কলকাতায় গোপন বৈঠক, মাঠে নামছে আওয়ামী লীগ

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি এখন ভারতে বসে ভার্চুয়াল মিটিং করে দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিচ্ছেন যেন দেশে যেসব নেতারা অবস্থান করছেন তারা যেন, রাজনৈতিক পরিবেশ উত্তপ্ত এবং বিভিন্নভাবে রাজনৈতিক মাঠ দখল করতে পারে সেই নির্দেশনা দিয়েছেন স্বৈরাচার খ্যাত শেখ হাসিনা। এমন তথ্য জানা গেছে কলকাতার গণমাধ্যম এই সময় অনলাইন থেকে।
ছোট ছোট গ্রুপে মিটিং করছেন আপা। মানে শেখ হাসিনা। কলকাতা শহরের মতোই ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছেন আওয়ামি লিগের প্রথম সারির নেতারা। তাঁদেরই দু’জনকে নির্দিষ্ট নির্দেশ দিচ্ছেন দলের সর্বোচ্চ নেত্রী। ভারতেই রয়েছেন তিনি। সিঁড়ি বেয়ে নামার মতো সেই নির্দেশ বিভিন্ন স্তর পেরিয়ে নেমে আসছে একেবারে নীচে। বাংলাদেশের পথে নামছেন আওয়ামির নেতা–কর্মীরা।
কী নির্দেশ আসছে?
এই শহরের আনাচ–কানাচে বেশ কিছু দিন ধরে লুকিয়ে থাকা আওয়ামি–র এক সাংসদের কথায়, ‘আপা বলছেন, মুভমেন্ট করো। রাস্তায় নামো। ইস্যুভিত্তিক আন্দোলন চাই।’ শুধু আওয়ামি নয়, দলের অন্য আরও যে শাখা সংগঠন রয়েছে, সেই ছাত্র লিগ এবং যুব লিগের বহু নেতাকেও ডেকে নেওয়া হয়েছে কলকাতায়।
আপার নির্দেশকে সামনে রেখে তাঁদের নিয়ে শহরের বিভিন্ন গোপন ডেরায় চলছে মুখোমুখি বৈঠক। ইতিমধ্যেই ফল মিলেছে তার। বহুদিন পরে বাংলাদেশের রাস্তায় ছোট ছোট মিছিলে উড়তে শুরু করেছে আওয়ামির পতাকা। শুরু হয়েছে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের মতো সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার।
কোন পদ্ধতিতে, কোন রাস্তায় নির্দেশ যাচ্ছে বাংলাদেশে? কী ভাবে সংগঠিত করা হচ্ছে মানুষদের?
ফোনের ও পার থেকে ভেসে এল, ‘দয়া করে জানতে চাইবেন না। চারপাশে চর ঘুরছে। বাংলাদেশের সেনা গোয়েন্দারাও সক্রিয়। এ সব তথ্য প্রকাশ করে দিলে আমাদেরই ক্ষতি।’
পরিস্থিতি তো এখনও অনুকূল নয়। কীসের ভরসায় নামছেন রাস্তায়? আবার তো নেমে আসবে আক্রমণ।
আওয়ামির নেতার দাবি, ‘ইতিহাস ভুলে যাবেন না। জানের পরোয়া না–করে আমাদের বাপ–দাদারাই মুক্তিযুদ্ধে নেমেছিলেন। ভাষা আন্দোলনে শহিদ হয়েছেন। বাংলাদেশের মাটিতে আন্দোলনের এরকম আরও বহু উদাহরণ রয়েছে। এই তো শুক্রবার জেলায় জেলায় মিছিল হয়েছে। এখন ১০০ লোক নামছেন। তাঁদের দেখে আরও ১০০ নামবেন। এ ভাবে সংখ্যা বাড়াতে হবে। শুক্রবার আওয়ামীর যে নেতা–কর্মীরা মিছিল করেছেন, তাঁদের নামে নাশকতার মামলা রুজু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। তাতে ভয় পেলে চলবে না। রাস্তায় নামতেই হবে।’
যদি প্রাণঘাতী আক্রমণ আসে?
সাংসদ বলছেন, — ‘শুনে রাখুন, সাধারণ মানুষের সমর্থন আসছে। ওপেন নয়, তলায় তলায়। দেশ জুড়ে প্রত্যন্ত এলাকায় ক্ষেপে রয়েছেন বিভিন্ন পেশার মানুষ। কারণ, তাঁদের রুটি–রুজিতে টান পড়ছে। আমাদের দেশের মূল ব্যবসা গারমেন্ট। ব্যবসায়ীরা ভীষণ ক্ষুব্ধ। তা ছাড়াও অন্য ছোট ছোট ব্যবসায়ীরাও রয়েছেন। দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির দিকে মন নেই এই সরকারের। কী ভাবে আমাদের ক্ষতি করা যায় সে দিকেই এদের নজর। এতে তলায় তলায় মানুষের সমর্থন হারাচ্ছে এরা। আর সেটাকেই কাজে লাগানোর সময় এসেছে। এই ইস্যুগুলোই ধরার কথা বলছেন আপা।’
নির্বাচনের কথা ভেবেই কি এই উদ্যোগ?
মানছেন না আওয়ামি নেতা। বলছেন, ‘আমাদের কাছে খবর, আমাদের নেত্রী আপা এবং আমাদের প্রায় সমস্ত উচ্চপদস্থ নেতাদের বিরুদ্ধে মূল যে খুনের মিথ্যে মামলা দায়ের হয়েছে, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক আদালতে তার চার্জশিট জমা পড়তে চলেছে ১৮ ফেব্রুয়ারি। আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। এখন নির্বাচন হলে আমাদের অসুবিধা হবে। কারণ, আওয়ামির যে নেতাদের মানুষ চেনে, যাঁরা দাঁড়ালে ভোট আসত, তাঁরা সব আন্ডারগ্রাউন্ডে। তাঁদের সকলের নামে খুনের মামলা ঝুলছে। অনেকেই ইন্ডিয়ায়। আওয়ামির নামে ভোট হলেও একেবারে আনকোরা নতুনদের প্রার্থী করতে হবে। তার পরিণতি নিয়ে আমরা সন্দিহান। তাই, আপাতত নির্বাচন নয়, আমাদের দাবি থাকবে সমস্ত অবৈধ মামলা প্রত্যাহার, অনৈতিক সরকারের অপসারণ এবং আমাদের নেতা–কর্মীদের হত্যা ও নির্যাতনের বিচার।’
অন্তর্বর্তী সরকার তো বলছে, রাস্তায় নামলে পিটিয়ে আবার ঘরে ঢুকিয়ে দেবে।
সাংসদের দাবি, ‘সেটা মুখে বলা যত সহজ, কাজে করা ততটা নয়। কারণ, চাপে পড়েছেন মুহাম্মদ ইউনূস এবং তাঁর সরকার। ইন্টারন্যশনাল মানিটারি ফান্ড (আইএমএফ) একটা বড় লোন দিচ্ছিল বাংলাদেশকে। তার শেষ কিস্তিটা আসার কথা ছিল ডিসেম্বরে। তার জন্য আইএমএফ–এর সঙ্গে বৈঠক ছিল। আমাদের কাছে খবর, সেই বৈঠক ও কিস্তির টাকা আসা স্থগিত হয়ে গিয়েছে। শুনেছি, ২৩ ফেব্রুয়ারি সেই বৈঠক হওয়ার কথা।’
তাঁর আরও সংযোজন, ডোনাল্ড ট্রাম্প জেতার পরে খেলাটা ঘুরে গিয়েছে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপরে অত্যাচারের সমালোচনা, ক্ষমতায় আসার আগেই শোনা গিয়েছিল তাঁর মুখে। ফলে খেলা আরও ঘুরবে। যার প্রতিচ্ছবি দেখা যাবে বাংলাদেশের রাস্তায়। রাজনৈতিক আন্দোলনে ফিরবেন ছাত্র ও যুবরা।’