parbattanews

‘কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত ও যথাযথ বিচার চাই’

নিজস্ব প্রতিনিধি:

কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলার উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত ও যথাযথ বিচার চাই। অপহরণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। ‘কল্পনা চাকমা অপহরণ দিবস’ উপলক্ষে বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের যৌথ উদ্যোগে ‘কল্পনা চাকমা অপহরণের ২২ বছর: তদন্ত রির্পোট প্রকাশ ও মামলার বর্তমান প্রেক্ষিত’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এই দাবি জানান বক্তারা।

সোমবার (১১ জুন) রাজধানী ঢাকার শাহবাগস্থ জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশনের কো-চেয়ার ও বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল। তিনি বলেন, দেশে যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, কল্পনা চাকমা অপহরণের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের বিলম্বের মাধ্যমে তা স্পষ্ট প্রমাণিত হয়েছে।

কল্পনা চাকমার অপহরণ প্রসঙ্গে সুলতানা কামাল বলেন, ২২ বছর ধরে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। তাকে নিয়ে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছিল রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা কিন্তু তা সত্যে পরিণত হয়নি।

তিনি বলেন, দেশে বিচারহীনতা, আইনের শাসনের অভাব, দায়িত্বের অভাব এবং নিজেদের পার পেয়ে যাওয়ার সংস্কৃতি অব্যাহত রয়েছে। রাষ্ট্র কিছু মানুষকে আইনের বাইরে রেখে দিয়েছে, তাদের প্রতি অপরাধের অভিযোগ উঠলেও পুলিশ তাদের দেখতে পায় না। আমাদের উচিত হলো রাষ্ট্র পরিচালনার সাথে যারা যুক্ত রয়েছেন তাদের নিজ নিজ দায়িত্বগুলো প্রতিনিয়ত স্মরণ করিয়ে দেওয়া।

এসময় উপস্থিত থেকে মানবাধিকারকর্মী ও পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশনের সদস্য খুশী কবীর বলেন, কল্পনা চাকমার অপহরণের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল, তারা ঘটনাকে মিথ্যা বা কাল্পনিক বলে উড়িয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু সে সময় সাংবাদিকরা কল্পনার ডায়েরি উদ্ধার করে এবং পত্রিকায় ধারাবাহিক প্রতিবেদন লেখার মাধ্যমে তার অস্তিত্বকে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়।

তিনি আরও বলেন, কল্পনা চাকমাকে নিয়ে প্রশাসন সব সময় হাস্যকর রিপোর্ট দিয়ে এসেছে। কল্পনা চাকমা অপহরণের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ না হওয়া এবং তার সুষ্ঠু বিচার না হওয়া পর্যন্ত জাতি, ধর্ম, ভাষা, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাখী দাশ পুরকায়স্থ বলেন, কল্পনা চাকমা পাহাড়ী জাতির সংগ্রামের প্রতীক। আগামীতে যে শুনানী হবে সেটিও আবার কালক্ষেপণ হবে বলে তিনি আশংকা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যতদিন বাস্তবায়িত না হবে, ততদিন পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে খুন, গুম, ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনসহ মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, ২২ বছর পেরিয়ে গেলো, অথচ তদন্ত প্রকাশ করতে না পারা ও দোষীদের বিচারের আওতায় না আনা রাষ্ট্রের জন্য চরম ব্যর্থতা।

তিনি আরও বলেন, কল্পনা চাকমার মা অপেক্ষা করতে করতে মারা গেলেন। এছাড়া কল্পনা চাকমা অপহরণের সাথে যাদের নামে অভিযোগ আছে তারা কোথায় আছে তা খুঁজে বের করে সাংবাদিকদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি করার আহবান জানান মি. সঞ্জীব দ্রং।

পিসিজেএসএস এর সদস্য ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক দীপায়ন খীসা বলেন, সরকার আদিবাসীদের সাথে প্রতারনা করেছে। তিনি বলেন, কল্পনা চাকমা অপহরণের সাথে জড়িত এবং মামলার এজাহারভুক্ত আসামীরা গ্রেফতার হননি। বরং তারা বিচার প্রার্থীদের বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়েছেন।

এসময় তিনি বিচারের জন্য শুধু বিলাপ নয়, দ্রোহ তৈরি করতে হবে বলে উল্লেখ করেন।

বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সদস্য সচিব চঞ্চনা চাকমার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি চন্দ্রা ত্রিপুরা। এছাড়াও আলোচনা সভায় বিশিষ্ট লেখক ও সাংবাদিক বিপ্লব রহমান এবং বিভিন্ন অঞ্চলের আদিবাসী নারী অধিকার কর্মী, নারী সংগঠনের প্রতিনিধি, মানবাধিকার কর্মী, আদিবাসী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

Exit mobile version