parbattanews

কাউখালীতে সেচের অভাবে চাষাবাদ থেকে বঞ্চিত ৭০ হেক্টর জমি 

বিল পরিশোধ করার পরও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় কাউখালীর শতাধিক রোরো চাষী সেচের অভাবে চাষাবাদ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের চেয়েও প্রায় এক মাস অতিবাহিত হওয়ায় জালা বীজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মাঠেই। ফলে বোরো মৌসুমে প্রায় ৭০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা কৃষকরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখী হতে চলেছে। কৃষকরা জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগের দাবীকৃত পনের হাজার টাকা না দেয়ায় আবাসিক প্রকৌশলী বিদ্যুৎ সংযোগ দিচ্ছেন না।

সরজমিনে কাউখালী উপজেলার ৪টি ব্লকে ঘুরে এবং কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এ এলাকার প্রায় ৭০ হেক্টর জমিতে শতাধিক কৃষক যুগ যুগ ধরে শুকনো মৌসুমে বোরো চাষ করে আসছে। পাশাপাশি ভুট্টা, ধনিয়া ও মৌসুমী সবজি উৎপাদন করে থাকেন তারা। দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে নিয়মতান্ত্রিকভাবে বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে সংযোগ নিয়ে নিয়মিত বিলও পরিশোধ করে আসছে এসব কৃষকরা। কিন্তু গত এক মাস যাবৎ কাউখালীর বেতবুনিয়া বিদ্যুৎ সরবরাহের নতুন দায়িত্বে আসা আবাসিক প্রকৌশলী অশোক কুমার ঘোষ বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ৪টি ব্লকের কৃষকদের সেচ পাম্পের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রেখেছেন।

এসব জমিতে সেচের দায়িত্বে থাকা স্কিম ম্যানেজার ও কৃষক মো. সোলতান জানান, গত পনের দিন যাবৎ বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে আমরা আবাসিক প্রকৌশলীর দপ্তরে ঘোরোঘুরি করছি। আবাসিক প্রকৌশলী প্রথমে সংযোগ দেয়ার বিষয়ে বিভিন্ন অজুহাত দেখালেও পরে সংযোগ দিতে কৃষকদের কাছে পনের হাজার টাকা দাবি করে। এ টাকা পরিশোধ করলেই কেবল সংযোগ প্রদান করা হবে জানান কৃষক সোলতান। সময় উত্তীর্ণ হওয়া যাওয়ায় এবং কৃষকরা নির্দিষ্ট সময়ে চাষাবাদ করতে না পারায় কৃষকদের সহায়তা করতে বিদ্যুৎ অফিসে ছুটে যান পোয়াপাড়া ব্লকের দায়িত্বে থাকা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা তৈয়ব নূর। কিন্তু আবাসিক প্রকৌশলী তাকেও বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ফিরেয়ে দেন।

এ বিষয়ে আবাসিক প্রকৌশলী অশোক কুমার ঘোষ জানান, পোয়াপাড়া (বি)-৩৯, লোয়ার পোয়াপাড়া (বি)-৩৮, ছোটডলু (বি)-৪৩ ও ছোট ডলু (বি) ১২৬ এ চারটি ব্লকে মোট ৪টি সেচ পাম্প দীর্ঘ সময় চালু ছিলো। প্রতি পাম্প ১ কিলোর কথা বলে ১০-১৫ কিলো পর্যন্ত ব্যবহার করে আসছে কৃষকরা। যা নিয়মবহির্ভূতভাবে ব্যবহার করে আসছিলো। ফলে তাদের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। নিয়মানুসারে প্রতি মিটার যদি ১ কিলো থেকে ১৫ কিলোতে রুপান্তরিত করতে গেলে কৃষকদের খরচ পড়ে ১২ হাজার টাকা। এসব টাকা এককালীন পরিশোধ করা কৃষকদের পক্ষে কোন ক্রমেই সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন কৃষক মো. সোলতান। আর বিষয়ে কোন ছাড় দিতে নারাজ আবাসিক প্রকৌশলীও। ফলে ৭০ হেক্টর জমির বোরো চাষ এবার মারাত্মক হুমকীর মুখে পড়েছে।

কৃষক আব্দুর রশিদ (৬৫) জানান, এনজিও সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে ৩ কানি জমিতে বোরো চাষ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পানির অভাবে তা আর করতে পারছিনা। কিছু জমি চাষাবাদ করলেও পানির অভাবে তা মরে যাচ্ছে। কৃষক লক্ষীধন চাকমা (৫৫) জানান, ২ কানি জমিতে ভুট্টা ও ধনিয়া পাতা চাষ করেছিলাম। পানির অভাবে সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কৃষক আনোয়ার হোসেন (৪২) জানান, ৪ কানি জমিতে বোরো চাষ করতে জালা বীজ রোপন করেছি। পানির অভাবে জমি সেচ দিতে না পারায় জমি খীল পড়ে আছে। তাছাড়া সময় মতো জালা বীজ রোপন করতে না পারায় এবং পানি না থাকায় এসব জালা বীজ লালচে হয়ে মরে যাচ্ছে।

আবাসিক প্রকৌশলীর এমন হটকারী সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা তৈয়ন নূর। তিনি জানান, এ মৌসুমে চাষাবাদ করতে হলে পানির কোন বিকল্প নেই। তিনি জানান, বিদ্যুতের পেছনে ছুটতে গিয়ে কৃষকরা এমনিতে বোরো চাষের উপযুক্ত  সময় নষ্ট করে ফেলেছেন। তার উপর আইনের মারপেচে ফেলে কৃষকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে গেলে ৭০ হেক্টর জমির চাষাবাদ মারাত্মক হুমকীর মুখে পড়বে।

কলমপতি ইউপি চেয়ারম্যান ক্যাজাই মারমা জানান, নির্ধারিত সময়ে চাষাবাদ করতে না পারলে ৭০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা কৃষকরা সর্বশান্ত হয়ে যাবে। এ আবাসিক প্রকৌশলীর আরো নমনীয় হওয়া প্রয়োজন। না হলে ক্ষতির সম্মুখীন হবে রাষ্ট্র ও কৃষকরা।

Exit mobile version