parbattanews

কাউখালীতে ৬ ছাত্রীর ভূতে ধরা নিয়ে তুলকালাম

কাউখালী প্রতিনিধি:

৬ ছাত্রীর একজন একটু হেঁসে উঠলেই বাকিরা খিলখিলিয়ে হেঁসে উঠছে। একজনের কান্নায় অন্যরা বিলাপ করছে। এমনকি একজন মাটিতে শুয়ে হাত-পা ছুড়লে বাকিরাও অবিকল তাই করছে। এ যেন একটি বৈদ্যুতিক বোতামে অনেকগুলো বাতি জ্বলার মতো!

কিন্তু কেন এমনটা হচ্ছে তা বলতে পারছেন না কেউই।

গত তিনদিন ধরে চলা এ ঘটনাটি রাঙামাটির কাউখালী উপজেলা সদর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরের মারমা পল্লী বড়ডলু মৈত্রী শিশু সদনের। চিকিৎসক নয়, চলছে স্থানীয় কবিরাজের মাধ্যমে তন্ত্র-মন্ত্রের কারসাজি। কর্তৃপক্ষের দাবি, ‘তাদের ভূতে ধরেছে’!

ইউএনও জহিরুল হায়াত বলেন, ‘এটা অবিশ্বাস্য। চিকিৎসকের কাছে না আসায় বিষয়টি সন্দেহের উদ্রেক করেছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুইমিপ্রু রোয়াজা বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পাঁচ সদস্যের একটি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। রবিবার ঘটনাস্থলে তদন্ত দল যাবে বলেও জানান তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, ওই ৬ মেয়ে যৌণ নিপীড়ণের শিকার হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে থাকতে পারে। মূলত বিষয়টি প্রকাশ হয়ে যাবার ভয়ে চিকিসাকেন্দ্রে নেয়া হচ্ছেনা।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান চৌধুরী বুধবার (১৮ জুলাই) ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি দেখেছেন। তিনি বলেন, কিছু একটা লুকাতেই হয়তো চিকিৎসকের কাছে আনা হচ্ছেনা।

বৃহস্পতিবার (১৯ জুলাই) সকালে ওই শিশু সদনে গিয়ে দেখা গেছে, মাটিতে গড়াগড়ি করছে ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণীর ৬ শিক্ষার্থী। কবিরাজ ঝাঁড়ফুক করছেন। মাঝে মাঝেই মন্ত্র আওড়িয়ে লাঠি দিয়ে গুঁতোও মারছেন। নিঃশব্দে কিছুটা দূর থেকে কৌতুহলীরা তা দেখছেন।

মানসিক ভারসাম্যহীন ওই শিক্ষার্থীরা শারীরিকভাবে বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছে। এদের দুই হাত ও বাহুতে বেত্রাঘাতের জখম দেখা যাচ্ছে। তবে ঘটনার পূর্বাপর নিয়ে স্থানীয়রা প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলছেন না।

উত্তর-দক্ষিণে ‘এল’ আকৃতির তিন কক্ষের বেড়া ও টিনের চালায় চলছে মৈত্রী শিশু সদন। দক্ষিণে ছাত্ররা ও মাঝেরটিতে প্রধান শিক্ষক থাকেন। আর মাঝের কক্ষের ঠিক পশ্চিম অংশে লম্বা কক্ষে থাকে ১৯ ছাত্রী। সরু গলি দিয়েই তাদের যাতায়াত। তবে পর্যাপ্ত আলো বাতাস না থাকায় কক্ষটি বেশ গুমোট হয়ে আছে। কোন জানালাও নাই।

মিশিচিং মারমা নামে এক ছাত্রীর বাবা মংকালা মারমা (৪৫) বলেন, ‘মেয়েরা খিচুনি দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে। প্রলাপ বকছে। ভান্তেকে (প্রধান শিক্ষক) দেখলেই আঁৎকে উঠছে। চিৎকার করছে। কেঁদে উঠছে’।

শিশু সদনের প্রতিষ্ঠাতা স্থানীয় ইউপি মেম্বার পাইচামং মারমা বলেন, ‘মেয়েদের ভূতে ধরেছে। মৌলভি ও বৈদ্য (কবিরাজ) দিয়ে ঝাঁড়ফুক দিয়ে ভূত তাড়ানোর চিকিৎসা করছি। একটু ভালো হলেই মেয়েদের হাসপাতালে নিয়ে যাবো’।

নিজের ভাইয়ের প্রতিষ্ঠিত শিশু সদনের প্রধান শিক্ষক অংচিনু মারমা। তিনি বলেন, ‘তিনদিন ধরে অবস্থার পরিবর্তন দেখছিনা। আমাকে দেখলেই মেয়েরা ভয় পাচ্ছে। মনে হচ্ছে, মেয়েদের ভূতে ধরেছে। এখন বৈদ্যের চিকিৎসা চলছে। ভীত অনেক শিক্ষার্থীকে এরইমধ্যেই পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। পড়াশোনাও বন্ধ হয়ে গেছে’।

৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী উমেচিং মারমা বলেন, ‘কালো রঙের ভূতে ধরেছে। তিনদিন ধরে পড়াশুনা বন্ধ হয়ে আছে। খাওয়া দাওয়াও ঠিক মতো হচ্ছেনা। সবার মধ্যেই ভয় দেখা দিয়েছে’।

স্থানীয় চিংথোয়াই কার্বারী বলেন, ‘এ ঘটনায় জনমনে ভয় তৈরী হয়েছে। অন্য শিক্ষার্থীরাও ভয়ে আছে’।

দুপুরে এই প্রতিবেদক বিষয়টি জানালে ইউএনও জহিরুল হায়াত অসুস্থ্যদের দ্রুত কাউখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করাতে শিশু সদনটির পরিচালক পাইচামং মারমাকে টেলিফোনে নির্দেশ দেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুইমিপ্রু রোয়াজা বলেন, বুধবার (১৮ জুলাই) বিকেলে অসুস্থ্য দুই মেয়েকে ভুতে ধরার কথা বলে আমার কাছে নিয়ে এসেছিল দুই যুবক। কিন্তু ভর্তির কথা বলায় তারা দ্রুত সটকে পড়ে।

Exit mobile version