষ্য তাদের।

তবে সরকার এই অভিযোগ স্বীকার করছে না। শুক্রবারের বিবৃতিতেও করোনায় মোট কতজনের মৃত্যু হয়েছে, সে সম্পর্কিত কোনো সংখ্যার উল্লেখ ছিল না।

তবে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, করোনা মহারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত চীনজুড়ে ২০ কোটিরও বেশি মানুষকে করোনার চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই চীনের বার্ষিক পার্লামেন্টারি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা, সেখানে নীতিনির্ধারকরা তিন বছরের কোভিড বিধিনিষেধের ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার উপায় ও পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করবেন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: করোনা, চীন
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন